গত বছরের মাঝামাঝির দিকে ফেসবুকে এক ছোট ভাই একটি গ্রুপে আমন্ত্রণ দিল। দেখলাম চট্টগ্রামের কিছু ছেলে এবং কিছু ভাই মিলে একটি সাইক্লিস্ট গ্রুপ এর পরিচালনা করছে। তখন থেকেই মাঝে মাঝে আমি তাদের গ্রুপে ঢুঁ দিতাম। তাদের সাইকেল চালানো, বিভিন্ন রাইডে যাওয়া সব কিছু দেখতাম। আমারো মন চাইতো তাদের সাথে জয়েন করি। অনেক ইচ্ছা এবং আকাঙ্খা নিয়ে চলে গেলাম নিউ মার্কেটের দিকে, উদ্দেশ্য আমিও একটি সাইকেল নিবো। অনেক ঘোরা ফেরা করে নিয়ে নিলাম শখের একটি সাইকেল। আর এভাবেই তাদের সাথে আমিও সাইক্লিস্ট এর খাতায় নাম লিখালাম।
বলতে গেলে প্রতি সপ্তাহে একটি রাইড হতো যেখানে প্রায় শ'খানেক আমার মতো সাইক্লিস্ট থাকতো। প্রতি রাইডের আগে ফেসবুক গ্রুপে আলোচনা হতো কোথায় রাইড হবে এবং কখন রাইড হবে। হটাৎ এক ভাই বললো যে এবার একটি লং রাইড হবে তাও সেটা দেশের বাইরে। পরিকল্পনা করা হলো আমাদের পাশের দেশ ভারত সফর করা হবে সাইকেল চালিয়ে। আমাদের মাঝে অনেকেই চাকরি করে, অনেকেই ব্যবসা করে, অনেকেই পড়াশোনা করে, সময় একটু লম্বা বলেই অনেকেই ইচ্ছা থাকার পরেও রাজি হলো না ভারত সফরের। কিন্তু আমরা যারা পরিকল্পনা করেছিলাম তারা মোটামুটি রাজি ছিলাম। কিন্তু সময় যতই যায় ততই সবার ব্যস্ততা বেড়ে যায় তাই ৮ জনের মাঝে আমরা ৩ জন পরিশেষে যেতে সক্ষম হই।
ভারতে সাইকেল নিয়ে যেতে হলে কিছু আনুষঙ্গিক কাজ আছে যা আমাদেরকে আগে থেকেই সেরে ফেলতে হবে যেমন ভিসা, এন ও সি সার্টিফিকেট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এসব। যেমন ভাবা তেমন কাজ, আমরা অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করি, তারপর এন ও সি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করি অতঃপর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করি। আমাদের এই রাইডের জন্য আমাদেরকে গ্রুপ থেকে দেয়া হলো একটি বার্তা বহনকারী ব্যানার।
পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ০৭ তারিখ সন্ধায় ৭ টায় আমরা কুমিল্লার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি, আগেই বলে রাখি এক সদস্য এর বাড়ি কুমিল্লায় এবং আমরা সেখানে রাত্রি যাপন করি। আর সেখানে পোউছাতে মধ্য রাত্রি হয়ে যায়। তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে সেই ভোর কাক ডাকা ভোরে আবারো যাত্রা শুরু করি আখাউড়া সোনামোড়া বর্ডার এর উদ্দেশ্যে। কুমিল্লা থেকে সোনামোড়া বর্ডার প্রায় ৬০ কিলোমিটার। যেতে যেতে যদিও আমাদের অনেকখানি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কসবা