loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • শেষ মুহূর্তের গোলে ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

  • আর্সেনালের কাছে পাঁচ গোলে উড়িয়ে গেলো চেল্সি

  • হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

  • বেপজা অর্থনৈতিক জোনে চীনা কোম্পানির ১৯.৯৭ মি. ডলার বিনিয়োগ

  • কাতারের আমিরের ঢাকা ত্যাগ

শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ক্যাচ মিসের মাশুল দিলো টাইগাররা


শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ক্যাচ মিসের মাশুল দিলো টাইগাররা

বাংলাদেশের দেওয়া ১৭২ রান অতিক্রমে খেলতে নেমে এক সময় সাকিব আল হাসানের দুই আঘাতে ৭৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল শ্রীলংকা। এরপর ম্যাচে টিকে থাকার লড়াইয়ে ক্যাচও দেন চারিথ আসালঙ্কা ও ভানুকা রাজাপক্ষে। আসালঙ্কা-রাজাপক্ষের সেই দুই ক্যাচ ফেলে দলকে পরাজয়ের মুখে ঠেলে দিলেন লিটন দাস। শেষ পর্যন্ত পঞ্চম উইকেটে আসালঙ্কা ও রাজাপক্ষের ৫২ বলে ৮৬ রানের দুর্দান্ত জুটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১ এ নিজেদের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের পাঁচ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলংকা।

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার (২৪ অক্টোবর) ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও মুশফিকুর রহিমের দুই হাফ-সেঞ্চুরিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে চার উইকেটে ১৭১ রান করেছিল বাংলাদেশ। নাইম ৬২ ও মুশফিক অপরাজিত ৫৭ রান করেন। জবাবে, আসালঙ্কা-রাজাপক্ষের দুই অর্ধশত রানে সাত বল বাকী রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শ্রীলংকা। আসালঙ্কা অপরাজিত ৮০ ও রাজাপক্ষে ৫৩ রান করেছেন।

এদিন টস জিততে পারেননি টাইগার-দলপতি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এর আগে, বাছাইপর্বের তিন ম্যাচেই টস জিতেছিলেন তিনি। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় শ্রীলংকা। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচের একাদশ থেকে একটি পরিবর্তন এনে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলতে নেমেছিল টাইগাররা। ডান-হাতি পেসার তাসকিন আহমেদের পরিবর্তে প্রথম একাদশে  সুযোগ পান বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।

প্রথমে ব্যাট করার সুবিধাটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও লিটন দাস। শুরুটা সতর্কভাবে করেছিলেন তাঁরা। প্রথম ওভারে না পারলেও দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম পর্যন্ত প্রতিটি ওভারেই একটি করে বাউন্ডারি মেরেছেন নাইম-লিটন।

দুই ওপেনারের দৃঢ়তায় পাঁচ ওভার শেষে ৩৮ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ ওভারে এই জুটি ভাঙেন শ্রীলংকার পেসার লাহিরু কুমারা। উইকেট থেকে সামান্য সরে মিড-অফ দিয়ে বাউন্ডারি আদায়ের চেষ্টা করেন লিটন; কিন্তু শটটা তেমন ভালো না হওয়াতে সেটি তালুবন্দি করেন শ্রীলংকার অধিনায়ক দাসুন শানাকা। লিটন ব্যক্তিগত ১৬ বলে ১৬ এবং দলীয় ৪০ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর ক্রিজে নাইমের সঙ্গী হন সাকিব। সপ্তম ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহে ১৪ রান জমা করেন তাঁরা। সাকিব দু’টি ও নাইম একটি বাউন্ডারি মারেন। দ্রুত রান তুলে উইকেটে সেট হওয়ার পথে ছিলেন সাকিব। তবে সেটি আর সম্ভব হয়নি। অষ্টম ওভারে উইকেট থেকে সড়ে লেগ সাইড দিয়ে ফ্লিক শট খেলতে টাইমিং মিস করেন সাকিব। শ্রীলংকার পেসার চামিকা করুনারত্নের ডেলিভারি উইকেট ভেঙে দিলে ৭ বলে ১০ রান করে আউট হন  সাকিব।

