সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে আমাদের প্রধান দায়িত্ব বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একদেশদর্শী না-হয়ে জাতীয় চিন্তার ক্ষেত্রে ভেঙে পড়া সেতুগুলো মেরামত করা, যেন দেশের সব মানুষ তাঁর অধিকারের ভাষা খুঁজে পায়। উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাওয়া বাংলা একাডেমির অধিকার। কারণ এই প্রতিষ্ঠান, বাঙালির প্রাণের প্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষের কাছে বইমেলা ও অভিধান – এই দুই বিষয়ের দ্বারা একাডেমি ব্যাপকভাবে পরিচিত হলেও গত প্রায় সাত দশক ধরে বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছে। তিনি বাংলা একাডেমির ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ-কথা বলেন। খবর – স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
বাংলা একাডেমির ভূমিকা অনেক – এ-কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আর্থিক ক্ষেত্রে নানাভাবে একাডেমি সরকারি সহায়তার উপর নির্ভরশীল হয়তো; তবে সরকার কোনো অলীক ধারণা নয়। বাংলাদেশের জনগণের কষ্টার্জিত অর্থেই আমরা দেশের মানুষের ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার জন্য বাংলা একাডেমিকে মনোনীত করেছি।
এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মৃতির প্রতি এবং বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বিকেলে ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসা ‘বাঙলা গবেষণালয়-সংক্রান্ত বিচিত্র দুর্ভাবনা’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন ।
একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে। নানা সময়ে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় চাপে একাডেমি হয়তো স্বাধীনভাবে তার কাজ পরিচালনা করতে বিরুদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পরে পরিবর্তিত বাস্তবতায় সবারই প্রত্যাশা হলো – বাংলা একাডেমি স্বাধীনভাবে তার উপর অর্পিত জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে। এ-বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।
অধ্যাপক মনসুর মুসা বলেন, বাংলা একাডেমি একসময়ে বাংলাভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনায় সম্পৃক্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনায় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছিল। সম্প্রতি দেশে একটি যুগান্তকারী আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে – যাকে জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নামে অভিহিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সূত্রে সংবিধানে সংস্কার, রাষ্ট্রসংস্কার, আরও বহুবিধ সংস্কারের ধারণা প্রতিনিয়ত আলোচিত হচ্ছে এবং এই সমস্ত সংস্কারের সঙ্গে ভাষার যেমন ওতপ্রোত-সম্বন্ধ, তেমনি ভাষার সূত্রে সমস্ত সংস্কারের সঙ্গেই বাংলা একাডেমিরও নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এক সময় পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে একাডেমিকে এক ধরনের অস্তিত্বগত লড়াই করতে হয়েছে। আবার স্বাধীন বাংলাদেশে দুর্বল আর্থিক কাঠামোসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে এটা সত্য যে, গত প্রায় সত্তর বছর ধরে বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রশ্নে নিরাপোষ থেকে তার সাধ্যমতো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক সায়েরা হাবীব অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।