loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • ঢাকা মেট্রোরেল মে মাসে শুক্রবার সকাল থেকে চলবে

  • চিটাগংকে হারিয়ে বিপিএল ফাইনালে বরিশাল

  • অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিনে ৩২টি নতুন বই এসেছে

  • চট্টগ্রাম ‘ফ্লাওয়ার ফেস্ট’-এর ‘গালা নাইট কনসার্ট’ ৬ ফেব্রুয়ারি

  • বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও সংযোগ অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা

প্রধান উপদেষ্টা সবার মতামতের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র করতে চান


প্রধান উপদেষ্টা সবার মতামতের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র করতে চান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ৫ অগাস্ট ছিল আমাদের ঐক্যবন্ধ হওয়ার প্রতীক। ওই দিনের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। তাই এখন কিছু করতে হলে সবার মতামতের ভিত্তিতে করতে হবে। কাজেই জুলাই ঘোষণাপত্র সবার মতমতের ভিত্তিতে করতে চাই। তিনি বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের শুরুতে এ-কথা বলেন। খবর – স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে দেখা হলে, বসতে পারলে খুব ভালো লাগে; মনে সাহস পাই। কারণটা পরিষ্কার, এই সরকারের জন্ম হয়েছে ঐক্যের মাঝখানে; এটি ঐক্যের দ্বারা সৃষ্টি। যখন আমরা নিজেরা নিজেরা কাজ করি, যখন দেখি একা পড়ে গেছি, আশেপাশে কেউ নেই আপনারা, তখন একটু দুর্বল মনে হয়। যখন আবার সবাই একসঙ্গে কাজ করি, তখন মনের মধ্যে সাহস বাড়ে, মনে হয় একতাবদ্ধ আছি। একতাতে আমাদের জন্ম; একতাই আমাদের শক্তি।’

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাঝখানে একদিন ছাত্ররা এসে বললো, তাঁরা একটা ঘোষণপত্র দেবে; আমাকেও সেখানে থাকতে হবে। বুঝতে চাইলাম – কি ঘোষণাপত্র দিচ্ছে, তাঁরা বললো। আমি বললাম, এটা হবে-না। আমার চাওয়াটা হবে-না, তোমাদের চাওয়াটাও হবে-না। তোমরা যদি ৫ অগাস্টে ফিরে যেতে চাও, সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতে যা হয়েছিল – সেটাকে রিক্রিয়েট করতে হবে। একা এটা করা যাবে-না। ওইদিনের পুরো অনুভূতিটাই ছিল একতার অনুভূতি। কেউ বলে নাই – তুমি অমুক, তুমি অমুক। কাজেই তোমরা করতে চাইলে সবাইকে নিয়েই করতে হবে – এটা পরিষ্কার। না-করলে এটা ঠিক হবে না।’

মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র সবার মতামতের ভিত্তিতে করার ওপর গুরুত্বারোপ করে আরও বলেন, ‘শুধু ছাত্ররা করলে, যে-একতা দিয়ে তোমরা ৫ আগস্ট সৃষ্টি করেছিলে সেটার অবমাননা হবে। তাঁরা আমার কথায় খুব খুশি হয়নি। কিন্তু ক্রমে তাঁরা বুঝলো, ৫ অগাস্ট রিক্রিয়েট করতে হলে এভাবে করতে হবে। সেই কথা থেকে এই আলাপ শুরু। আজকের আলোচনা একে কেন্দ্র করেই হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে করতে না-পারলে উদ্দেশ্যে ব্যাহত হবে; দরকারও নেই। ঐক্যের মাধ্যমে করলে সবার মনে সাহস আসবে।’

সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এক থাকলে সবাই ভাববে – আমরা তো জেগে আছি এখনও; আমরা ভোতা হয়ে যাইনি। আমাদের অনুভূতি ভোতা হয়নি এখনও, এখনও চাঙ্গা আছে। আমরা জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ আছি।’

প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমি যতদিন আছি, একতা নিয়ে থাকবো। কাজেই সেই পথেই আমাদের চলতে হবে। যখন আপনাদের (রাজনৈতিক নেতারা) সঙ্গে বসি, তখন সেই সাহসটা দেন। আজকে আপনাদের দেখে খুবই সাহসী মনে হচ্ছে। ৫ অগাস্টের কথা স্মরণ করে আমরা একতাবদ্ধ আছি। সেই একতাকে কিভাবে মানুষের সামনে প্রকাশ করবো, ৫ অগাস্টকে রিক্রিয়েট করবো – সেটি এখন আলাপের বিষয়বস্তু হবে।

তিনি ঘোষণাপত্রের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, এটা নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে দেশের সামনে আসতে পারলে তা দেশের জন্য ভালো। আন্তর্জাতিকভাবেও ভালো। সবাই দেখবে যে – এই জাতির মধ্যে বহু ঠোকাঠুকি হয়েছে, কিন্তু নড়ে-না; স্থির হয়ে আছে, শক্ত হয়ে আছে। একতার বিষয়টি সারাদুনিয়াকে জানাতে চাই; দেশবাসীকে জানাতে চাই।

বৈঠকে সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সাথে একসঙ্গে বসায় সারা জাতি আজ সাহস অনুভব করবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং সুন্দরভাবে এর সমাধানও হয়েছে।’

তিনি গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাবলি স্মরণ রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অভ্যুত্থানের সময় যে-যেখানে ছিলাম, তখন আমাদের মনের মধ্যে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমরা কোনোরকম সেই মুহূর্তে ফিরে যেতে পারি কি-না, ঐতিহাসিকভাবে মুহূর্তটি যেন হারিয়ে না-যায়। ফিরে যাওয়া বলতে বলছি, আমরা কিসের জন্য এটা করেছিলাম, কি উন্মাদনা আমাদের মধ্যে ছিল; সেই উন্মাদনা রেকর্ড করে রাখা, যাতে গোটা জাতি সেই মুহূর্তের বিষয় কি ছিল – তা ভবিষ্যতে জানতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সেখানে বর্তমানের অনেক কথা এখানে ঢোকাবেন-না, অতীতের কথা ঢোকাবেন-না। ওই দিনের মুহূর্তে যে আকাঙ্ক্ষা, যে-যাতনা, যে-উৎসাহ, বিপ্লবী অনুভূতি ছিল – সেগুলো যেন আমরা তুলে ধরি। কিছু বিষয় উচ্চারিত ছিল, কিছু অনুচ্চারিত ছিল; কিন্তু মনের মধ্যে ছিল। কাজেই সেগুলোকে রেকর্ড করা।

ড. ইউনূস জুলাই বিপ্লবের ঘোসণাপত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, যে-নামেই এটাকে অভিহিত করেন, সে-নামটা বের করতে পারবো – আজকে সবাই আমরা সে-বিষয়ে একমত হলাম। মূল কথা আসল জিনিসটা যেন হারিয়ে না যায়। যে জিনিসটা অনন্য হয়ে আছে, সেটাকে আমরা লিখিতভাবে রাখি। এমন না হয় আমরা চলে গেলে কেউ মনে করতে পারল না কী হয়েছিল। এটা কি হঠাৎ করে হয়েছিল, নাকি এর পেছনে অনেক জিনিস ছিল, যা ওই মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়েছিল।

বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদল ও অংশীজনরা অংশগ্রহণ করেন।

Loading...