loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

মমতাজউদদীন আহমদ আর নেই


মমতাজউদদীন আহমদ আর নেই

প্রখ্যাত বাংলাদেশি নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষা-সৈনিক অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ আর নেই। রোববার (২ জুন) বিকেলে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজেউন)। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

মমতাজউদদীন আহমদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। 

এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নাটক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মমতাজউদদীনের অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, তাঁর মৃত্যুতে শিক্ষা ও নাট্যজগতে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মমতাজউদদীন আহমদের জানাজা হবে। এছাড়া গুলশান আজাদ মসজিদ ও মিরপুরের রূপনগরেও পৃথক জানাজা হবে বলে জানা গেছে। পরে তাঁর মরদেহ চাপাইনবাবগঞ্জের ভোলার হাটে নেয়া হবে। সেখানে আরেকবার জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবর স্থানে প্রয়াতের পিতার কবরের পাশে দাফন করা হবে।

মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই ছেলে ও দুই ভাই রেখে গেছেন।

জানা গেছে , মুত্যুর আগে মমতাজউদদীন আহমদ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিউ)-তে রাখা হয়েছিল। তাঁর শারীরিক অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। তাঁর শরীর অক্সিজেন পাচ্ছিল না, মস্তিস্কে পানি জমেছিল।

গত মাসে (মে) তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগে এপ্রিলে তাঁকে ভর্তি করা হলেও ১২ মে তিনি বাসায় ফেরেন।

মমতাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। স্বাধীনতােত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত তিনি। এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালে নাট্যকার হিসেবে তিনি একুশে পদকে ভুষিত হন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। 

এছাড়া বিভিন্ন সরকারি কলেজে প্রায় ৩২ বছর বাংলা ভাষা-সাহিত্য এবং বাংলা ও ইউরোপীয়-নাট্য বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি ১৯৭৬-৭৮ সাল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৭-৮০ তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন।

তিনি ভারতের দিল্লী, জয়পুর ও কলকাতায় নাট্যদলের নেতা হিসাবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তাঁর লেখা নাটক ‘কি চাহ শঙ্খচিল’ ও ‘রাজা অনুস্বরের পালা’ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

ছাত্রাবস্থায় তিনি তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে অংশ নেন। রাজশাহীর ভাষা-আন্দোলন কর্মী গোলাম আরিফ টিপুর সাথে তিনি ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাজশাহী কলেজে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণেও ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে রাজনৈতিক কারণে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়।

মমতাজউদ্দীন আহমেদ লেখা সর্বশেষ গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘রক্ত যখন দিয়েছি’ ও ‘আত্নজীবনী’র দ্বিতীয় খন্ড এ-বছর প্রকাশিত হয়েছে।

তাঁর লেখা অন্যান্য গ্রন্থ হলো - বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত, প্রসঙ্গ বাংলাদেশ প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু, নাটক-নাট্যত্রয়ী, হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার, স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা (১৯৭১), কি চাহ শঙ্খচিল (১৯৮৫), প্রেম বিবাহ সুটকেশ, জমিদার দর্পণ, রাজা অনুস্বরের পালা, বকুলপুরের স্বাধীনতা, সাত ঘাটের কানাকড়ি ইত্যাদি।

মমতাজউদদীন আহমদের মৃত্যুতে সংস্কৃতি ও নাট্যজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যু-সংবাদ শোনার সাথে সাথেই সংস্কৃতি ও নাট্যকর্মীরা হাসপাতালে ভীড় জমান। 

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, উদীচী, মহাকাল নাট্যসম্প্রদায় তাৎক্ষণিকভাবে শোক প্রকাশ করেছে।

Loading...