loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • কুমিল্লা ইপিজেড-এ চামড়া কারখানা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

  • নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রুপে শ্রীলংকা

  • অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা

  • ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

  • প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনার জয়

বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী


বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী দিক বিবেচনা করে, কোন ঝুঁকির মধ্যে নেই। আমি আপনাদের সকলকে নিশ্চিত করতে পারি যে – উদ্বেগের কিছু নেই।’

যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সদ্য সমাপ্ত রাষ্ট্রীয় সফর সম্পর্কে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এই আশ্বাস দেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

সরকার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের যেকোনো ধরনের দুর্ভোগ কমাতে তাঁরা বিষয়টিতে মনোযোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘চিন্তার কোনো বিষয় নেই। আমরা সবাই যদি মনে করি – এটা আমাদের দেশ এবং আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে যেভাবে স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিচালনা করছে সেখানে কোনাে ‘রিস্ক’ নেই। তাছাড়া, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কেননা ’৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় মাত্র ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন বিদ্যুৎ ছিল ১৩শ’ মেগাওয়াট, খাদ্য ঘাটতি ছিল ৪০ লাখ মেট্রিক টন। আর সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪৫ ভাগ।

তিনি বলেন, ‘যেকোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কোনো রিস্ক নেই – এটুকু আমি কথা দিতে পারি।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা না দেওয়ায় দেশি-বেদেশি ষড়যন্ত্রে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি সত্য, কিন্তু তা করলে আজকে কিছুটা লোড শেডিং দিয়েও বিদ্যুৎ সঞ্চালনা যেভাবে অব্যাহত রাখতে পারছেন – তা সম্ভব হতো না, দেশ অন্ধকারেই নিমজ্জিত হতো।

তিনি বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতির যে-টার্গেট আমরা নির্দিষ্ট করেছি – তা আমরা অর্জন করতে সমর্থ হবো; সে-বিষয়টি আমি সবাইকেই আশ্বস্ত করতে চাই। এরপর যদি কোনো মহাদুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলেতো সারাবিশ্বেই সমস্যা হবে, তা নিয়েতো বেশি কিছু বলার নেই। তবে, আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী আছে – এটুকু আশ্বাস আমি দিতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাজেটের দিক থেকেও কোন সমস্যা নেই। আর যেসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করলে রিটার্ন পাওয়া যায়, সে-ধরনের প্রকল্পগুলোই আগে বাস্তবায়ন করছি। আর প্রকল্প গ্রহণের সময় যেসব প্রকল্প দেশের জন্য লাভজনক হবে, সে-ধরনের প্রকল্পই আমরা নিচ্ছি। 

তাঁর সরকার বেসরকারি খাকে উন্মুক্ত করেছে, সেখানেও বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ-বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এবং জনগণকেও তিনি সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

এ-সময় দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা-মিডিয়ার ঢালাও সমালোচনার বিরুদ্ধে তিনি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা যতই ভালো করি, তাঁদের চোখে কোনোদিন ভালো লাগে না; তাঁরা যেন এক ধরনের পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। তবে, আমাদের কাজে জনগণ কতটুকু লাভবান হলো – আমরা সেদিকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দেই।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহাসানুল করিম।

প্রধানমন্ত্রী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ১৮ দিনের  রাষ্ট্রীয় সফর শেষ ৪ অক্টোবর দেশে ফেরেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন বিষয়টা রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত, কে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, কে করবে না। এখানে আমরা তো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে। হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই চাই যে, সব দল অংশগ্রহণ করুক।

তিনি বলেন, আমরা চাই সব দল আসুক, ইলেকশন করুক। কার কোথায় কতটুকু যোগ্যতা আছে। অন্তত আওয়ামী লীগ কখনো ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবে না, আসেও নাই। আওয়ামী লীগ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাজ করে, জনগণের মন জয় করে, জনগণের ভোট নিয়েই কিন্তু আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ কখনো কোনো মিলিটারি ডিরেক্টরের পকেট থেকে বের হয়নি। কারো ক্ষমতা দখল করেও কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ভোটের মাধ্যমেই এসেছে, নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন বলে জানান এবং বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করেন।

১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি বলে যে আমাকে চায় না, আমি কোনোদিনও থাকবো না। এটা যেদিন থেকে আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল, তখন থেকে এই শর্তটা মেনে যাচ্ছি। এটা ঠিক, দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। অবশ্যই আমি চাই – নতুন নেতৃত্ব আসুক।

তিনি বলেন, ক্ষমতায় আমরা একটানা ছিলাম বলে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমার লক্ষ্য ছিল – ২০২০ সালের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সালের দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন, যেটা পেয়েছি। এখন বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে এবং উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে।

তিনি সকলকে প্রতি ইঞ্চি জমি ব্যবহার করে কিছু না কিছু উৎপাদনের জন্য অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, “কারণ অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি হয়েছে, আমি জাতিসংঘে গিয়েছিলাম যেখানে আমি অনেক বিশ্ব নেতার সাথে আলোচনা করেছি। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। সকলেই খুব উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত যে, ২০২৩ সালে একটি গুরুতর দুর্ভিক্ষ হতে পারে যখন অর্থনৈতিক মন্দা আরও গভীর হবে।”

এ-বিষয়ে এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মানুষ আছে, আমাদের খুব উর্বর জমি আছে, কোনো জমি অনাবাদি রেখে দেবেন না, যা পারেন তা উৎপাদন করুন এবং বিদ্যুৎ ও পানি সহ সবকিছু ব্যবহারে কঠোরতা বজায় রাখুন। আমাদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে বিচক্ষণতার সাথে কাজ করতে হবে।”

Loading...