loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • মেট্রোরেলের উত্তরা-টঙ্গীতে পাঁচটি স্টেশন হবে

  • লেভাকুজেন প্রথমবার অপরাজিত থেকে বুন্দেসলিগা শেষ করলো

  • ট্রফি হাতে লিগ শিরোপা উদযাপন করলো বসুন্ধরা কিংস

  • মেসির প্রত্যাবর্তন, শেষ মুহূর্তের গোলে মায়ামির জয়

  • বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ

আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো কোচ মেনোত্তি আর নেই


আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো কোচ মেনোত্তি আর নেই

আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে ১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতানো কোচ সিজার লুইস মেনোত্তি আর নেই। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশন (এএফএ) এক বিবৃতিতে মেনোত্তির মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছে। মেনোত্তি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তিনি লোকচক্ষুর আড়ালেও ছিলেন দীর্ঘদিন। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তিনি মৃত্যুর আগে রক্তশূন্যতায় ভুগে প্রায় মাসখানেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

’৭৮ সালের বিশ্বকাপ জয়কে এখনো আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও আনন্দদায়ক জয় হিসেবে দেখা হয়। মেনোত্তি ছিলেন সেই শিরোপা-জয়ের মূল কারিগর।

মেনোত্তির আর্জেন্টিনা সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাঁর হাত ধরেই এই বিশ্বকাপের আগের বছর আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার। কিন্তু তিনি ১৭ বছর বয়সী ম্যারাডোনাকে ’৭৮ বিশ্বকাপে দলে নেননি। তিনি আর্জেন্টিনার একটি ক্রীড়া সাময়িকীকে এর কারণও ব্যাখ্যা করেছিলেন, ‘যেটা আমাকে করতেই হতো – সেটাই করেছি। তাঁর (ম্যারাডোনা) দেখভাল করাটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমি আসলে ডিয়েগোতে মুগ্ধ ছিলাম। সে ছিল একদমই তরুণ, খুবই ছোট।’

মেনোত্তি ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনার ক্লাব রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে। তিনি আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগ জিতেছেন ব্যোকা জুনিয়র্সের হয়ে। তিনি ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব নিউইয়র্ক জেনারেল্স ঘুরে পরের বছর যোগ দেন ব্রাজিলের সান্টোস-এ। তিনি সেখানে পেলের সতীর্থ ছিলেন।

চেইন স্মোকার মেনোত্তির ৩৭ বছরের কোচিং ক্যারিয়ার ছিল বর্ণাঢ্য। মেনোত্তি কোচিং ক্যারিয়ারে লম্বা চুল এবং চেইন-স্মোকিং স্বভাবের কারণেও বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমি কখনো নাপিতের কাছে যাইনি। নিজেই নিজের চুল কাটি।’ মেনোত্তির বয়স যখন ১৬ বছর, তখন তাঁর বাবা ক্যান্সারে মারা যান। বাবার মতো তিনিও চেইন-স্মোকার হয়েছিলেন। তিনি ধূমপান নিয়ে একবার বলেছিলেন, এটা ‘একাকীত্বে আমার বন্ধু।’ যাহােক,  ২০১১ সালে ফুসফুসের অস্ত্রোপচার করানোর পরে তিনি ধূমপান ছেড়ে দেন।

মেনোত্তির জন্ম লিওনেল মেসির জন্মশহর রোজারিওতে ১৯৩৮ সালে। খেলোয়াড়ি জীবনে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলা মেনোত্তি ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ১১ ম্যাচ খেলে দুই গোল করেন।

খেলা ছাড়ার পরে তিনি কোচিং ক্যারিয়ারে ১১টি ক্লাব ও দুটি দেশের জাতীয় দলের কোচের ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন নিজের দেশ আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বে। ১৯৯১-৯২ সালে সামলেছেন মেক্সিকো জাতীয় দলকে।

ছিপছিপে গড়নের জন্য ‘এল ফ্লাকো’ তকমা পাওয়া মেনোত্তি আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর পরের বছর অনূর্ধ্ব-২০ দলকেও উপহার দিয়েছেন যুব বিশ্বকাপ। জাপানে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন ম্যারাডোনা। গোল্ডেন বল জিতে সেই টুর্নামেন্টে মাধ্যমে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক ম্যারাডোনা। ফাইনালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দল। মেনোত্তির হাত ধরে বড়দের বিশ্বকাপের মতো যুব বিশ্বকাপও সেবারই প্রথম জিতেছিল আর্জেন্টিনা।

১৯৮২ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে আর্জেন্টিনার বিদায়ের মধ্য দিয়ে মেনোত্তির জাতীয় দলের কোচিং-অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।

মেনোত্তি ১৯৮৩ ও ৮৪ সালে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনাকেও কোচিং করিয়েছেন। ক্যাটালান ক্লাবটি তাঁর অধীনে ঐ সময় কোপা ডেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা জয় করে। ম্যারাডোনা তখন তাঁর অধীনে বার্সাতেই  খেলতেন। কে জানতো – মেনোত্তি বার্সার হয়েই কোচিং-ক্যারিয়ারের শেষ শিরোপা জিতবেন। বার্সেলোনা এক বিবৃতিতে মেনোত্তির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করা হয়েছে।

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেনোত্তির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

মেনোত্তির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনার ফুটবলের অন্যতম গ্রেট আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি সমবেদনা। শান্তিতে ঘুমান...।’

Loading...