সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ৪৪৮-৬ ডি, ১১৩ ওভার (রিজওয়ান ১৭১*, শাকিল ১৪১, হাসান ২-৭০, শরিফুল ২-৭৭)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৬৫-১০, ১৬৭.৩ ওভার (মুশফিক ১৯১, সাদমান ৯৩, মিরাজ ৭৭, নাসিম ৩-৯৩)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ১৪৬-১০, ৫৫.৫ ওভার (রিজওয়ান ৫১, শফিক ৩৭, মিরাজ ৪-২১, সাকিব ৩-৪৪)
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৩০-০, ৬.৩ ওভার (জাকির ১৫*, সাদমান ৯*)
ফলাফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ-সেরা: মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে
বাংলাদেশ দল পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক টেস্ট জিতলো। টাইগাররা রাওয়ালপিণ্ডিতে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনে রোববার (২৫ অগাস্ট) পাকিস্তানকে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রথম ১০ উইকেটে টেস্ট ম্যাচ জিতলো। এছাড়া, টেস্ট ফরম্যাটে পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগাররা প্রথমবারের মতো জয় পেলো। বাংলাদেশ দল পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ১৩ বারের মোকাবেলা ১২টি ম্যাচে পরাজিত হয় এবং একটিতে ড্র করেছিল। বাংলাদেশ দলের টেস্ট ইতিহাসে ১৪৩ টেস্টে এটি বিংশতম জয়।
বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবারের ঐতিহাসিক টেস্ট জয় পেয়েছে। রাওয়ালপিণ্ডিতে রোববার (২৫ অগাস্ট) পাকিস্তানকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে অলআউট করে দিয়ে মাত্র ৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১০ উইকেট হাতে রেখেই টপকে যায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। জয়ের পথে জাকির করেছেন ১৫ রান। সাদমানের ব্যাট থেকে এসেছে নয় রান। আর তাতেই পাকিস্তানের মাটিতে তাঁদেরই বিরুদ্ধে অর্জিত হলো প্রথম টেস্ট বিজয়।
বাংলাদেশের এই জয় অনেকটা আকস্মিক। কেননা, চতুর্থ দিনের খেলা শেষেও এমন জয় হয়তাে কল্পনা করেননি ক্রিকেটপ্রেমীরা। চতুর্থ দিন শেষে পাকিস্তান ৯৪ রানে পিছিয়ে থাকলেও ব্যাটিং-স্বর্গে হাতে তখনো নয় উইকেট থাকায় ভাবা হচ্ছিল – এই টেস্টের পরিণতি ড্র। তবে বাংলাদেশের বোলাররা শেষ পর্যন্ত পঞ্চম দিনে বল করতে নেমে হিসেব বদলে দিয়েছেন।
বোলিংয়ে দিনের শুরুটা হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা করলেও পরের গল্পটা কেবলই স্পিনারদের। পাকিস্তান যেখানে পেসার দিয়ে সাজিয়েছে তাঁদের বোলিং আক্রমণ, সেখানে একাদশে দুই স্পিনার রাখাকে অনেকে বিলাসিতা মনে করেছিলেন। তবে শুরুতে ভুল মনে হলেও দিনশেষে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক স্পিনাররাই। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে কাবু হয়েছেন পাকিস্তানের সাত ব্যাটার। রিজওয়ান ছাড়া সুবিধা করতে পারেননি কেউই।
চতুর্থ দিনে ২৩ রানে ব্যাট করতে নেমে ৬৪ রানে চার উইকেট হারালেও পাকিস্তানকে টানছিলেন রিজওয়ান। প্রথম ইনিংসে ১৭১ রান করে বাংলাদেশকে চাপে রাখা মোহাম্মদ রিজওয়ান এদিনও বেশ ভুগিয়েছেন টাইগার বোলারদের। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একাই দলকে টেনেছেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল – শেষ পর্যন্ত না রিজওয়ান টেইলন্ডারদের নিয়ে বাংলাদেশের জয় রুখে না-দেয়! যাহােক, শেষ পর্যন্ত সেটি হতে দেননি সাকিব-মিরাজ জুটি।
ফিফটির পরপরই মিরাজকে সুইফ খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্প ভাঙে রিজওয়ানের। ৫১ রানে ফেরেন রিজওয়ান। সেই সঙ্গে শেষ হয় পাকিস্তানের শেষ স্বীকৃত ব্যাটারের উইকেট। প্রতিরোধ গড়ার স্বপ্ন ভাঙে পাকিস্তানের। প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেটে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করা পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস থামে মাত্র ১৪৬ রানে। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০ রান - যা কোনো উইকেট না-হারিয়েই টপকে যান জাকির-সাদমান।
দলের জয়টা মূল ভিত গড়ে দেন মুশফিকুর রহিম। তিনি প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তার আগে প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করেছেন ওপেনার সাদমান, ৫০ করেছেন মুমিনুল। লিটন ৫৬ ও মিরাজ ৭৭। যার সুবাদে পাকিস্তানের ৪৪৮ রান টপকে ১১৭ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ এই জয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে দুই ধাপ এগিয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠলো। পাঁচ ম্যাচে দুই জয় ও তিন পরাজয়ে ৪০ শতাংশ পয়েন্ট অর্জিত হয়েছে টাইগারদের। পাকিস্তান টেস্ট হেরে এক ধাপ পিছিয়ে অষ্টম স্থানে নেমে গেলো। ছয় ম্যাচে দুই জয় ও চার পরাজয়ে ৩০.৫৬ শতাংশ পয়েন্টে রয়েছে পাকিস্তান। টেবিলের শীর্ষে রয়েছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।
দুই দল আগামী ৩০ অগাস্ট থেকে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলবে রাওয়ালপিন্ডিতেই।