কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ ‘এইচ’-এর শেষ রাউন্ডের ম্যাচে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলোতে উঠেছে দক্ষিণ কোরিয়া। ২০১০ সালের পর আবারও নক-আউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো এশিয়ার হেভিওয়েট দলটি। তিন ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় উত্তরণ আগেই নিশ্চিত করেছিল পর্তুগাল। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) পর্তুগালকে হারানোর পরে গ্রুপের তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট হয় দক্ষিণ কোরিয়ার। সমান-সংখ্যক ম্যাচে চার পয়েন্ট উরুগুয়েরও। একই সময়ে, নিজেদের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ে ২-০ গোলে হারিয়েছে ঘানাকে। দক্ষিণ কোরিয়া ও উরুগুয়ের পয়েন্ট সমান হওয়ায় গোল পার্থক্যও সমান হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষের জালে গোল বেশি দেওয়াতে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দলটি মোট চারটি গোল দিয়েছে। অন্যদিকে, উরুগুয়ে প্রতিপক্ষের জালে গোল দিয়েছে মাত্র দুইটি। উরুগুয়ের চেয়ে দুইটি গোল বেশি দেওয়াতে এগিয়ে থাকায় শেষ ষোলোতে উত্তরণ হলো দক্ষিণ কোরিয়ার।
এদিন শেষ ষোলোয় উঠার লড়াইয়ে টিকে থাকতে পর্তুগালের চেয়ে ম্যাচটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার। কেননা, দুই ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে আগেভাগেই পরের রাউন্ডের টিকিট কেটে ফেলেছিল পর্তুগাল। সমান-সংখ্যক ম্যাচে এক পয়েন্ট ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার। শেষ ষোলোর লড়াইয়ে থাকতে জয় ছাড়া বিকল্প পথ ছিল না কোরিয়ানদের। অবশ্য, কোরিয়া জিতলেও ঘানা-উরুগুয়ের ম্যাচের ফলাফলের পরেই নির্ধারিত হতো কোরিয়ানদের ভাগ্য; আর হয়েছেও সেটিই।
দোহার এজুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই গোলের আনন্দে নেচে উঠে পর্তুগাল। ম্যাচের পাঁচ মিনিটে পর্তুগালের রক্ষণভাগ থেকে উড়ে আসা বলে ডান-প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ শানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বক্সের ভেতর ঢুকে মাইনাস করেন ডিফেন্ডার দিয়োগো ডালোট। পাস পেয়েই শট করে গোল করেন স্ট্রাইকার রিকার্ডো হোর্টা। এবারের বিশ্বকাপে অভিষেকেই গোল করলেন হোর্টা। পর্তুগালের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের অভিষেকে গোল করার নজির গড়লেন তিনি।
ম্যাচে ফিরতে মরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ-পরিকল্পনা করতে থাকে। ১৭ মিনিটে মিডফিল্ডার সন হেয়াং-মিনের ক্রস থেকে দারুণ এক হেড নিয়েছিলেন স্ট্রাইকার চো গুয়ে-সুং। তাঁর হেড পর্তুগালের গোলরক্ষক দিয়োগো কস্তার হাতে জমা পড়ে।
দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন ২৭ মিনিটে পূরণ হয়। হুয়াং ইন-বেয়মের করা কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড দিয়ে সরাতে গিয়েছিলেন পর্তুগালের মিডফিল্ডার রুবেন নাভেস। তবে, বলে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি; বল লাগে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পিঠে। বল এরপর পর্তুগালের গোল মুখে পড়ে; সেখানে ছিলেন ডিফেন্ডার কিম ইয়ং-গুন। বাঁ-পায়ের শটে গোল করেন দলকে খেলায় ফেরান তিনি।
দ্বিতীয় গোলের জন্য মরিয়া হলেও স্কোর লাইনে পরিবর্তন আসেনি। ১-১ সমতা নিয়ে ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ হয়।
বিরতির পর পর্তুগালকে চেপে ধরে দক্ষিণ কোরিয়া। খেলা শুরুর পর পর্তুগালের সীমানায় ১০ মিনিটের ব্যবধানে দু’বার আক্রমণ করে দক্ষিণ কোরিয়া। ম্যাচে ৬৬ ও ৬৮ মিনিটে তাঁদের আরও দু’টি আক্রমণে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান পর্তুগালের গোলরক্ষক দিয়োগো কস্টা।
ম্যাচের ৬৫ মিনিটে রোনাল্ডোকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এই ম্যাচে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। একটি করে অ্যাসিস্ট ও হেড নিতে পেরেছেন সিআর সেভেন। মাঠ ছাড়ার সময় বেশ বিরক্ত ছিলেন তিনি। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচ খেলে মাত্র একটি গোল করতে পেরেছেন রোনাল্ডো।
রোনাল্ডো মাঠ ছাড়া পরে মাত্র একটি আক্রমণ করতে পেরেছে পর্তুগাল। ৭২ মিনিটেে ঐ আক্রমণে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন স্ট্রাইকার রাফায়েল লিয়াও। আরেক স্ট্রাইকার আন্দ্রে সিলভার পাস থেকে বল পেয়ে বাইরে শট নেন লিয়াও।
৮৬ মিনিটে ভালো আক্রমণ করেছিলো দক্ষিণ কোরিয়া। মিডফিল্ডার সন হেয়াং-মিনের ক্রসে স্ট্রাইকার চো গুয়ে-সুং-এর হেড আটকে দেন পর্তুগালের গোলরক্ষক।
এ-অবস্থায় ১-১ সমতায় শেষ হয় ৯০ মিনিট। ইনজুরির সময়ের প্রথম মিনিটে পর্তুগালের জালে দ্বিতীয়বারের বল জড়ায় দক্ষিণ কোরিয়া। প্রতি-আক্রমণ থেকে মিডফিল্ডার সন হেয়াং-মিনের থ্রো বল থেকে বক্সের মধ্য থেকে শটে গোল করেন আরেক মিডফিল্ডার হুয়াং হি-চান। ২-১ গোলে এগিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া।
ইনজুরি সময়ে সপ্তম মিনিটে শেষ বাঁশি বাজলেও আনন্দে মেতে উঠতে পারেনি দক্ষিণ কোরিয়া। কারণ, তখনও অন্য ভেনুতে ৮৮ মিনিটে উরুগুয়ে-ঘানার ম্যাচটি চলমান ছিল। ঐ ম্যাচের দিকে পাখির মতো চোখ ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার। ঐ সময় ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল উরুগুয়ে। শেষ পর্যন্ত উরুগুয়ে জিতলেও, গোল পার্থক্যে এগিয়ে থাকায় শেষ ষোলোতে যায় দক্ষিণ কোরিয়া। অন্যদিকে, ঘানার বিপক্ষে জিতেও বাদ পড়ে যায় উরুগুয়ে।
২০০২ সালের পরে আবারও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলো ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে।