স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ২০ জন কণ্ঠ ও শব্দ সৈনিক মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে একই মঞ্চে গাইলেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) এ-উপলক্ষ্যে শিশু, প্রতিশ্রুতিশীল ও বরেণ্য শিল্পী ও গুণীজনদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সেই সময় যেসব গান প্রচারিত হতো, যার মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন – মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় নাট্যশালায় সেইগানগুলো নতুন প্রজন্মের সাথে সম্মিলিতভাবে পরিবেশন করলেন কন্ঠ ও শব্দ সৈনিকরা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এই পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। খবর – স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আগে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন শব্দসৈনিক অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ। এছাড়াও স্বাগত বক্তৃতা করেন একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিশুদের উদ্দেশ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ’তোমরা দেশকে ভালোবাসো, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানো এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যদি তোমাদের সামনে কেউ কোনো অবজ্ঞা বা কটাক্ষ করে তাহলে তোমরা প্রতিবাদ করবে; কারণ তোমরা হলে আমাদের সামনের প্রজন্ম, তোমরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে।’
একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, আজকের আয়োজনটি সাজানো হয়েছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ২০ জন শিল্পী এবং বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে। এর উদ্দেশ্য হলো, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা, বর্তমান শিল্পীরা এবং শিশু শিল্পীরা একই সাথে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান গাইবে।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেই সময়ের ভাবনা ও চেতনা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের মাঝে প্রসারিত হবে, ছড়িয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এ প্রত্যয় ব্যক্ত করতে হবে যে, আমাদের দেশটা যেনো আর কোনো যড়যন্ত্রের শিকার না-হয়, দেশটা যেনো আর ইতিহাস বিকৃতির শিকার না-হয়।
অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ বলেন, আমরা প্রায়শই দেখি, সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলে অনেকেই আমাদের বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে অনেক ভুল উত্তর দিয়ে থাকে, যা অত্যন্ত লজ্জাকর। প্রত্যেকেরই দায়িত্ব – আমাদের ছেলে মেয়েদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া।
সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেন দেশের মুক্তিযুদ্ধে শব্দ ও কন্ঠসৈনিক হিসেবে অবদান রাখা ২০ জন গুণী শিল্পী। এঁরা হলেন – কণ্ঠশিল্পী মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ, মোঃ মনোয়ার হোসেন খান, এম.এ. মান্নান, মোঃ রফিকুল আলম, তিমির নন্দী, শিবু রায়, মনোরঞ্জন ঘোষাল, মোঃ আবু নওশের, মলয় কুমার গাঙ্গুলী, রথীন্দ্রনাথ রায়, কল্যাণী ঘোষ, রূপা ফরহাদ, মালা খুররম, জয়ন্তী লালা, ছন্দা ভূঁইয়া হাজরা, শীলা ভদ্র, আজহারুল ইসলাম ও শাহীন সামাদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী ও ইংরেজী সংবাদ পাঠক শব্দসৈনিক অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ এবং কর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনোয়ার হোসেন খান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাঁদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন শিশু শিল্পীরা। পরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ‘নোঙর তোল তোল’, ‘স্বাধীন স্বাধীন’ পরিবেশন করেন তারা। সেই সময় বেতারে প্রচারিত এই গানগুলোই মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্ধুদ্ধ করেছিলো। সম্মিলিত এ পরিবেশনায় কন্ঠ ও শব্দ সৈনিকদের সাথে যুক্ত হোন একাডেমির শিশু শিল্পীরাও। এরপর মুক্তিযুদ্ধের চরমপত্র পাঠ করেন আল আমিন শেখ। মাঝে ঢাকা সাংস্কৃতিক দল পরিবেশন করে দলীয় সংগীত ‘জয় বাংলা জয় বাংলা বইলা রে’ এবং ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙালির’।
স্বাধীন বাংলা বেতারের সেই সময়ের জনপ্রিয় ‘জল্লাদের দরবার’ নাট্যাংশ পরিবেশন করেন মো: আবু নওশের এবং মো: মনোয়ার হোসেন খান। এরপর তাঁরা ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ এবং পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’পরিবেশন করেন।
দলীয় সংগীত পরিবেশন করে গ্যান্ডারিয়া কিশলয় কচি কাঁচার মেলা ‘সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের’।
পরে, চরমপত্র পাঠ করেন শিশুশিল্পীরা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে সমর্পণকলা কেন্দ্র। তাঁরা ‘জনতার সংগ্রাম চলবে’ গানে নৃত্য পরিবেশন করেন।
সবশেষে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীতদল ‘শোন একটি মুজিবের থেকে’। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ডালিয়া আহমেদ।
এর আগে সকালে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় কবিকন্ঠে কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান। এতে কবিতা পাঠ করেন, গোলাম সারোয়ার, আবৃত্তিকার ইকবাল খোরশেদ, মাশকুর-এ -সাত্তার কল্লোল, আহসান উল্লাহ তমাল, মাহমুদা আক্তার, লায়লা আফরোজ, রেজিনা ওয়ালী লীনা, মিজানুর রহমান সজল এবং কাদের তালুকদার।
এরপর জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাডেমির পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।