এম এম মঞ্জুর মোর্শেদ
আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের কন্ঠকে মিষ্টি বা অনেক সুরেলা আমি বলি না, শুধুমাত্র দুটো গানে উনার গায়কী মন ছুঁয়ে গেছে (‘আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি’ আর ‘বাংলাদেশ’)। তাহলে অমরত্ব ছুঁয়ে ফেলা এই গায়কের অন্য গানগুলোর কি হবে?
পাঠক একটু দেখে আসি কেমন ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু...
সেই কলেজের প্রথম দিকে আমি কনসার্টে উনার গান শুনি - তা-ও আবার বাংলা নয়, বব মারলি আমার কানে বাচ্চু ভাইয়ের গাওয়া ‘বাফেলো সোলজার’ হয়ে প্রথম ঢুকেছিলো সেই প্রথমবার। আর আমি ভেসে গেছি এই দুইজনে - বছরের পর বছর।
বব মারলির শেষ হয়েছিলেন অল্প বয়সেই, কিন্তু বাচ্চু ভাই তখনো আইয়ুব বাচ্চু হয়ে উঠেননি। এরপর আমি উনার গান খোঁজা শুরু করলাম, সেই ১৯৯১ সালে। পেলাম দুইটা গান - ‘রক্ত গোলাপ ছিলো’, আর ‘ও বন্ধু তোমায় যখনি মনে পড়ে যায়’। আমি এই দুইটা গান কতোবার শুনেছি তার হিসেব নেই!
তখনো তিনি সোলসের ছায়ায়; আর একদিন শোনা গেল তিনি LRB নামে নিজের ব্যান্ড করবেন। গিটারে AB কে বিট করে এমন কেউ তখনতো ছিলোই না, এবং এখনও নেই, আর কবে যে হবে - তা-ও জানা নেই।
একদিন আমাদের সবার ঘুম ভাঙানো গান ‘ঘুম ভাঙা শহরে’ দিয়ে পূর্ণ অমরত্বের পথে ছুটে চলা শুরু হলো। এরপর তিনি যা-ই গেয়েছেন তা-ই সবার মন ছুয়ে গেছে। কীভাবে? কারণ বাচ্চু ভাই ছিলেন সাধারণ মানুষের ভোকালওয়ালা এক কালজয়ী শিল্পী। তাঁর গান আর বাজানো সবাইকে এতটাই ছুঁয়ে যায় যে - তাঁর ‘চলো বদলে যাই’ গানটা দ্বিতীয় জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পেয়ে যায়। তাঁর এই গানটি এতো বেশি মন ছুঁয়েছিলো যে, মাত্র কয়েকদিন আগে ‘জি বাংলা’ সারেগামাপাতেও বিচারকরা নোবেলের গলায় এই গানটিই শুনতে চাইলেন।
সাবলীল গায়কীতে তিনি অন্তরের ভেতরে সিলমোহর মেরে দিতেন, তাঁর গানগুলো এখনো দিয়ে যাবে। অসাধারণ মানুষ ছিলেন বলেই হয়তো অসাধারণ সব গান গাইতে পেরেছিলেন তিনি।
আরেকটা চরম সত্য হলো - বাচ্চু ভাইয়ের কারণে এ-দেশের সঙ্গীত-জগতের অনেকের ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছিলো। সুরকার, গীতিকার, পরিবেশক - সবার অধীর অপেক্ষা থাকতো উনার গানের জন্য।
কার কি গান ভালো লাগে জানিনা, তবে আমার বাচ্চু ভাইয়ের সব গান ভালো লাগে। তাই আর কোনো তালিকায় গেলাম না, যাঁর যাঁর নিজের মতো করে তালিকা করে নিবেন।
মনে হচ্ছে বাচ্চু ভাইয়ের নয়, আমার বা আমাদের সবার রূপালী গিটার চিরতরে চলে গেলো। গান হয়তো বাজবে, কিন্তু গিটারের মায়াবি জাদুকরের বাজনা আর শোনা যাবে না। গিটারের জ্যামিং চিরদিনের জন্য পানসে হয়ে গেলো। গিটারের মূর্চ্ছনায়, বেদনা, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, উল্লাস বা রোমান্টিকতা শোনানোর মতো কেউ রইলো না...।