loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

মৈত্রী পাইপলাইন বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী


মৈত্রী পাইপলাইন বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধনকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এই মৈত্রী পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন।’ শেখ হাসিনা শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে ভারত-বাংলাদেশ এই মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

ভারতীয় লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেওয়া প্রায় ৩.৪৬ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৩১.৫ কি.মি ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন (আইবিএফপিএল)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত। ভারতের শিলিগুড়ির নুমালীগড় রিফাইনারী থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইনে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানি করা হবে। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়েছে প্রায় ১২৫ এবং ভারতের অংশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। পাইপলাইনটির হাই-স্পিড ডিজেল (এইচএসডি)-এর বার্ষিক পরিবহনের ক্ষমতা ১ (এক) মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটিপিএ)।

পাইপলাইনটি উদ্বোধনের পরে উভয় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, পারস্পরিক সুবিধার জন্য দেশ দু’টির মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপরও তাঁরা জোর দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের দুই দেশের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকুক – সেটাই আমি চাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরো উন্নত করতে চাই, যাতে, ভারতের সঙ্গে আমাদের এই বন্ধুতত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা একসাথে কাজ করে যেতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ, আমরা চাই আমাদের দেশের এই উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হোক। সেই সাথে আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করেছি। এগুলো ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি যাতে এই বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের কোনো অসুবিধা না হয়। এর ফলে, ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং দুই দেশের মানুষই লাভবান হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই, ভারতের বিনিয়োগকারীরা সেখানে এসে আরও বিনিয়োগ করুন। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হবো। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী দিনেও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মতো আরো সফলতা বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদযাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একইসঙ্গে কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইনটি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় দেশের প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের, বিশেষ করে ভারতের যাঁরা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই পাইলাইন নির্মাণ করে দিয়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, এই ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি-সংকটের মুখোমুখি তখন এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানীতে ব্যয় এবং সময়ও উল্লেখযোগ্য ভবে হ্রাস পাবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন,  এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে।

প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইন নির্মাণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য ভারত সরকার এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীসহ আসামের জনগণের প্রতিও ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হোত। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আসামের একটি ভালো বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হলো; যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং সেখানে আসামবাসী ও লাভবান হবে, ভারতবাসীও লাভবান হবে।

তিনি বলেন, পাবর্তীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫,০০০ মেট্রিক টন। তবে, আমরা এই স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি রামপাল মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট এবং ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা রেলওয়ে সেতু উদ্বোধনের জন্য পুণর্বার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার এ-মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতাসহ ’৭৫ এর ১৫ অগাস্টের সকল শহিদ, শহিদ জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের স্মরণ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনী হিসেবে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর আত্মত্যাগের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে ভারতে আশ্রয় প্রদান এবং ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরে বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া তিনি ও ছোট বোন শেখ রেহানাকে ভারত সরকারের আশ্রয় প্রদানের কথাও উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন ‘আমরা কৃতজ্ঞ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার এবং জনগণ অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানেই ’৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আমরা চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু ভাতৃপ্রতীম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ এবং ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক সেতুবন্ধন আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ট থেকে ঘনিষ্টতর করেছে।

উভয় দেশের সরকার বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রের অনেকগুলো সম্ভবনাকে বাস্তব রূপ দান করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান যে-সমস্ত সমস্যাগুলো একে একে সমাধান করা হয়েছে, তারমধ্যে রয়েছে – গঙ্গার পানি চুক্তি, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়ক ও রেল যোগাযোগগুলো একে একে উন্মুক্ত করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, উন্নয়নে একযোগে কাজ করে যাওয়া এবং ভারতের কাছ থেকে উন্নয়নে বিভিন্ন সহযোগিতা প্রাপ্তি, সাংস্কৃতি সহযোগিতার জোরদারকরণ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি প্রভৃতি।

দুই দেশের মানুষের পরস্পরিক কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে পারস্পরিক  সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ইতোমধ্যে তা বাস্তবায়নন করা হয়েছে। ভারতের থেকে ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি আর বিদ্যুৎখাতে উপআঞ্চলিক পর্যায় সহ-দ্বিপাক্ষিক আরও কয়েকটি উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আর এই সহযোগিতার ফলে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে।

এ-প্রসঙ্গে সমুদ্র সীমানার পাশাপাশি স্থল সীমানা নিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক সমস্যার সমাধান করতে পারায় ভারতের সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনগণকে তাঁর ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তিনি ভার্চুয়ালি এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

Loading...