বিশিষ্ট লেখক, শিক্ষাবিদ ও ফোকলোর বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের ১২১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি গত ৮ই মাঘ ১৪৩১/২২শে জানুয়ারি ২০২৫ বিকেল চারটায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এক সেমিনার আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইম রানা মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের শিল্পভাবনা: নৃ-সংগীতবিদ্যার আলোকে শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ড. সাইম রানা বলেন, নৃ-বিদ্যা সমাজের গভীরে প্রবেশ করে ও প্রান্তিক সেই মানুষদের সমস্যা চিহ্নিত করে, তার সমাধান করতে গিয়ে মানবিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে মধ্যস্থতা করে। মনসুরউদ্দীনের মধ্যে সেই মানবিক প্রয়াস উঠে এসেছে তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধে। লোকগীতি বা গাথার ভেতর দিয়ে তিনি বাঙালি জাতিসত্তার ধমীর্য় ও রাজনৈতিক অবস্থানকে খুঁজেছেন। পাশাপাশি তৎকালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর বাঙালি মুসলমাননের জাতিভিত্তিক আত্মপরিচয়কে উন্মোচিত করার একটি সূক্ষ্ম ও উদার প্রচেষ্টাও ছিল।
আলোচকদ্বয় বলেন, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন লোকবাংলার গভীরে-গহনে প্রবেশ করে আহরণ করেছেন অতুলনীয় সব মণিমুক্তা। আর সেসব তিনি ‘হারামণি’নামের কালজয়ী সংকলনে উপহার দিয়েছেন আমাদের। তিনি লোকায়ত বাংলার অন্তরের খবর রাখতেন। তাঁর শিল্পভাবনার বলয়জুড়ে ছিল মাটির স্বর ও সুর। তাঁরা বলেন, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের আমৃত্যু সাধনা বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতির পরিসরকে যেমন বিস্তৃত করেছে, তেমনি নৃসংগীতবিদ্যার আলোকে তাঁর শিল্পভাবনাকে নতুন করে অবলোকনের প্রাসঙ্গিকতাও তিনি তৈরি করেছেন।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন তাঁর সমগ্র জীবন নিবেদন করেছেন লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির অনুসন্ধান, সংগ্রহ এবং চর্চায়। তিনি ‘হারামণি’সংকলনের কারণে খ্যাতি লাভ করলেও সাহিত্য ক্ষেত্রে তাঁর আরও অনেক অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভিত্তি যে-লোকায়ত চেতনার উপর দাঁড়িয়ে আছে, তাঁকে মজবুত করতে মনসুরউদ্দীনের মতো সাধকরা যে-ত্যাগ স্বীকার করেছেন – তার কোনও তুলনা নেই।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. সাহেদ মন্তাজ।
– সংবাদ বিজ্ঞপ্তি