loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • মার্টিনেজের গোলে আর্জেন্টিনার জয়; ব্রাজিলের ড্র

  • মাস্টারকার্ড ‘এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করলো পূবালী ব্যাংক

  • বিএনপি যেকোনো মূল্যে দেশে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবে: তারেক

  • জ্বালানি রূপান্তর ও পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন জরুরি: পরিবেশ উপদেষ্টা

  • অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

হর হর ব্যোমকেশ!


হর হর ব্যোমকেশ!

সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ এবারে সত্যের সন্ধানে পুণ্যস্থান বেনারসীতে। সেলুলয়েডের পর্দায় যথারীতি আবীর চ্যাটার্জিকেই দেখা গেলো ব্যোমকেশরুপে। তবে বাদবাকী সবকিছুতেই পরিবর্তন। ছবির পরিচালক অঞ্জন দত্ত নন, হরহর ব্যোমকেশ সিনেমা দিয়ে নতুন ব্যোমকেশ সিরিজ শুরু করলেন খ্যাতিসম্পন্ন আরেক পরিচালক অরিন্দম শীল। অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রে দেখা গেলো ঋত্বিক চক্রবর্তী ও সত্যবতীর ভূমিকায় সোহিনী সরকারকে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ কাহিনী বহ্নিপতঙ্গ অবলম্বনে  নির্মিত ছবিটির মুখ্য চরিত্র শকুন্তলা ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল অদিতি রাও হায়দরির। পরবর্তীতে, শকুন্তলার চরিত্রে অদিতির বদলি হিসেবে আসেন টলি-সুন্দরী নুসরাত জাহান। ছবিতে আরও আছেন বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা আদিল হুসেন।

শ্রী ভেঙ্কেটেশ ফিল্মস ব্যোমকেশ বক্সী ফ্রাঞ্চাইজি নির্মানের অনুমতি কিনে নেন ও সুরিন্দর ফিল্মসের সাথে যৌথ প্রযোজনায় ব্যোমকেশের প্রথম পর্বটা অরিন্দম শীলকে দিয়ে নির্মান করেন। তবে ব্যোমকেশের দ্বিতীয় পর্বে সন্দ্বীপ রায়ের পরিচালনার কথা শোনা যাচ্ছে।

ছবির কাহিনীর দিকে চোখ বোলানো যাক। বেনারসীর ইনস্পেক্টর পুরনধর পান্ডে (হার্শ) এর আমন্ত্রনে তার এলাকায় বেড়াতে আসেন ব্যোমেকেশ (আবীর), সত্যবতী (সোহিনী) ও অজিত (হৃত্তিক)। বেনারসীতে ঘুরতে আসার কোন একদিন সেই অঞ্চলের জমিদার দ্বীপনারায়ন সিং (আদিল হুসেন) এর রাজবাড়ীর বিশেষ দাওয়াতে জমিদার ও তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী শকুন্তলা (নুসরাত) এর সাথে পরিচিত হন ব্যোমকেশ। আশ্চর্যজনকভাবে পরদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সদ্য আরোগ্যপ্রাপ্ত রাজা দ্বীপনারায়ন। অতঃপর শুরু হয় ব্যোমকেশের খুনী ধরার অভিযান। ছবির শেষদিকের দেখানো অপ্রত্যাশিত কাহিনীর মোচড় বাংলা থ্রিলার ছবিতে বেশ কমই দেখা গেছে। এককথায় ছবির চিত্রনাট্য শরদিন্দুর গল্পগুলোর ঢঙ্গে ঢিলেঢালা ভাবে নয়, বরং ফেড্রিক ফরসাইটের থ্রিলারগুলোর মত বুলেট গতিতে এগিয়েছে।

ছবিতে ব্যোমকেশ চরিত্রে যথারীতি আবীর দশে দশ। ভালো করেছেন সোহিনী ও হৃত্তিকও। তবে আর যাই বলুন, অজিতের চরিত্রে শাশ্বত ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নিতে বেশ সময়ই লেগেছে বটে।

ছবি প্রচারের কোন এক সাংবাদিক সন্মেলনে পরিচালক অরিন্দমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, নতুনভাবে শুরু করা ভেঙ্কেটেশের এই ফ্রাঞ্চাইজিতে ব্যোমকেশের চরিত্রে আবীরকে নেয়া হলো, কিন্তু শাশ্বত বাদ গেলো কেন। তিনি জানিয়েছিলেন, তার চিন্তায় তখন শাশ্বতকে এবার শবরের (অরিন্দমের আরেক ছবি) ডিটেকটিভ রুপেই ভেবেছিলেন। আর হৃত্তিক চক্রবরতী তো এই সমটাতে অভিনয়ের সকল ক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই অজিত হিসেবে তাকেই বেঁচেছেন।

ব্যোমকেশের স্বপ্ন দৃশ্যে চন্দিনীর আবেদনময়তা, রাজা রবি বর্মা স্টাইলে আকা শকুন্তলার ছবি, সত্যবতীর দেবী জ্ঞানদানন্দিনীর ধাঁচের ব্রাহ্মিকা শাড়ি, কিংবা রাজবাড়ীতে মুজরার আসর.. নন্দনতত্ত্বের বিচারে অরিন্দমের ব্যোমকেশকে যে অঞ্জনের ব্যোমকেশ থেকে ঢেরগুন এগিয়ে রাখা যায় তা আর বলে দিতে হয়না।

অঞ্জনের ব্যোমকেশও দেখেছি, আবার দেখেছি অরিন্দমেরটাও। চলচ্চিত্র নির্মানে বাজেট যে কত বড় প্রভাবক তা একেবারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে হরহর ব্যোমকেশ। অঞ্জনের ব্যোমকেশে দেখে আসা সেই কেতাবি ঢঙের ফিল্ম সেট থেকে অরিন্দমের ব্যোমকেশ যেন পুরোপুরি চোখ ধাঁধিয়ে দেয় তার ব্যয়বহুল সেট ও বেনারসির রিয়েল লোকেশনে চিত্রায়ন দিয়ে।

শরদিন্দুর মুল গল্প বহ্নিপতঙ্গে পাটনার কথা বলা থাকলেও অরিন্দম ছবির প্রায় পুরোটাই চিত্রায়ন করেছেন বেনারসে। প্রাচীন এ শহরের রাজবাড়ী রামনগর দূর্গ ও কোলকাতার বিভিন্ন লোকেশনে ২৫ দিনে ছবিটির কাজ শেষ হয়।

ছবিটির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন বিক্রম ঘোষ। সঙ্গীতের আদি সব বাদ্যযন্ত্র দিয়ে বিক্রম একরকমের সেমি ক্লাসিকাল আবহ তৈরি করেছেন গানগুলোতে যা সেসময়ের বেনারসে বেশ জনপ্রিয় ছিলো।

ছবির শেষ দৃশ্যে বেনারসের ঘাটে ভজনগীতির আসরে প্রাইভেট বজরায় চড়ে পরিচালক অরিন্দমের ক্যামিও উপস্থিতি যেন সত্যজিৎ ভক্তদের মনে ধোঁকা দেয়, এটি জয় বাবা ফেলুনাথের সেই দৃশ্যটি নয়তো!

লেখক: মোঃ আলতামিশ নাবিল

Loading...