ভালো শুরুর পরেও ১৪ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট পতনে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপ থেকে মুক্ত করতে সাবধানে এগোতে থাকেন নাইম ও চার নম্বরে নামা মুশফিক। পরের ১৭ বলে কোনো বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি পায়নি বাংলাদেশ।

একাদশ ওভারের চতুর্থ বলে শ্রীলংকার স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে ছক্কা মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন মুশফিক। আর এখানেই নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি মুশি। ত্রয়োদশ ওভারের প্রথম বলে শ্রীলংকার বাঁ-হাতি পেসার বিনুরা ফার্নান্দোকে আবারো ছক্কা হাকান তিনি।

মুশফিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রানের গতি ধরে রাখার চেষ্টায় ছিলেন নাইম। চতুর্দশ ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি দিয়ে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। ৪৪ বলে এবারের আসরের দ্বিতীয় ও ২৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থ অর্ধশত করেন নাইম।

১৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় দুই উইকেট ১২৯। ক্রিজে দুই সেট ব্যাটসম্যান থাকায় বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছিল টাইগাররা। কিন্তু ষোড়শ ওভারের প্রথম বলে উইকেট হারায় দল। ফার্নান্দোকে পুল শটে মারতে গিয়ে তাঁকেই ক্যাচ দেন নাইম। ছয়টি চারে ৫২ বলে ৬২ রান করেন নাইম। বাছাইপর্বে ওমানের বিপক্ষে ৬৪ রান করেছিলেন তিনি। মুশফিকের সাথে তৃতীয় উইকেটে ৫১ বলে ৭৩ রান যোগ করেন নাইম; যেখানে নাইম ৩৪ ও মুশফিক ৩৭ রানের অবদান  রাখেন।

নাইমের বিদায়ের ওভারে ১১ রান করেন মুশফিক ও আফিফ হোসেন। ঊনবিংশ ওভারের প্রথম বলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মুশি। ৩২ বলে এসেছে তাঁর কাঙ্ক্ষিত হাফ-সেঞ্চুরি। ১১ ইনিংস পরে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে অর্ধশত রানে পৌঁছান তিনি। ৯৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি মুশফিকের। 

সাত রান করে আফিফ রান আউট হলে, শেষ নয় বলে ২১ রান যোগ করেন মুশফিক ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। এ-সময় মাহমুদুল্লাহ দুইটি ও মুশফিক একটি বাউন্ডারি মারেন। ফলে ২০ ওভারে চার উইকেটে ১৭১ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।

মুশফিক ৩৭ বলে পাঁচটি চার ও দুইটি ছক্কায় অপরাজিত ৫৭ রান করেন। দুইটি চারে পাঁচ বলে অপরাজিত ১০ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। শ্রীলংকার করুনারত্নে-ফার্নান্দো-কুমারা একটি করে উইকেট শিকার করেছেন।

শ্রীলংকাকে ১৭২ রানের টার্গেট দিয়ে বোলিং ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন এবারের বিশ্বকাপে প্রথবারের মতো খেলতে নামা স্পিনার নাসুম আহমেদ। ইনিংসের চতুর্থ বলেই শ্রীলংকার ওপেনার কুশল পেরেরাকে (১) বোল্ড করেন নাসুম।

শুরুতেই উইকেট হারলেও, দলকে চাপে পড়তে দেননি আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আসালঙ্কা। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের উপর চড়াও হন আসালঙ্কা। তাঁর ১৮ বলে ৩৬ রানের সুবাদে পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান পায় শ্রীলংকা। অন্যপ্রান্তে উইকেটে সেটও হয়ে যান নিশাঙ্কা। তাই এই জুটিকে ভাঙতে মরিয়া ছিলো বাংলাদেশ।

