অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে শিগগিরই সংস্কারের চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণা করবেন। এই রূপরেখার মধ্যে সংস্কারের কর্মপরিকল্পনা ও ক্ষমতা হস্তান্তরের উপায়সমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শনিবার (৩১ অগাস্ট) জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, হেফাজত ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে মাহফুজ আলম বলেন, ‘মতবিনিময়কালে ড. ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সকল রাজনৈতিক এবং প্লাটফর্মসহ সবার মতামতের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশের জন্য শিগগিরই রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা উপস্থাপন করতে পারবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য তিনি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন; যার মাধ্যমে একটা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য তৈরি হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মাহফুজ আলম বলেন, জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। জনগণই তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। তবে এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার হলো – সংস্কার করা। আগে সংস্কার করতে হবে। সংস্কারের প্রস্তাবনার ভেতর থেকে ঠিক হবে – সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে। মূলত সংস্কারের প্রস্তাবনা এবং প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরের আসবে। আমরা আশা করি, এটা একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা হবে।
রূপরেখা কি সংস্কার, না-কি ক্ষমতা হস্তান্তরের – এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এতে সবই থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা মূলত সংস্কারের রূপরেখা দেবেন। সংস্কারের ভেতরেই অন্তর্ভূক্ত আছে কখন, কিভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।’
বিশেষ সহকারী বলেন, ‘আমরা জনগণের গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দায়িত্ব পেয়েছি। এখানে বারবার বলা হচ্ছে – রাষ্ট্র মেরামত করার। প্রস্তাবনার ভেতর দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো জানাবেন – তাঁরা রাষ্ট্র মেরামত করার জন্য সরকারকে যৌক্তিক কতদিন সময় দেবেন; তারপর ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্ন আসবে। সংস্কারের ভেতরই ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছেন, ‘রাষ্ট্র মেরামত করার ক্ষেত্রে জাতির জন্য এখন সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগের উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে, যাতে আমরা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার করতে পারি এবং বাংলাদেশের মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারে।’
শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে জানতে চেয়েছেন – বিদ্যমান সংবিধানের সংশোধন, না-কি সংবিধান পুনরায় প্রণয়ন করতে চান। প্রেস সচিব জানান, অনেক নেতা একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি সরকার-প্রধান হতে পারবেন-না – এমন প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার চেয়েছেন অনেকে।
হেফাজত ইসলামের নেতারা শাপলা চত্বরে হেফাজতের আন্দোলন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরসহ শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে হেফাজত ইসলামের যেসব কর্মী হতাহত হয়েছেন, তার পুনঃতদন্ত চেয়েছেন – যেটি অব্যশই স্বচ্ছভাবে হতে হবে। এছাড়া শিক্ষানীতির আমূল সংস্কার, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনসহ বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন বিভিন্ন দলের নেতারা।
শফিকুল আলম জানান,আলোচনায় অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং সবাই আশাবাদী যে – ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটা আমূল সংস্কার দেখা যাবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক যে-সব সংকট রয়েছে – এগুলো রাজনৈতিক নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছেন। সরকার-প্রধান বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।