অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সফরসঙ্গী হওয়া বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী খেলোয়াড় কাতার সফরকে স্বপ্নের মতো বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা সেখানে কাতার ফুটবল স্টেডিয়াম, অলিম্পিক জাদুঘরসহ বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখেছেন। নারী খেলোয়াড়রা দেশের ক্রিকেট-ফুটবল নিয়ে কাতার ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের ধারণাও দিয়েছেন। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নিজেদের অভিজ্ঞতা জানান – কাতার সফর করা বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার, ফুটবলার শাহেদা আক্তার রিপা, ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার ও শারমিন সুলতানা। খবর – স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
আফঈদা খন্দকার বলেন, ‘আমরা খুবই খুশি হয়েছি যে, প্রধান উপদেষ্টার সাথে সফরসঙ্গী হিসেবে আমরা কাতারে গিয়েছি। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন থেকে আমরা চারজন যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি – এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। আমাদের দেশের ফুটবল বা ক্রিকেট বা অন্যান্য যে-সব খেলা আছে, সেগুলো যেন আমরা কাতারের সামনে তুলে ধরতে পারি। তাঁরা আমাদের সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি এবং সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।’
ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার বলেন, ‘আমরা যখন দেশের বাইরে যাই, তখন ভিআইপি সুবিধা পাই। কিন্তু এবার প্রধান উপদেষ্টার সাথে আমরা গিয়েছি, আমরা অন্যরকম সুবিধা পেয়েছি। আমরা সেখানে অনেক ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি। প্রধান উপদেষ্টার অনেক অনুষ্ঠান নির্ধারিত ছিল; সেখানে অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য শোনার জন্য অনেক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি । আমাদের যে-ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে – সেটি বলে প্রকাশ করা যাবে-না। আমরা এই সফর নিয়ে অনেক বেশি খুশি।’
দোহায় আর্থনা সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে এক বৈঠকে বাংলাদেশের নারী খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিও দেন কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ বিনত হামাদ আল থানি।
কাতারে ফুটবল বেশি জনপ্রিয়। ক্রিকেট বিষয়ে খুব বেশি ধারণা নেই তাঁদের। কাতারের স্কুল পর্যায়ে ক্রিকেট শুরু হয়েছে। কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দকে ক্রিকেট সর্ম্পকে ধারণা দেন দুই ক্রিকেটার ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার ও শারমিন সুলতানা।
এ-বিষয়ে শারমিন সুলতানা বলেন, ‘আসলে সেখানে ক্রিকেট জনপ্রিয়-না। ক্রিকেট নিয়ে তাঁদের ধারণা কম। আমাদের কথা শুনে তাঁরা ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠে। শেখ হিন্দ বলেছেন, তাঁরাও ক্রিকেট শুরু করবেন। তাঁরা বর্তমানে স্কুল পর্যায়ে ক্রিকেট শুরু করেছে। তাঁরা চিন্তা-ভাবনা করছেন, কিভাবে পরের ধাপে যেতে পারে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে পারে। এটি নিয়ে তাঁরা বেশি উৎসাহী ছিল।’
২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাতারের লুসাইলের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদরা ঐ স্টেডিয়ামও ঘুরে দেখেছেন। লুসাইল স্টেডিয়ামে অভিজ্ঞতা নিয়ে আফঈদা বলেন, ‘লুসাইল স্টেডিয়ামের সব কিছুই আমরা ঘুরে দেখেছি। মাঠে ঘুরেছি। ঐ মাঠে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতে উল্লাস করেছে। আমরা ড্রেসিংরুমেও গিয়েছি। সেখানে ওয়ার্ম-আপের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। ড্রেসিংরুমের খেলোয়াড়দের অন্যান্য সুবিধাগুলো দেখে আমাদের খুবই ভালো লেগেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
চার খেলোয়াড়ের কাতার সফর ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, চার ক্রীড়াবিদের কাতারে যাওয়ার মধ্য দিয়ে একটি আলাদা মাত্রা পেয়েছে। সাধারণত সরকারি সফরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়ে থাকে। এবারও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবার যদি ক্রীড়াবিদরা যদি না-যেত, তাহলে ক্রীড়া নিয়ে আলোচনা হতো-না। আমাদের এই ক্রীড়াবিদরা এবার সফরে যাওয়াতে তাঁদের নিয়ে আলাদাভাবে আগ্রহ সৃষ্টি এবং আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি একটি শুরু। কাতারে যারা স্পোর্টস কর্মকর্তা আছেন, তাঁদের সাথে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিজে সরাসরি কথা বলেছেন। কাতার ফাউন্ডেশন স্পোর্টসের জন্য অনেক বড় ফ্যাক্টর।
সারাবিশ্বে ক্রীড়াঙ্গনে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের বিনিয়োগ আছে এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, এই সফরের মধ্যে দিয়ে তাঁদের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হল, এই যোগাযোগের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে আমরা ক্রীড়াক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা পাবো।’