নবম ওভারে দ্বিতীয়বারের মতো বোলিং আক্রমণে এসে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন সাকিব। ওভারের প্রথম বলে নিশাঙ্কাকে বোল্ড করেন তিনি। সেই সাথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন সাকিব। ঐ ওভারের চতুর্থ বলে আরও একটি উইকেট পেয়েছেন সাকিব। আভিস্কা ফার্নান্দোকেও দারুণ এক বলে বোল্ড করেন তিনি; খালি হাতে ফেরেন ফার্নান্দো।

সাকিবের জোড়া আঘাতের সাথে উইকেট শিকারের আনন্দে মেতে উঠেন সাইফুদ্দিনও। পাঁচ নম্বরে নামা হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে ছয় রানে থামান সাইফুদ্দিন। ফলে চার উইকেটে ৭৯ রানে পরিণত হয় শ্রীলংকা। ঐ অবস্থায় ১০ ওভারে ৯২ রান প্রয়োজন ছিল লংকানদের।

নতুন ব্যাটার রাজাপক্ষেকে নিয়ে সাবধানে খেলতে থাকেন আসালঙ্কা। এই জুটি ভাঙতে অনিয়মিত বোলার আফিফকে আক্রমণে আনেন মাহমুদুল্লাহ। ত্রয়োদশ ওভারের প্রথম বলেই আফিফকে ছক্কা মারেন রাজাপক্ষে। আর চতুর্থ বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন তিনি, সেই ক্যাচ মিস করেন লিটন; ঐ বলে চার রানও পেয়েছে শ্রীলংকা। এক বল পরে ৩২ বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি অর্জন করেন রাজাপক্ষে। 

ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি পেয়ে মারমুখী হয়ে উঠেন আসালঙ্কা; চতুর্দশ ওভারে মাহমুদুল্লাহকে দু’টি ছক্কা মারেন তিনি। পরের ওভারে জীবন পেয়েছেন আসালঙ্কা। পেসার মুস্তাফিজের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি; সেই ক্যাচটিও ধরতে পারেননি লিটন। তখন ৬৩ রানে দাঁড়িয়ে আসাঙ্কা। এ-অবস্থায় জয়ের জন্য ৩৩ বলে ৪৯ রান দরকার ছিল শ্রীলংকার। 

১৮ রানে জীবন পাওয়া রাজাপক্ষে, ষোড়শ ওভারে সাইফুদ্দিনের বলে দুই ছক্কা ও চারে ২২ রান করে ম্যাচের লাগাম নিয়ে নেন। অষ্টাদশ ওভারে এসে ২৮ বলে ১৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেন রাজাপক্ষে।

আসালঙ্কা-রাজাপক্ষের ব্যাটিং-তাণ্ডবে শেষ দুই ওভারে জিততে নয় রান প্রয়োজন ছিল শ্রীলংকার। ঊনবিংশ ওভারে রাজাপক্ষেকে বোল্ড করেন নাসুম; ফলে, বিচ্ছিন্ন হন লিটনের হাতে জীবন পাওয়া আসালঙ্কা-রাজাপক্ষে জুটি। পঞ্চম উইকেটে ৫২ বলে ৮৬ রান যোগ করে শ্রীলংকার জয়ের পথ সুগম করেন তাঁরা।

রাজাপক্ষের বিদায়ের পরে ঐ ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে শ্রীলংকার জয় নিশ্চিত করেন আসালঙ্কা। ৪৯ বলে পাঁচটি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ৮০ রান করেছেন আসালঙ্কা। ৩১ বলে তিনটি করে চার-ছক্কায় ৫৩ রান করেছেন রাজাপক্ষে। বাংলাদেশের নাসুম-সাকিব দুইটি করে এবং সাইফুদ্দিন একটি উইকেট শিকার করেছেন।

আগামী ২৭ অক্টোবর সুপার টুয়েলভ-এ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

এদিন ম্যাচ-সেরা হয়েছেন শ্রীলংকার চারিথ আসালঙ্কা।

Loading...