loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • শেষ মুহূর্তের গোলে ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

  • আর্সেনালের কাছে পাঁচ গোলে উড়িয়ে গেলো চেল্সি

  • হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

  • বেপজা অর্থনৈতিক জোনে চীনা কোম্পানির ১৯.৯৭ মি. ডলার বিনিয়োগ

  • কাতারের আমিরের ঢাকা ত্যাগ

সারাদেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত


সারাদেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত

যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার (৩ মে) সারাদেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হয়েছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে পালন করছেন তাদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ধর্মপ্রাণ লাখো-কোটি মানুষ এদিন সকালে ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে সামিয়ানার নিচে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সকাল সাড়ে নয়টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদের নামাজে অংশ নেন। তিনি পরিবারের সদস্য ও বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে রাষ্ট্রীয় বাসভবনে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়। রাষ্ট্রপতি পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।

সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ উৎসব আমেজে সেখানে নামাজ আদায় করেন।

ঢাকা-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক তত্বাবধানে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

প্রধান জামাতে নারী ও বিদেশি কূটনীতিকদের নামাজ আদায়ে বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। মুসুল্লিদের জন্য ওযু, খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল।

জাতীয় ঈদগাহে সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানে নেওয়া হয়েছিল তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদগাহে সকল প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের গোটা প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশের আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশীর পর আর্চওয়ে দিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হয়।

প্রধান জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র‌্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন।

করোনা-মহামারি কাটিয়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এবার মসজিদের পাশাপাশি খোলা মাঠেও ঈদ জামাতের আয়োজন করেছিল। ঢাকা উত্তর-সিটি কর্পোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে ৫টি করে মোট মোট ২৭০টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। এখানে এবারও পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাতটায়, এরপর পর্যায়ক্রমে আটটা, নয়টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয় শেষ ঈদ জামাত।

রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা জাতীয় মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নিয়েছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মসজিদের চারপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। মসজিদের প্রবেশ গেটগুলোতে তল্লাশি করে মুসল্লিদের ভেতরে যেতে দেয়া হয়েছে। প্রবেশ গেট গুলোতে বসানো হয় আর্চওয়ে।

দৃশ্যমান টহল ছাড়াও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। এদিকে নামাজ শেষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল আটটায় ঈদের জামাত ও খুতবা শেষে মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ আ. স. ম. ফিরোজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, জাতীয় সংসদের স্পিকারের স্বামী ফার্মাসিউটিক্যাল বিশেষজ্ঞ সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেন, সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে. এম. আব্দুস সালামসহ সংসদ সদস্য এবং সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেন।

এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মিনার দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের জামাত। প্রায় ২২ একর জায়গার গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের এই জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রায় ছয় লাখ মুসল্লি অংশ নেন। নামাজে অংশ নিয়েছেন বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ লাখো মুসল্লি।

করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পরে এবার কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতরের ১৯৫তম জামাত অনুষ্ঠিত হলো। সকাল ১০টায় শুরু হয় ঈদের জামাত। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 

ঈদ উপলক্ষে ৩ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে গেছেন।

পবিত্র এই দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।

ঈদ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থকল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।

ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। এছাড়া, জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদযাপন করেছে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Loading...