loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

মেইড ইন বাংলাদেশ সপ্তাহ-২০২২ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী


মেইড ইন বাংলাদেশ সপ্তাহ-২০২২ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মেইড ইন বাংলাদেশ সপ্তাহ ২০২২’ এর উদ্বোধন করেছেন। এর লক্ষ্য হচ্ছে দেশের পোশাক খাতের সক্ষমতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা। সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানটি রোববার (১৩ নভেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘কেয়ার ফর ফ্যাশন’ থিমসহ উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এর প্রচার করাই এই ইভেন্টের মূল উদ্দেশ্য। কারণ বিজিএমইএ তার মার্কেট শেয়ার ধরে রাখতে এবং বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের মার্কেট শেয়ার বাড়াতে চায়। সপ্তাহব্যাপী এই মেগা ইভেন্ট গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের অংশীদারদের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি করবে।

জমকালো উদ্বোধনের পরে, কার্নিভাল হলে ‘এক্সপেরিয়েন্স দি ট্রান্সফর্মেশন অফ দি আরএমজি টুয়ার্ডস সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ইনোভেশন’ শিরোনামের একটি ডিসপ্লে জোনও খোলা হয়েছে – যা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দু’টি কফি টেবিল বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন, যার ওপর বিজিএমইএ চলতি বছরের শুরু থেকে কাজ করছে।

পোশাক রপ্তানিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চার জন তৈরী পোশাক প্রস্তুতকারককে বিশেষ সম্মাননাও প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইন্টারন্যাশনাল এ্যাপারেল ফেডারেশন (আইএএইফ) সভাপতি সেম অলটান এবং বিজিএমইএ সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বক্তৃতা করেন। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

দেশের পোশাক খাতের অগ্রগতি ও নারীর ক্ষমতায়নবিষয়ক পৃথক দুটি ভিডিওচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগ ও সোর্সিংয়ের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিতে বিদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। কারণ, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের সেরা অনুকূল গন্তব্য।

তিনি বলেন, ‘আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। এর ফলে, বাংলাদেশ বিশ্বে এখন বিনিয়োগ এবং সোর্সিং-এর জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে। দেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আমি দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকেও অনুরোধ করছি। আপনারা তাঁদের প্রযুক্তি, জ্ঞান আপনাদের শিল্প খাতে গ্রহণ করুন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণই আমাদের সাহসের উৎস। জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২,৮২৪ মার্কিন ডলার এখন মাথাপিছু আয়। ক্রয় ক্ষমতাও এদেশের মানুষের বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরী হচ্ছে।

তিনি বলেন, শুধু রপ্তানি করলেই চলবে না, নিজের দেশের ভেতরেও বাজার সৃষ্টি করতে হবে এবং করোনাকালীন তাঁর সরকার যতটা সম্ভব তৃণমূলে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া ও সরবরাহ করা যায়, সেটা করেছে। এর ফলে, মানুষের ভেতর হাহাকার আসেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পদধ্বনি শুনছি আমরা। যাঁরা শ্রম দেয়, তাঁরা আমার বাংলাদেশেরই মানুষ; তাঁদেরকে আমরা আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে চাই। কারণ, এখন বিজ্ঞানের কারণে প্রযুক্তির নতুন নতুন আবির্ভাবে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। তাই, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত করে দক্ষ মানবসম্পদ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য, সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং উদ্যোক্তাও সৃষ্টি করছে।

তিনি বলেন, ‘এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানে যে-প্রভাব ফেলবে, সেজন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। আমাদের তৈরী পোশাক শিল্পে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যবস্থা নিতে হবে। সেজন্য আমরা প্রস্তুত, আমরা তৈরী করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের মাথায় আমাদের এই চিন্তাও প্রবেশ করাতে হবে – প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে হলে আমাদের দেশে-বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে। ‘তাঁরা যাতে প্রযুক্তিজ্ঞানেও দক্ষ হয়, সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

তিনি তৈরী পোশাক রপ্তানিকারকদের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কাপড়ের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং শ্রমবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর রাজনীতিই হচ্ছে – এদেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহেনতি মানুষের জন্য। তাঁদের কল্যাণই তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দেশে যে-বিপুল শ্রমশক্তি রয়েছে তাঁদের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং মেধা কাজে লাগানোরও ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, আমাদের সাড়ে ১৬ কোটির ওপরে মানুষ এবং তাঁদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। ‘কিন্তু, আমরা কারো কাছে ভিক্ষা করে চলতে চাই না। নিজের খাদ্য উৎপাদন নিজে করবো। সেজন্য, ফসলি জমি রক্ষা করা, যততত্র শিল্প গড়ে না তোলা এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ে তোলার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আমি দেশের ব্যবসায়ীদেরকেও আহ্বান জানাবো যে, আপনারাও বিদেশি পার্টনার খুঁজে নেন।’

‘আমাদের দেশেও বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ রয়েছে’ – উল্লেখ করে সেই সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের সাথে আমরা যুক্ত হচ্ছি। তাছাড়া, আমরা ওটারওয়েজ, এয়ারওয়েজ, রেলসহ সবকিছুতেই উন্নয়ন করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শুধু আমরা নই, সারাবিশ্বের মানুষ কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে, করোনার ভয়াবহতায় সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা-মূল্যস্ফীতি; তার ওপর শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও আজ অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খাচ্ছে এবং নানা অসুবিধা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাই, আমরা চাই যুদ্ধ বন্ধ হোক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা-মহামারির শুরুতে যখন উন্নত বিশ্বের অনেক দেশই বিপর্যস্ত, তখন আমাদের সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ, আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার কারণে করোনা-মহামারি অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবিলা করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ তহবিল, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান, ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের দুঃস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমসহ মোট ২৮টি প্যাকেজের আওতায় অতি স্বল্প সুদে ২.৩৭ ট্রিলিয়ন টাকার ঋণ বরাদ্দ করেছি, যা ২০২২ অর্থবছরের মোট জিডিপি’র ৫.৯৮ শতাংশ। সময়োচিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের ফলে আমরা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সব বাঁধা সফলভাবে উত্তরণ করতে পেরেছি।  

তিনি বলেন, তৈরি পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি যাতে অব্যাহত থাকে, সেজন্য নগদ সহায়তাসহ অন্যান্য সুবিধা আমরা প্রদান করছি। ওয়ারহাউস সুবিধায় বিনাশুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুবিধা; ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খোলার সুবিধা; হ্রাসকৃত শুল্কে মেশিনারিজ আমদানি এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের অনুকূলে ‘এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) থেকে অতি অল্প সুদে কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে অর্জিত হয়েছে ৪২.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর, ২০২২ সময়ে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১৩.৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্জিত রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১০.৫৫ শতাংশ বেশি। 

শেখ হাসিনা বলেন, সুযোগ বা প্রণোদনা অনেককেই দেওয়া হয়, কিন্তু তাঁরা সেটা কাজে লাগাতে পারে না; যেটা গার্মেন্টস শিল্প পেরেছে। 

তিনি বলেন, আমাদের জিডিপিতে রপ্তানি খাতের অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিগত অর্থবছরে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য ও সেবাকে দীর্ঘমেয়াদি কর প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্রান্ডকে গ্লোবাল ব্রান্ডে পরিণত করার লক্ষ্যে রপ্তানির নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি এবং পণ্যের বৈচিত্রকরণ ও নতুন বাজার তৈরির উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে কর হার সাধারণ কারখানার জন্য ১২ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানার জন্য ১০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে, আজ বিশ্বসেরা ১০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে নয়টিই বাংলাদেশে অবস্থিত।

Loading...