বড় বাজার পৌছানোর পর একটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই যার কারনে আমাদের একজনের সাইকেলের চাকার রিং বেকে যায় এবং আরো কিছু ক্ষতি হয় যা সারাতে আমাদের আরো ৩ ঘন্টার মতো সময় লেগে যায়। বর্ডার অতিক্রম করার শেষ সময় হলো সন্ধ্যা ৬টা। আমাদের যেহেতু অনেকটুকু সময় অতিবাহিত হয়ে তাই সব ফর্মালটি শেষ করতে কাস্টম পার হয়ে ইন্ডিয়ার ত্রিপুরা সীমানায় পা রাখি।
সোনামুরা তে বাংলাদেশ কাস্টম এ কাজ সেরে ঢুকে যায় ইন্ডিয়া বর্ডার এ, সেখানে দুই বর্ডার এ সম্মিলিত ভাবে চলছিলো flag ceremony, তাই কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হলো এবং সেই ১৫ মিনিট এর অনুষ্ঠান টি ও দেখার সুযোগ হলো,এরপর সিধান্ত নিলাম যে আমরা ফেরার সময় ও এই প্রোগ্রাম টা আবারো দেখে যাবো।
ইন্ডিয়ার কাস্টম এ ঢুকে একটা প্রব্লেম এ পরলাম, সাইকেল নিয়ে যেতে দিবে নাকি দেবে না তা নিয়ে মেনেজমেন্ট এ সংশয়,আমরা হতাশ ভেবেছি আবার ফিরে যেতে হবে। কিন্তু উপর লেবেল এ ফোন করে বেপার টা কনফার্ম করলো যে সাইকেল নিয়ে যেতে দেবে এবং আমরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেখালাম এবং যাবতীয় অরিজিন কাগজ সাথেই ছিলো।
সব শেষে ইন্ডিয়ার সিমানায় ঢুকেই একটা চিন্তা মাথায় আসলো তা হলো আমরা নেটওয়ার্ক এর বাইরে চলে যাচ্ছি তাই নিকটস্থ যার যার সবাইকে কল করে জানায়ে দিলাম। এবার যেতে যেতে অন্যরকম আমেজ অনুভব করলাম ভিন্ন দেশ ভিন্ন নিয়ম রিতি।
এবার পরলাম আর এক সংকটে...
থাকার মত হোটেল কই আছে তা আমরা সাধারনত গুগলিং করে ঠিক করে নি। কিন্তু এখন তো মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, তাই পথচারী দের জিজ্ঞেসবাদ করেই চলে গেলাম হোটেল রাজধানী তে।
একটানা ৭০ কি মি সাইক্লিং করে বেডে পিঠ ঠেকানোর পর দু চোখ বুজে আসছিলো সহজেই। কিন্তু না আমাদের রাতের খাবার বাকি তাই ঘুমালে চলবে না, খুঁজি খাবার হ্যটেল কই আছে, না আসলে কোনো হটেল পাচ্ছি না কারন এটা বাংলাদেশ নয় যে আনাচে কানাচে হ্যটেল পাওয়া যায়।
রাত্রি ৯:৩০
কোনোমত এ একটি পেডেল রক্সা পেলাম, যাহা ওখানে খুব এই দুর্লভ, বলে কয়ে উনাকে ভাতের হোটেল এর সন্ধানে চলে এলাম কারন তারা এখানের ই লোকজন, ভাড়া নিলো দ্বিগুণ আর অনেক ঘুরিয়ে নিলো। রাতের খাবার শেষে ফিরে এসে একটানা ঘুম দিলাম।
সকালে আগরতলা থেকে উদয়পুর রোওনা হবার কথা, ঘুম থেকে উঠে দিনের আল্যয় শহরটা দেখতে ইচ্ছে হলো, তাই হেটে বের হলাম আমি একাই, ওমা সেই কি বৃষ্টি....
অনেক সিদ্ধান্তে ঘুরপাক খাবার পর রেইন কোট পরেই যাত্রা শুরু করে দেবো ভাবলাম, অখানকার মানুষ সকল সবাই খুব হেল্পফুল। কথামত যাত্রা শুরু তবে তার আগে খুঁজে পেয়ে গেলাম বেনামি মোবাইল সিম। এটা করতেই আমাদের চলে গেলো। তুমুল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দুরন্ত গতিতে চলতে শুরু করলাম, সাইকেল এর গতি এভারেজ ৩০ কি মি।
আমার সাইকেল এর পিছনের চাকার রিং ভেঙে যাওয়াতে বার বার চাকা পাঞ্চার হবার সম্ভাবনা আর এর মদ্ধে দুই বার হলো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, আমরা পোউছে গেলাম সিপাহজালা। এটা একটা সাফারিপার্ক। টিকেট করে ঢুকে যা দেখলাম, দু পাশে ঘন জংগল আর মাঝখানে পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তা।
বড় ভাই একটু থামতে বললেন (মামুন)। এর ই মদ্ধে দুই কি মি পথ চলে এসেছি, আর ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে না কারন আমাদের আবার বের হতে হবে মেইন রাস্তায় যেতে হবে, ওখান থেকে যেতে হবে আমারদের মেইন গন্তব্য "উদয়পুর"।এখানে সাধারণত সাইকেল এ করে আগে কেউ এসেছে বলে।মনে হচ্ছে না, এটা একটা সোজা পাহাড়ি রাস্তা ঠিক জেনো আমাদের রাঙামাটি।
বড় ভাই জেটা বললেন, শুনো এখানে কেনো দাড়িয়েছি জানো? আমরা তো ভালোই অবাক হলাম! তিনি বললেন শুনো পাখির কুঞ্জন!
আরে আসলেই তো, পাখির কিচির মিচির, কুঞ্জন। আমরা মুগ্ধ হলাম। আসলে এখানে সাইকেল এর চাকার আওয়াজ, আর।পাখির কুঞ্জন ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।
ঠিক ফিরে যাবার মুহুর্তে তিন বারের মতন চাকা পাঞ্চার....
আরো পনেরো মিনিট লেগে গেলো তা ঠিক করতে। তখন সন্ধ্যা,আমরা অন টাইম এ গন্তব্য এ যেতে পারলাম না, একে তো পাহাড়ি রাস্তা এর পর আবার ঘুটঘুটে অন্ধকার, সাথে বেটারি লাইট ছিলো সাইকেল এর, ওটা তিন ঘন্টা জলবে। আবারো চলতে শুরু করলাম। সাথে গুরি গুরি ব্রিষ্টি আর মোটামুটি পিছল পথ। পাহারের মাটি গলে রাস্তায় নেমে পড়লো কোথাও, সেখানে চাকা দারিয়ে জাচ্ছে। অবস্থা খুব কষ্টদায়ক হয়ে পড়লো। আর মনে আতংকিত যদি হাইজেকার এর শিকার হই। মাঝ পথে তিন জন বাইক আরোহী আমাদের পথ রোধ করলো, থামতে বললো, আমরা নিশ্চিত ওরা ডাকাত। তারা থেমে আমাদের সামনে এসে বললো কোথা থেকে এসেছেন আপনার? আমরা ভেবেছিলাম এটা হয়ত ডাকাতির প্রথম ধাপ আর কুশল বিনিময়। আমরা উত্তর দিবার পর উনারা একে একে কোলাকুলি সেরে নিলেন। এরপর যা করলেন অবাক করার মতন। তারা অনুরোধ করলো বললো ভাই যদি অনুমতি দেন তাহলে আপনাদের কিছুসময় ভিডিও করতে চাই। তারা খুব কোউতুহল নিয়ে আমাদের ভিডিও করলেন, আর ভিডিও করলেন এবং তারা আমাদের উদয়পুর পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। সে সময় আমরা যে কতটা অবাক হয়েছিলাম আর মনে।মনে আল্লাহ্ কে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম ভাষা নেই। আমরা রাত ৯ টায় চলে আসি উদয়পুর।
সারা শরীর অসার হয়ে আসছিলো আর সাথে গুরি গুরি বৃষ্টি, রাস্তায় এক জনকে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা থাকার মত হোটেল কই আছে? তিনি বললেন আপনারা কোথা থেকে এসেছেন? বাংলাদেশ থেকে? চট করে বুঝে গেলেন কারন আমাদের গেঞ্জি তেই লোগো ছিলো। তিনি বললেন আরে আপ্নারা তো মেহমান আমাদের সাওলেল চালিয়ে এত কষ্ট করে এসেছেন, আসুন আমাদের অফিসে আসুন, একটু জিরিয়ে জান।
তিনি হলেন কমিউনিস্ট পার্টির একজন মেম্বার। এবং তারা আমাদের কে ওই রাতে হোটেল রয়াল ইন এ ফ্রি কষ্ট করে দিলেন। সাথে এবার ঝুম বৃষ্টি। ভিজে ভিজে হোটেল এর পাশেই পাইপ দিয়ে সাইকেল গুলো ধুয়ে নিচ্ছিলাম, আরো এক ঘন্টার বেশি সময় লেগে গেলো। ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার সেরে ঘুম দিবো সেই মুহুর্তে, হঠাত ঢোল এর বাজনা শুরু হলো, জানালা দয়ে তাকিয়ে দেখি নিচে একটি হিন্দু বিয়ে হচ্ছে, এবং তাদের গেস্ট গুলো এই হোটেল এই উঠেছে। বিয়ের মন্ডপ এত সুন্দর করে সাজিয়েছে যে মন ভরে গেলো আর তাজা ফুলের ঘ্রান যেনো চার তলার উপর উঠে এসেছে।
পর দিন সকাল ৮:৩০ চোখ খুলেই দেখি জানালা দিয়ে তাকিয়ে এখনো বৃষ্টি পড়ছে। বেপারটা খুব হতাশা জনক। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে আমাদের পরিকল্পনায় ব্যঘাত ঘটবে।
সারাদিন হোটেলেই কেটে গেলো, বিকেল নাগাদ বৃষ্টি থামলে বের হয়ে পরি উদয়পুর রেলওয়ে স্টেশন এর দিকে, ওটা প্রায় ২০ কিমি দূরে অবস্থিত। যেতে যেতে প্রায় সন্ধ্যা আর খানিকটা উঁচু নিচু পথ। সন্ধার পর পর আমরা তিন জন এর মধ্যে এক জন কে হারিয়ে ফেলি, আমাদের পরস্পরের মাঝে খানিকটা দুরত্ত হয়ে গিয়েছিলো, আর ঘুটঘুটে অন্ধকারও বটে।
আমরা পি রেলওয়ে জেতে যে পথ তার ঠিক মাঝামাঝি তেই আছি। আগে পরে আমাদের ওই সাথি কে খুঁজে পাচ্ছি না। খুব চিন্তায় পরে গেলাম, বড় ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন আমরা আবার হোটেল এ ফিরে যাবো আজ আর ওদিকে যাচ্ছি না। আর তাছাড়া উনার কাছে মোবাইল সিম ও ছিল না তাই কল এ ও পাবো না। আমরা হোটেল এ ফিরে এলাম। নাহ এখানে ও সে আসেনি। এবার সি এন জি রিজার্ভ করে আমরা আবার উদনপুর রেলওয়ে রওনা হলাম, ড্রাইভার কে জানালাম, সে আমাদের খুব সাহস দিলো, ৩০ মিনিট এ পোউছে গেলাম রেলওয়ে স্টেশন এ। ওমা এসে দেখি অবাক কান্ড আমাদের সাথি ভাই প্লাটফর্ম এ বেঞ্চ এ দিব্বি বসে আছে। যাই হোক এখামে দুরত্ত আর ভুলবুঝাবুঝি হোয়া তে আমাদের যাত্রা পথে প্রব্লেম হয়ে ছিলো। কিছু ফোটো তুলে আবার ফিরে এলাম হোটেল রুম এ।
