টেনিসবিশ্ব একটু আগেভাগেই রাফায়েল নাদালের শেষ ম্যাচটি দেখে ফেললো । তাঁর দল স্পেন ডেভিস কাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে। নাদালও শেষটা রাঙাতে পারেননি, হেরে গেছেন নিজের শেষ ম্যাচে। তিনি ডেভিস কাপে স্পেনের হয়ে প্রথম সিঙ্গেলসে নেদারল্যান্ডসের বটিচ ফন ডি জান্ডশুল্পের কাছে হেরেছেন। তাঁর উত্তরসূরি স্পেনের কার্লোস আলকারা আরেকটি সিঙ্গেলসে জয় পাওয়ায় আরও একটি ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা ছিল নাদালের। তবে ফল-নির্ধারণী ডাবলসে আলকারা ও মারসেল গ্রানোয়ার্স নেদারল্যান্ডসের বটিচ ফন ডি জান্ডশুল্প ও ওয়েসলি কুলহফের কাছে হেরে গেলে কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে স্পেনের বিদায় নিশ্চিত হয়। সঙ্গে নিশ্চিত হয় নাদালের টেনিস থেকে বিদায়ও।
স্পেনের মালাগা স্টেডিয়ামের বাইরে ইংরেজিতে বড় করে লেখা ছিল – গ্রাসিয়াস রাফা; অর্থাৎ ‘ধন্যবাদ রাফা’। রাফা মানেই – রাফায়েল নাদাল। মালাগা নাদালকে ধন্যবাদ জানানোর কারণ, নাদাল বুধবার (২০ নভেম্বর) ক্যারিয়ারের ১,৩০৭তম এবং শেষ ম্যাচ মালাগায় খেললেন। এরপর দু’টি শব্দে তাঁকে বিদায় জানালো স্পেনের মনোরম সমুদ্রসৈকতের শহর মালাগা।
নাদালের বিদায়ের মধ্য দিয়ে স্পেনের টেনিস আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন হলো। ডেভিস কাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের কাছে স্পেনের হার যে-ম্যাচে, সেই ম্যাচটিই রাফার ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিলো; আর পেছনে পড়ে রইলো ২২টি গ্র্যান্ড স্লাম খেতাব, ৯২টি এটিপি ট্যুর টাইটেল, দু’টি অলিম্পিক স্বর্ণপদক, চারটি ডেভিস কাপ ফাইনাল জয়, ২০৯ সপ্তাহ বিশ্বের এক নম্বরের স্থান নিজের দখলে রাখা এবং টানা ৯১২ সপ্তাহ শীর্ষ দশে অবস্থান করার গরিমা।
নাদালের পরাজয় এবং স্পেনের বিদায় নেওয়ার বিষয়টা মাথায়ই ছিল-না মালাগার পালাসিয়ো দে ডিপোর্টেস এরিনার প্রায় কুড়ি হাজার সমর্থকের। ‘ভামোস রাফা’ শব্দে মুখরিত ছিল স্টেডিয়াম। নাদাল কথাই বলতে পারছিলেন-না; সতীর্থরাও ছিলেন আবেগপ্রবণ।
পরে বললেন, ‘আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এত ভালোবাসা পেয়েছি যে – বুঝতে পারছি-না, কোথা থেকে শুরু করবো।’ একটু থেমে বললেন, ‘২০ বছরের ক্যারিয়ারে বারবার আপনারা সাহস জুগিয়েছেন, পয়েন্ট জিততে সাহায্য করেছেন, কঠিন মুহূর্তে আমার পাশে থেকেছেন; আমি লড়াইয়ের সাহস পেয়েছি। স্পেন ও গোটা বিশ্বে সমর্থকদের ভালোবাসা পেয়ে আমি আপ্লুত।’
নাদাল বলেছেন, জোর করে নিজেকে না-টেনে পরের প্রজন্মের জন্য দরজা খুলে দেওয়ার দরকার ছিল। তিনি বলেছেন, ‘সত্যি কথাটা হলো, কোনো ক্রীড়াবিদই চায়-না – এই মুহূর্ত কোনো দিন আসুক। আমি টেনিস খেলতে গিয়ে কখনো ক্লান্ত হই-না; কিন্তু শরীর আর চাইছে-না। পরিস্থিতি মেনে নিতেই হবে। আমি কৃতজ্ঞ, নিজের পছন্দের একটা বিষয়কে পেশা বানাতে পেরেছি। যতদিন ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশিদিন খেলেছি।’
কোর্টের মাঝে নাদাল দাঁড়িয়ে কথা বলার পরে বড় পর্দায় ভেসে উঠলো – একের পর এক ভিডিওবার্তা। সেখানে ছিলেন – রজার ফেদেরার, নোভাক জোকোভিচ, অ্যান্ডি মারে, সেরেনা উইলিয়ামস, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, ইকার ক্যাসিয়াস, ডেভিড বেকহ্যাম, রদ্রিসহ আরও অনেক তারকাই।