রোমানা আহমেদ ও মুর্শিদা খাতুনের ব্যাটে রানের পুঁজিটা খুব বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ; ছিল মাঝারি সংগ্রহ। তবে, বরাবরের মতো বোলাররা ছিলেন এদিনও দুর্দান্ত। অসাধারণ লড়াই করলেও টাইগ্রেসদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি থাইল্যান্ড। ফলে, দারুণ এক জয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ নারী দল।
আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সেমিফাইনাল ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ১১ রানে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে পাঁচ উইকেটে ১১৩ রান করে বাঘিণীরা। জবাবে, নির্ধারিত ২০ ওভার ব্যাট করে ছয় উইকেটে ১০২ রানের বেশি করতে পারেনি থাইল্যান্ড দল।
ম্যাচ জয়ের জন্য শেষ ওভারে ২২ রানের প্রয়োজন ছিল থাইল্যান্ডের। সালমা খাতুনের করা সেই ওভারের প্রথম চার বল থেকে পায় ১০ রান। ফলে, জিততে হলে শেষ দুই বলে দুটি ছক্কার প্রয়োজন ছিল তাঁদের। কিন্তু, পেরে ওঠেননি দারুণ ব্যাটিং করে নাত্থাকান চানথুম। ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান তিনি। শেষ বলে রোসেনান কানোহকেও বোল্ড করে দেন সালমা। ফলে, জয় ধরা দেয় বাঘিনীদের কাছেই।
মধ্যম পুঁজি নিয়ে এদিন বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল বোলারদের দিকে; হতাশ করেননি তাঁরা। শুরু থেকেই দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে জ্যোতির দল। দলীয় সাত রানেই অন্নিচা কামচম্ফুকে ফিরিয়ে ঠাই শিবিরে প্রথম ধাক্কা দেন সালমা খাতুন। তাঁকে ফারজানা হকের ক্যাচে পরিণত করেন এই স্পিনার।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে দলীয় ১৩ রানে আরেক ওপেনার নান্নাপাত কঞ্চারোয়েঙ্কাইকে বোল্ড করেন দেন সানজিদা আক্তার মেঘলা। এর দুই বল পরে নাত্তায়া বুচাথামকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এতে, বড় চাপে পড়ে যায় থাইল্যান্ড।
এরপর অধিনায়ক নারুয়েমল চাইয়াইকে নিয়ে দলের হাল ধরেন নাত্থাকান চানথাম; চতুর্থ উইকেটে ৩২ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। তবে, বাঘিনীদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রানের গতি সে-অর্থে সচল রাখতে পারেননি তাঁরা। এই জুটি ভাঙেন নাহিদা আক্তার। ফেরান থাই অধিনায়ককে।
তবে, এক প্রান্ত আগলে রেখে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন চানথুম। ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সতীর্থদের কাছ থেকে ভালো সমর্থন পেলে হয়তো ভিন্ন হতে পারতো ম্যাচের ফলাফল। ৫১ বলে খেলেন ৬৪ রানের দারুণ এক ইনিংস। চারটি চার ও তিনটি ছক্কায় এই রান করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের পক্ষে ১৮ রানের খরচায় তিন উইকেট শিকার করেন সালমা। সাত রানের বিনিময়ে মেঘলা পেয়েছেন দুই উইকেট।
এর আগে, টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে ব্যাট করতে থাকে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে সাত রান তোলে দলটি। তবে, পরের ওভারেই উইকেট হারাতে হয়েছে। ব্যক্তিগত ১১ রানে ফান্নিতা মায়ার শিকারে পরিণত হন ফারজানা হক।
এরপর আরেক ওপেনার মুর্শিদা খাতুনের সঙ্গে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ১৮ রান যোগ করতেই ভাঙে এই জুটি; রানআউট হয়ে যান মুর্শিদা। পাঁচ বলে দুইটি চারের সাহায্যে ২৬ রানের ইনিংস খেলেন এই ওপেনার। মুর্শিদার বিদায়ের পর মাঠে নামেন রুমানা আহমেদ।
দারুণ ছন্দে থাকা অধিনায়ক জ্যোতি অবশ্য এদিন খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দলীয় ৬৪ রানে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন। ২৪ বলে দুইটি চারে করেন ১৭ রান। আগ্রাসী ব্যাটার হিসেবে পরিচিত সোবহানা মুস্তারিও তেমন কিছুই করতে পারেননি; ছয় রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে।
যাহোক, বাংলাদেশের স্কোর শতরান পার করতে দারুণ ভূমিকা রাখেন রোমানা। তিনি অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংস খেলেছেন। ২৪ বলে দুইটি চার ও একটি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি। তাঁকে দারুণ সাহায্য করেছেন রিতু মনি। রিতু ১০ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ১৭ রানের ইনিংস খেলেছেন।
রোববার বাছাইপর্বের ফাইনালে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে জ্যোতিবাহিনী। টাইগ্রেসদের সঙ্গে মূলপর্বে উঠেছে আয়ারল্যান্ডও।
