বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র নব-নির্বাচিত সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, দেশের ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে। বিসিবি’র সভাপতি নির্বাচিত হবার পরে বুধবার (২১ অগাস্ট) শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফারুক বলেন, ‘লক্ষ্য অনেক বড়। দেশের ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের এক সাথে কাজ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। যেহেতু অনেক দিন ধরে এ-কাজটি চলছে, তাই অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের সেসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা একটি দেশ ও ক্রিকেট প্রিয় জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে চাই। কাজটি সহজ হবে যদি আমরা নিজেদেরকে একটি দল হিসেবে চিন্তা করি এবং আমরা যদি নির্দিষ্ট কাউকে বেশি অগ্রাধিকার না-দিয়ে দলকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই। আমরা যেন অন্য দিকে সরে না-যাই।’
জরুরি সভায় নাজমুল হাসান পাপন তাঁর পদ থেকে সরে যাওয়ার পরে প্রথম সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বোর্ডের আটজন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির পরিবর্তে এনএসসি’র মনোনীত বিসিবির পরিচালক হন ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম। সভাপতির পদ থেকে পাপন পদত্যাগ করায় বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ফারুককে সভাপতি নির্বাচিত করতে ভোট প্রদান করেন সভায় উপস্থিত পরিচালকরা।
ফারুক ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বিসিবি’র প্রধান নির্বাচক হিসাবে দু’বার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০৩-২০০৭ সালে প্রথম মেয়াদে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের দলে সুযোগ দিয়েছিলেন।
এরপর ২০১৩-২০১৬ সালে আবারও প্রধান নির্বাচক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ফারুক। কিন্তু তৎকালীন বিসিবি সভাপতি পাপন দুই স্তরের নির্বাচন প্যানেল তৈরি করলে পদত্যাগ করেন ফারুক। কারন নির্বাচক প্রক্রিয়ায় অযাচিত ক্ষমতা প্রয়োগ করেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
ফারুক বোর্ডে সকলকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে বদ্ধপরিকর । পাশাপাশি তিনি তাঁদের কাজের জবাবদিহির সুযোগও থাকবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি – কারো কাজে হস্তক্ষেপ করবো-না। তবে প্রত্যেকের কাজই কঠোর তদারকিতে থাকবে। আমরা সবাইকে বড় সাফল্যের জন্য সময় দেবো। কিন্তু যদি সাফল্য না-আসে, তাহলে এজন্য আপনাকে দায়ী হতে হবে। সভাপতি হিসেবে আমি কিছু উপদেশ দিতে পারি; তবে এমন নয় যে – নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে তা গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই – দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করুক ক্রিকেট দল। শুধুমাত্র ছোট-ছোট বিষয় নিয়ে আটকে থাকলে চলবে-না। আমাদের আরও বড় লক্ষ্যের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। আমি রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করতে পারি না। এখানে কতক্ষণ থাকবো – সেটিও জানি না। তবে ক্রিকেটই হবে সবকিছুর উর্ধ্বে।’
এমন একটি ব্যবস্থা ফারুক গড়ে তুলতে চান যাতে কোন দুর্নীতি করার সুযোগ না-থাকে। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ প্রক্রিয়ার বিপক্ষে প্রতিবাদ করে আমি বিসিবি থেকে পদত্যাগ করেছি। দুর্নীতির পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না। আমাদের একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, এমন একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে – যার মাধ্যমে কোনো দুর্নীতি করার সুযোগ থাকবে না।’
আইসিসি র্যাংকিং অনুযায়ী বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কোথায় দেখতে চান – এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক বলেন, ‘আগেই বলেছি, আমি ক্রিকেটকে সেরা জায়গায় দাঁড় করাতে চাই। হঠাৎ পাওয়া সাফল্যে আমি খুশি হয়ে যাবো, এমনটা নয়। আমরা যদি পাঁচটি প্রতিদ্বন্দিত্বাপূর্ণ ম্যাচ খেলার পর ষষ্ঠ এবং সপ্তম ম্যাচ জিততে পারি – এটিকেই সাফল্য মনে করবো।’
সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হাথুরুসিংহের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে ফারুক আহমেদকে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি আগের জায়গাতেই আছি। আমি যা বলেছি – সেটা থেকে সরে যাইনি (চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের পদে না-রাখা প্রসঙ্গে)। এখন আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জিনিস দেখতে হবে। কিভাবে কি করা দরকার, তাঁর চেয়ে ভালো কাউকে পাই কি-না, বা কাছাকাছি যারা ভালো করতে পারবে…এটা দেখব, তারপর কথা বলবো। আমি আসলে ওই স্ট্যান্ড থেকে সরিনি।’
হাথুরুসিংহে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেন। বিসিবি’র সঙ্গে তাঁর চুক্তি রয়েছে আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় কোচদের প্রসঙ্গও এসেছে। এ-ব্যাপারে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘লোকাল কোচ আমার মনে হয় – খুব ভালো আছে। তবে আমিই একমাত্র ডিসিশন মেকার হওয়া উচিত নয়। হয়তো আমার ওপর দায়িত্বটা বেশি। কারণ, আমি সিদ্ধান্ত নেবো। কিন্তু অন্যদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে।’