পরদিন সকাল তবু ব্রিশটি থামছেই না, জানতে পেলাম সাগরে নিম্নচাপ হয়েছে তাই আবহাওয়া এমন। আমাদের আরো দুইটা জায়গা দেখা হলোনা শুধু এই বৃষ্টির কারনে তা হলো নির মহল প্যালেস আর একটা হলো বেরেজ। যাই হোক আমরা সিধান্ত নিলাম ট্রেনে করে আবার ফিরে যাবো আগরতলা। সেই ক্ষেত্রে সেই সি এন জি ড্রাইভার আমাদের সহযোগিতা করলো, সে আমাদের কে ট্রেনে সাইকেল তোলার অনুমতি টা করে দিয়েছিলেন তাই আমাদের আর কোনো প্রব্লেম হলো না, ওখানে স্টেশন মাস্টার আর স্টেশন পুলিশ প্রধান আমাদের কে যথেষ্ট সাপোর্ট করেছিলেন। সেই সাথে তারা ও তাদের কাজে আমাদের পাশে বসেই আগরতলা পর্যন্ত এসেছিলেন, এবং দুই দেশ এর গল্প জুড়ে দিয়েছিলেন আমাদের সাথে। ট্রেন থেকে নেমে কিছু ফোটোগ্রাফি করলাম উনাদের সাথে, এরপর গরতলার আরো একটি হোটেল এ উঠে পরলাম, দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, লাঞ্চ এর আগে সাইকেল গুলো ধুয়ে আমরা ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ সেরে নিলাম। ওখানে ও সবাই আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন।
সন্ধায় বের হলাম একটা রাজবাড়ি আর একটা মন্দির দেখতে। ওখানে মন্দিরে অনেক ছবি তুলেছি,আর রাজবাড়ি টা তে সংস্কারমুলক কাজ চলছিলো তাই ফটক বন্ধ থাকায় তাতে আর প্রবেশ করতে পারলাম না।
ব্রিশটি একদম থেমে গেলো। পরদিন সকাল, চলে গেলাম উজয়স্ত পেলেস দেখতে। এখানে প্রবেশ মুল্য ১০ টাকা কিন্তু আমাদের জন্য ১৫০ টাকা করে। ভেতরে লক্ষ করলাম এটা মাণিক্য রাজাদের শাসন আমলের। ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ ছিলো তাই তা আর করা গেলো না,কিন্তু এই মিউজিয়ামের প্রিচারিকার সাথে সাথে দেখা করলাম,খুব সম্মান করলো আমাদের। একেবারে দুই দেশ এর নানান গল্প জুড়ে দিলাম সকলে।
ব্যাগপ্যাক রেডি ই ছিলো তাই মিউজিয়াম থেকে বের হয়েই হোটেল এ এসে হোটেল ছেড়ে দিলাম, রওনা হলাম নিজের দেশ এর উদ্দেশ্য। আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো আবারো ফ্লাগ সিরিমনি দেখবো তাই ঠিক সময়ে ওখানে উপস্থিত হয়ে গেলাম। সব শেষে ইন্ডয়া বর্ডার পাস করার সময় বি এস এফ রা আমাদের সম্মানার্থে আবারো আমাদের আমন্ত্রন জানালেন, ব্যাপারটা তে খুব আশ্চর্য হলাম আমরা। এতখানি আশা করিনি। এখানেই শেষ নয় আমরা আবারো চলে এলাম আখাউড়া বাজার এ,যেহেতু রাত নেমে আসলো তাই আমরা এখানে ও একটা হোটেল এ উঠে গেলাম। খুব সকাল করে আমরা আখাউড়া হতে আবার ৬০ কি মি রওনা দিলাম কুমিল্লার উদ্দেশ্য। একটা কথা বলে নেই, নিজের দেশ এ যখন প্রবেশ করলাম তখন অনুভুতি টা বোঝাতে পারবো না, এতটা স্বাধীন মনে হচ্ছিলো যে অন্য দেশ এ না গেলে সেটা বুঝতাম না। আর প্রশান্তির ছোঁয়া লেগেছিলো মনে।
ওই দিন বিকেল টা কুমিল্লায় ঘুরে ফিরে কেটেছিলো। ওখানে বড় ভাই এর চাচার বাসায় থেকেছি। পর দিন সকাল এক জন কে ছাড়াই রওনা হয়ে গেলাম ফেনীর উদ্দেশ্য। ৬৮ কি,মি দূরত্ব। বেশ দুপুর হয়ে গেলো পৌছাতে, মাঝখানে ১৫ মিনিট এর একটা ব্রেক নিয়েছিলাম। শরীর আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না তাই ফেনী হতে আরো ১০০ কি মি ভালিয়ে আসার আর সাহস করলাম না, আর তাছাড়া আমার সাইকেল এর অবস্থা ও খারাপ। তাই বাসে করেই শুরু করলাম যাত্রা। বাড়ি এসে পৌছাতে আমার সন্ধ্যা ৬ টা।
ভ্রমনকারী ও লেখক : ফয়সাল আহমেদ