ফাইনালে উঠতে চিটাগং কিংসের শেষ বলে প্রয়োজন ছিল চার রান। খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ অনেকটা সময় নিয়ে ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি কাজে আসেনি। চিটাগংয়ের অলরাউন্ডার আলিস আল ইসলাম মুশফিক হাসানের স্টাম্পের বাইরের বলটিকে সীমানাছাড়া করেন। আর তাতেই চট্টলার দলটি দুই উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টির ফাইনালে। পক্ষান্তরে, খুলনাকে হতাশা সঙ্গী করে বিদায় নিতে হয়।
আলিস শেষ ওভারের তৃতীয় বলে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলে চার মারেন শরিফুল ইসলাম। পরের বলে তিনি আউট হয়ে গেলে ফের মাঠে নেমে যান আলিস। সামনে এক বলে চার রান করার চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জে তিনি দারুভাবে উতরে গেলেন।
চিটাগং দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৬৪ রান তাড়া করতে নেমে ১২ ওভারেই ১০৫ রান করে ফেলেছিল। হাতে তখনো আট উইকেট। শেষ আট ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫৯ রান; ওভার প্রতি সাত রানের কিছু বেশি করলেই হতো।
৩৫ রানে দুই উইকেট খোয়ানোর পরে হুসেইন তালাত এবং ওপেনার খাজা নাফে-র জুটিতে কক্ষপথে ছিল তাঁরা। তৃতীয় উইকেটে এই দুই ব্যাটার মিলে যোগ করেন ৪৮ বলে ৭০ রান। কিন্তু ইনিংসের ত্রয়োদশ ওভারের প্রথম বলেই ঘটে ছন্দপতন। নাসুমের বলে ক্যাচ তুলে দেন তালাত। ২৫ বলে পাঁচ চার এবং এক ছক্কায় ৪০ রান করা এই ব্যাটারের ক্যাচ নিতে ভুল করেননি অ্যালেক্স রস। আর ষোড়শ ওভারের প্রথম বলে মুশফিক হাসান গুঁড়িয়ে দেন নাফে-র স্টাম্প। ৪৬ বলে চার চার ও তিন ছক্কায় চিটাগংয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করা এই পাকিস্তানি ব্যাটারকে আউট করে জোরেশোরেই ম্যাচে ফিরেছিল খুলনা।
কিন্তু চিটাগংয়ের নিচের সারির ব্যাটারদের তখনো খেলা দেখানো বাকি ছিল। আরাফাত সানি ও আলিস আল ইসলাম মিলে চিটাগংয়ের আশা জাগিয়ে রাখেন। তাঁরা খুলনার বোলারদের হতাশা বাড়িয়ে নিয়মিত বাউন্ডারি আর প্রান্ত বদল করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়েছেন।
অবশ্য শেষ ওভারে বড় এক চ্যালেঞ্জই ছিল তাঁদের সামনে; ছয় বলে দরকার ছিল ১৫ রান। চিটাগংয়ের ব্যাটাররা তিন চারের সঙ্গে একটি করে সিঙ্গেল ও ডাবলে সেই হিসাব মিলিয়েছেন পুরোপুরিই।
খুলনার পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও মুশফিক হাসান। তবে তাঁদের এই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিফলে গেছে চিটাগংয়ের বোলারদের ব্যাট হাতে বীরত্বের কারণে।
চিটাগং এদিন টস জিতে খুলনাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। দলটির পেসার বিনুরা ফার্নান্দো ও স্পিনার আলিস আল ইসলাম শুরু থেকেই খুলনার ব্যাটারদের চাপে রেখেছিলেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই খুলনার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজকে (২) বোল্ড করেন বিনুরা। পরের ওভারে আলিসকে ফিরতি ক্যাচ দেন ছয় বল খেলেও রানের খাতা খুলতে না-পারা অ্যালেক্স রস। পাওয়ার প্লে-তে এই দুই উইকেট খুইয়ে ৩০ রানের বেশি করতে পারেনি খুলনা।
প্লে-অফের আগে খুলনায় যোগ দেওয়া হেটমায়ার এদিন ছিলেন আগ্রাসী ভূমিকায়। ঊনবিংশ ওভারের শেষ বলে সাজঘরের পথ ধরার আগে তাঁর ব্যাটে এসেছে ৩৩ বলে ছয় চার ও চার ছক্কায় ৬৩ রান। তাঁদের ব্যাটিংয়েই শেষ পর্যন্ত ১৬৪ রান পর্যন্ত পৌঁছায় খুলনা।
চিটাগংয়ের পক্ষে ২৭ রানের বিনিময়ে সর্বোচ্চ দুই উইকেট শিকার করেছেন বিনুরা ফার্নান্দো।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাতটায় একই মাঠে বিপিএল ফাইনালে চিটাগং কিংস মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশালের। এই দুই দল এর আগে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। সেই ম্যাচে বরিশাল নয় উইকেটে চিটাগংকে পরাজিত করেছিল।