বায়ার্ন মিউনিখ মিউনিখ আলিয়াঁজ এরেনাতে বুধবার (২৯ নভেম্বর) কোপেনহেগেনের সাথে গোলশূন্য ড্র করে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট হারিয়েছে। ইনজুরি টাইমে ভিএআর পেনাল্টির সিদ্ধান্ত এড়িয়ে গেলে বায়ার্নের জয়ের সম্ভাবনা হাতছাড়া হয়। পাঁচ ম্যাচে এনিয়ে প্রথম পয়েন্ট নষ্ট করলো জার্মান চ্যাম্পিয়ন ক্লাবটি। বায়ার্ন গ্রুপের তিন দল – কোপেনহেগেন, গ্যালাতাসারে ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে আগেই পিছনে ফেলে আধিপত্য দেখিয়ে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে।
এর আগে অক্টোবরে ডেনমার্কে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে দুই গোল করে ২-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল বেভারিয়ান্সরা। ইনজুরি টাইমে ফ্র্যান্স ক্রায়েজিগের হ্যান্ডবলে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। ভিএআর রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল ক্রায়েজিগের কনুইয়ের বেশ খানিকটা উপরে ও কাঁধে লেগেছে; সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। যদিও এ-সময় স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন ও কোচ থমাস টুখেল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।
বায়ার্নের অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার থমাস মুলা বলেছেন, ভিএআর প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই এ-ধরনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়ে যাচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার নিউক্যাসল ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষেও এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। মুলা বলেন, ‘আমি কখনই এই আইনের সাথে সহমত হতে পারিনি। কিন্তু এদিনের সিদ্ধান্তের সাথে তুলনা করলে বিষয়টি খুবই আপত্তিজনক। আমি মনে করি আইনপ্রণেতারা বিষয়টি নিয়ে আরও চিন্তা করবে। বিশেষ করে হ্যান্ডবলের সিদ্ধান্তগুলো থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে তাদের কিছু করার থাকে না।’
২০১৮ সালের পর এই প্রথমবারের মতো বায়ার্ন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে ঘরের মাঠে পয়েন্ট হারালো। তারপরও গ্রুপ-এ’র শীর্ষ দল হিসেবেই টুখেলের দল শেষ ষোলোয় উঠেছে।
বায়ার্ন বস বলেছেন, ‘আমাদের খেলা আরও ভালো হওয়া উচিৎ ছিল। সম্প্রতি আমরা বেশ কিছু ম্যাচে ভালো করেছি। আমাদের এখন সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আজ খুব বেশি ঝুঁকি নিয়ে খেলিনি, নিজেদের সুযোগগুলোও যথার্থভবে কাজে লাগাতে পারিনি।’
এই গ্রুপের আরেক ম্যাচে গ্যালাতাসারের সাথে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এর ফলে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে কোপেনহেগেন, হাতে রয়েছে আর মাত্র একটি ম্যাচ। ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপিয়ান আসরের নক আউট পর্বে খেলার হাতছানি এখন ড্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের সামনে। কিন্ত এজন্য আগামী মাসে ঘরের মাঠে গ্যালাতাসারের সাথে পরাজয় এড়াতে হবে।
কোলনের সাথে সপ্তাহের শেষে বুন্দেসলিগায় কোনো খেলোয়াড় বদলি করেননি টুখেল। যদিও খেলোয়াড়দের ব্যস্ত সূচির কারণে বিশ্রাম নিয়ে টুখেলের বিপক্ষে অভিযোগ উঠেছে। এদিন অবশ্য দলে পরিবর্তন এনে লেরয় সানে ও সার্জ গনাব্রিকে বদলি বেঞ্চে রেখেছিলেন টাচেল। তবে কেইনকে আক্রমণভাগের দায়িত্ব থেকে সরাননি। ইনজুরির কারণে দলের বাইরে ছিলেন কিম মিন-জায়ে। এ-কারণে মধ্যমাঠ থেকে লিঁও গোরেজকাকে সরিয়ে রক্ষণভাগে আনা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এবারের মৌসুমে মুলা মূল একাদশে সুযোগ পেয়েছেন।
এই ম্যাচের আগে ১৭ ম্যাচে ২২ গোল করা কেইন এদিন শুরু থেকে কিছুটা শান্ত ছিলেন। শুরুতে বেশ কিছু সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিক দল। মুলা ও ফরাসি টিনএজার ১৬ বছর বয়সী মাথিস টেল আক্রমণভাগে দারুণ সমন্বয় গড়ে তুলেছিলেন। মুলার অ্যাসিস্টে টেল শুরুতেই দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করেন। তাঁর শটটি ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। এরপর টেল গোলমুখে মুলাকে বল বাড়িয়ে দেন। কিন্তু ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী এই খেলোয়াড়ের শট গোলরক্ষক কামিল গ্রাবারা সহজেই রুখে দেন। এরপর গ্রাবারা কেইনকে হতাশ করেন।
এবারের প্রতিযোগিতায় সব ধরনের ম্যাচে এনিয়ে মুলা মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিট মাঠে ছিলেন। সফরকারী দলের রক্ষণভাগ অবশ্য তাঁকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। বক্সের ভেতর তাঁকে আটকে দিলেও বায়ার্নের পেনাল্টির আবেদন আমলে নেননি স্টিফেনি। মুলা অবশ্য পরে বলেছেন, এই ধরনের ফাউলে আইনি কোনো বাধা নেই। ঐ মুহূর্তে এটা তাঁরা করবেই।
বায়ার্ন টানা ১৬বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে উঠেলো। দলটি আগামী মাসে শেষ ম্যাচ খেলতে ম্যানচেস্টার সফরে যাবে। এই মুহূর্তে গ্রুপের তলানিতে থাকা ম্যানচেস্টারের সামনে আসর থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কা তৈরী হয়েছে। শেষ ম্যাচে দলটির জয়ের বিকল্প নেই।
এই ড্রয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে বায়ার্নের টানা ১৭ ম্যাচে জয়ের ধারা শেষ হলো। অবশ্য গ্রুপ পর্বে রেকর্ড ৩৯ ম্যাচে এখনো দলটি অপরাজিত রয়েছে।