জুলাই বিপ্লবে গণহত্যায় জড়িতদের বিচার করার বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনাদেরকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, যাঁরা গণহত্যায় জড়িত ছিল, যাঁরা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, যাঁরা ইতোমধ্যে হত্যাকারী হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃত – তাঁদের বিচার এদেশের মাটিতেই হবে।’ প্রধান উপদেষ্টা মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ-কথা বলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের রিপোর্টের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনারা জানেন, পতিত স্বৈরাচারের নিপীড়নের বর্ণনা উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের রিপোর্টে। গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।’
এই রিপোর্টকে সরকার স্বাগত জানায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদনে যে সুপারিশ করা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার সে সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে শেখ হাসিনা নিজেই বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন । বিগত সরকার, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী গোষ্ঠী ও সংগঠন একত্রিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু। বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকার কারণে, আমাদের জুলাই-কন্যারা নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের রিপোর্ট পড়ে সবার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। কি ভয়াবহতা! কিভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশের নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার পর লাশ লুকিয়ে ফেলার নির্দেশ দিতে পারে! ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য তিনি পৃথিবীর সকল নিষ্ঠুরতা ছাড়িয়ে গেছেন – এটাই জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তরুণদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সবাই জাতিসংঘের মহাসচিবকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন।