জমকালো আয়োজন ও পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে ৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ষোড়শ বেসিস সফ্টএক্সপো ২০২০-এর পর্দা নেমেছে। সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি।
৩০০ সফ্টওয়্যার প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতিতে এবারের বেসিস সফ্টএক্সপো দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় আইসিটি এক্সপো হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বেসিস সফটএক্সপোতে এ-বছর সাড়ে ৪ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানের শুরুতে নজরকাড়া লেজার শো, এলইডি ড্যান্স ও স্যান্ড আর্ট প্রদর্শনী হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, তথ্যপ্রযুক্তির পালাবদলে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসমূহের অবদান এবং স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সক্ষমতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে বেসিস সফ্টএক্সপো’র সাফল্য তুলে ধরা হয় সেখানে।
অনুষ্ঠানে সরকার ও বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে উদ্বোধন করা হয়েছে basisegovhub.info। এই পোর্টালে সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন, সরকারি প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের টেন্ডারের বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং টেন্ডারের অংশগ্রহণে যাবতীয় তথ্য খুঁজে পাবেন। পোর্টালটি তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি বিভাগ, এটুআই-এর সাথে যৌথভাবে তৈরি করেছে বেসিস। এটুআই-এর পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন চিফ ই-গভার্নেন্স স্ট্র্যাটেজিস্ট ফরহাদ জাহিদ শেখ ও বেসিস পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন বেসিস পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন।
সফ্টএক্সপো ২০২০-এর আহ্বায়ক ও বেসিস-এর সহ-সভাপতি (অর্থ) মুশফিকুর রহমান বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর লগ্নে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সহায়ক হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার বেসরকারি খাতের তথ্যপ্রযুক্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন বেসিস সফ্টএক্সপো আয়োজন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। বেসিস-এর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সফ্টএক্সপোতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত মেলায় প্রায় সাড়ে চার লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হয় এবং সকল এক্সিবিটর মেলার আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
বেসিস-এর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও সফ্টএক্সপো ২০২০-এর যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহানা এ রহমান বলেন, এবারের আসরে আমরা সারাদেশ থেকে প্রচুর সাড়া পেয়েছি। দেশ-বিদেশ থেকে বক্তারা এসেছেন। নারী উদ্যেক্তাদের জন্য ছিল উইমেন জোন। শিক্ষার্থীরা প্রতিটি স্টলেই সিভি জমা দিয়েছে। আগত সাড়ে চার লাখ দর্শনার্থীর মধ্যে বেসিস সফ্টএক্সপোর মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৪২ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, দেশের সফ্টওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্প্রসারণে এই এক্সপোর আয়োজন করা হয়। এতে ৩০০ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। চারদিনে আমরা নানা আয়োজনে দেশে এবং বিদেশে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তুলে ধরতে সফল হয়েছি।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নারীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করতে উইমেন জোন থেকে সেরা এক্সিবিটর হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে এলিগ্যান্ট আইটি লিমিটেড। সেরা প্যাভিলিয়ন নির্বাচিত হয়েছে সফ্টওয়্যার শপ লিমিটেড - এসএসএল ওয়্যারলেস, দ্বিতীয় হয়েছে জুপিটার টেকনোলজিস প্রাইভেট লিমিটেড, তৃতীয় হয়েছে আইসিসি টেলিসার্ভিসেস। সেরা মিনি প্যাভিলিয়ন নির্বাচিত হয়েছে রেড ডট, দ্বিতীয় হয়েছে আম্বালা আইটি, তৃতীয় হয়েছে টিকন সিস্টেম লিমিটেড। সেরা স্টল নির্বাচিত হয়েছে এক্সপ্রেস সিস্টেম লিমিটেড, দ্বিতীয় হয়েছে ব্র্যাক নেট, তৃতীয় হয়েছে কম্পিউটার গ্রাফিক্স অ্যান্ড ডিজাইন লিমিটেড।
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে জে এ এন অ্যাসোসিয়েটস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল এইচ কাফি ও লিডস কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আব্দুল আজিজকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সামগ্রিক আয়োজন সফল করতে বেসিস সফ্টএক্সপোর পৃষ্ঠপোষক - প্লাটিনাম স্পন্সর ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, সিলভার স্পন্সর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড-ইউসিবিএল, ফিনটেক জোন পার্টনার ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড-ইবিএল, এক্সিপেরিয়েন্স জোন পার্টনার-সফটফি টেক লিমিটেড ও এইট্টি এইট ইনোভেশনস, প্রজেক্ট শোকেসিং জোন পার্টনার আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, আউটসোর্সিং কনফারেন্স পার্টনার ব্যাংক এশিয়া, পেওনিয়ার, সিএক্সও লিডারশিপ মিট পার্টনার ব্র্যাক ব্যাংক, ইন্টারনেট পার্টনার ‘আমরা’, লাইভ স্ট্রিমিং পার্টনার ঢাকা লাইভ, সফ্টএক্সপো’র পার্টনার আইসিটি বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং অনুষ্ঠান সহযোগীদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সফ্টএক্সপো ২০২০-এর নতুন সংযোজন প্রজেক্ট ইনোভেশন জোনের ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫টি প্রকল্পের মধ্যে শীর্ষ পাঁচটি প্রকল্পকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশীয় সফ্টওয়্যার নির্মাতাদের জন্য বেসিস সফটএক্সপো এ-অঞ্চলের সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফর্ম। স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নিরলস অবদানের কারণেই। সফ্টএক্সপো স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তুলে ধরেছে। সরকারি-বেসরকারি খাতে দেশি সফটওয়্যারের গুণগত আর কৌশলগত মান তুলে ধরতে বেসিস কাজ করে যাবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান অতিথি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি বিভাগ ও বেসিস একে অপরের সাথে জড়িত। গত ১১ বছরে সরকার যতগুলো নীতি গ্রহণ করেছে - তার সবগুলোই বেসিস-এর সঙ্গে আলোচনা করেই করেছে। বাংলাদেশ আজ বিলিয়ন ডলার সফ্টওয়্যার রপ্তানি করছে।
আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ৫৬টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেখা গেছে - সরকারের ৯০ শতাংশ সেবার ডিজিটাল রূপান্তরের প্রথম ধাপে গৃহীত ২,৮০০ সেবার ডিজিটালকরণের অভিযাত্রায় ৬০০ সেবা ইতোমধ্যে রয়েছে। আরও ২,২০০ সেবা ডিজিটাল প্লাটফর্মে আনার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আইসিটি বিভাগ, এটুআই ও বেসিস সমন্বিতভাবে কাজ করার ফলে এসব সেবা ডিজিটাল প্লাটফর্মে আনা গেছে। যে সফটওয়্যার দরকার তা বিদেশ থেকে আমদানী না করে, দেশের তথ্য বিদেশী কোম্পানির কাছে হস্তান্তর না করে দেশীয় সফ্টওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমেই দেশের সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। পাইলট প্রকল্প দিয়ে বেসিস সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে উইপ্রো, ইনফোসিস-এর মতো বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হবে। এর প্রথম উপহার বেসিস ই-গভঃ হাব। আগামী দুই বছরে সরকারের যে-দুই হাজার কোটি টাকার সফ্টওয়্যার প্রয়োজন হবে - তা দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে করা হবে।
অনুষ্ঠানের শেষে শুরু ছিল মনোজ্ঞ কনসার্ট ও আতশবাজি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বেসিস-এর সহ-সভাপতি (প্রশাসন) শোয়েব আহমেদ মাসুদ ও পরিচালক দিদারুল আলম।
সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে মেলার শেষ দিনেও ১০টি জোনের প্রতিটিই ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এমন জনসমারোহে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রদর্শকেরা।
এক নজরে বেসিস সফটএক্সপো ২০২০
* চারদিনব্যাপী আয়োজন ৬-৯ ফেব্রুয়ারি
* উদ্বোধন করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ
* স্থান: আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)
* ১০টি বিশেষ জোন
* চার দিনে সাড়ে চার লাখ দর্শনার্থী
* ৪২ হাজারেরও বেশি বেসিস সফ্টএক্সপো-এর মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড
* ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের বি-ট-ুবি ম্যাচমেকিং সেশন
* সুইডেন, জাপান, নেদারল্যান্ডস থেকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশনে অংশগ্রহণ
* শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে সিএক্সও লিডারশিপ মিট
* ৩০০ টিরও বেশি দেশি-বিদেশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের স্টল
* ৩০টিরও বেশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক সেমিনার
* শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানকে 'বেসিস টপ টেন ডিজিটাল-রেডি কোম্পানির সম্মাননা প্রদান
* ২,০০০ বেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইসিটি ক্যারিয়ার ক্যাম্প
* ৪৫টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ইনোভেটিভ প্রজেক্ট শো-কেসিং
* বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং কনফারেন্স
* ১০০ জনেরও বেশি দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের অংশগ্রহণ
* কনসার্ট
ওয়েবসাইট: www.softexpo.com.bd
ফেইসবুক: facebook.com/BASIS.SoftExpo
– সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
