loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • কুমিল্লা ইপিজেড-এ চামড়া কারখানা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

  • নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রুপে শ্রীলংকা

  • অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা

  • ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

  • প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনার জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে টাইগারদের অবিস্মরণীয় সিরিজ জয়


দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে টাইগারদের অবিস্মরণীয় সিরিজ জয়

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৭ ওভারে ১৫৪  (মালান ৩৯, মহারাজ ২৮ , প্রিটোরিয়াস ২০; তাসকিন ৫/৩৫, সাকিব ২/২৪, শরিফুল ১/৩৭)
বাংলাদেশ: ২৬.৩ ওভারে ১৫৬/১  (তামিম ৮৭* , লিটন ৪৮; মহারাজ ১/৩৬)
ফলাফল: বাংলাদেশ নয়  উইকেটে জয়ী
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচ ও সিরিজ-সেরা: তাসকিন আহমেদ

এই সফরের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে কোনো সংস্করণেই জেতার অভিজ্ঞতা ছিল না বাংলাদেশের। এই সফরে প্রথম ওয়ানডে জেতার পরে বাকি সিরিজে সেই প্রাপ্তিই হতে পারতো বলার মতো সাফল্য। কিন্তু বাংলাদেশ দল এতেই তুষ্ট থাকেনি। পরভূমে দাপট দেখিয়ে দেশের ক্রিকেটে টাইগাররা এনে দিলো অবিস্মরণীয় সিরিজ জেতার আনন্দ। তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের তৈরি হওয়া মঞ্চে অনায়াসে দারুণ সমাপ্তি টেনেছেন তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সাকিব আল হাসানরা। কঠিন বাধা সরিয়ে প্রোটিয়াদের স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ দল।

বুধবার (২৩ মার্চ) সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্টস পার্কে বাংলাদেশ যেন আবির্ভূত হলো ক্রিকেট পরাশক্তিতে। অন্যদিকে, স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখালো ছোট এক প্রতিপক্ষ! ম্যাচের ছবি অন্তত সেটাই বলছে। সিরিজ-নির্ধারণী ম্যাচ বাংলাদেশ জিতে নিলো নয় উইকেটে। টেম্বা বাভুমাদের ১৫৪ রান ১৪৭ বল আগে পেরিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

এদিন বাংলাদেশের জয়ের বড় নায়ক পেসার তাসকিন। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত বল করেও ছিলেন পার্শ্বনায়ক। এবার ৩৫ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের বিধ্বস্ত করে উঠলেন আরেক চূড়ায়। 

রান তাড়ায়  বলে ৮২ বলে ৮৭ রানের আগ্রাসী ইনিংস এসেছে অধিনায়ক তামিমের ব্যাটে। লিটন দাস করেছেন ৪৮ রান। 

ঘরের বাইরে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আছে ওয়ানডে সিরিজ জেতার সাফল্য। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় প্রতিপক্ষের মতো দলের বিপক্ষে এমন অর্জন নিশ্চতভাবেই থাকবে সবার উপরে।

১৫৫ রান তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার তামিম-লিটন মিলে দারুণ সূচনা করেছেন। দুজনেই থিতু হতে নিয়েছিলেন কিছুটা সময়। তামিম খোলস ছেড়ে বের হন প্রথমে। চোখ ধাঁধানো কিছু বাউন্ডারি আসে তাঁর ব্যাটে। কাগিসো রাবাদাকে এক ওভারেই মেরেছেন চার-চারটি বাউন্ডারি। ৫২ বলে ৫০ স্পর্শ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

আরেক প্রান্তে রানের চাকা সচল দেখে লিটন আগলে রাখেন নিজেকে। তামিমের ফিফটির পরে তিনিও রান সচল করতে থাকেন বাউন্ডারির হার বাড়িয়ে। লক্ষ্যটা হয়ে পড়ে একদম সোজা! তামিম-লিটনের জুটিতে ক্রমশ নেতিয়ে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শরীরী ভাষা। 

লিটন অবশ্য অল্পের জন্য ফিফটি পাননি। কেশব মহারাজের স্পিনে ইনসাইড আউট খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ৪৮ রানে থামেন তিনি। ৫৭ বলের ইনিংসে লিটন মেরেছেন ৮ চার। ১২৭ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর বাকিটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা। তামিমের সঙ্গে মিলে তা সারেন সাকিব। 

সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ম্যাচটা আগে ব্যাট করে বড় পুঁজি গড়ে জিতেছিল বাংলাদেশ। জোহানেসবার্গে গিয়ে অসমান বাউন্সে নাকাল হয়ে হারতে হয়েছিল। ফের সেঞ্চুরিয়ন বাংলাদেশকে দিলো বিশেষ সাফল্য। 

অথচ টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়া স্বাগতিকদের শুরুটা দেয়নি এমন কোনো আভাসই। দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক আর ইয়ানেমান মালান ভালোই শুরু করেছিলেন; রান আসছিল সাবলীল গতিতে। অবশ্য, গতা আরেকটু বাড়াতে গিয়ে প্রথম ভুল করেন ডি কক। লঙ অফ দেখেও মেহেদী হাসান মিরাজকে ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়েছিলেন; ধরা দেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। 

৪৬ রানে দলটি হারায় প্রথম উইকেট। এরপর আর মাত্র ১০৮ রান যোগ হবে তাঁদের – কে জানতো! তাসকিনের দারুণ বোলিংয়ের সঙ্গে স্বাগতিকদের ভুল পরিকল্পনা, অস্থির হয়ে তালগোল পাকানো ম্যাচে রেখেছে ভূমিকা।

তিনে নেমে কাইল ভেরেইনা থিতু হওয়ার দিকে ছিলেন। আরেক প্রান্তে একদম সাবলীল খেলতে থাকা মালানের সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল সম্ভাব্য ছবি। কিন্তু এই ব্যাটার ভুল করেন তাসকিনের বলে। তাসিকনকে পুল করে বাউন্ডারি মারার পর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল আয়েশি ঢঙে টেনে আনেন স্টাম্পে। 

ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটানো তাসকিন খানিক পরে বড় শিকার ধরেন। থিতু থাকা মালান তাঁর বাড়তি বাউন্সের বল খেলতে পারেননি। লাফিয়ে ক্যাচ গ্লাভসে জমান মুশফিকুর রহিম। 

ইনিংস মেরামত করতে পারেননি টেম্বা বাভুমা। সাকিবের আর্ম বল বুঝতে না পেরে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে নিতে পারেননি। এলবিডব্লিউতে শেষ হয় তাঁর ইনিংস। শরিফুলের আচমকা লাফানো বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বিপদজনক রাসি ফন ডার ডাসেন।

৮৩ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়া প্রোটিয়াদের বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। ২৯  বলে তাঁর ২০ রানের ইনিংস শেষ হয়েছে তাসকিনের বলেই। ডেভিড মিলার ছিলেন চিন্তার কারণ। তাসকিনের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। দুই বল পর কাগিসো রাবাদাকেও উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে পাঁচটি শিকার ধরেন তাসকিন। কেশব মহারাজ পরে কিছু রান করে দলকে দেড়শো ছাড়িয়ে নেন। এতে শুধুমাত্র ম্যাচের পরিধিই বেড়েছে। 

তাঁদের পুঁজি যে-একদম যথেষ্ট ছিল না, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন তামিম-লিটনরা। পেশাদারিত্বের মোড়কে দলকে পাইয়ে দেন বড় জয়।

Loading...