সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১১৯/৭ (টেইলর ৫৯*, আরভিন ২৯; মোস্তাফিজ ২/২৫, সাইফউদ্দিন ১/৩০, আল-আমিন ২/২২, মেহেদি ১/১৪, আফিফ ১/২)
বাংলাদেশ: ১৫.৫ ওভারে ১২০/১ (লিটন ৬০*, নাঈম ৩৩, সৌম্য ২০*; এমপোফু ১/২৭, মুম্বা ০/২৬, শুমা ০/১০, উইলিয়ামস ০/১৬, সিকান্দার ০/১৮)
ফলাফল: বাংলাদেশ নয় উইকেটে জয়ী
সিরিজ: বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচ ও সিরিজ-সেরা: লিটন দাস
বাংলাদেশ সফরে এবার একটি জয়ও পেলো না জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে। টেস্ট-ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জিম্বাবুয়েকে বিধ্বস্ত করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। বুধবার (১১ মার্চ) সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে নয় উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। ফলে দুই ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো মাহমুদুল্লাহর দল। টি-২০’র আগে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে ও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিলো বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এদিন প্রথম ম্যাচের দল থেকে চারটি পরিবর্তন এনে সেরা একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। বিশ্রাম দেয়া হয় তামিম ইকবাল, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও শফিউল ইসলামকে। তাঁদের পরিবর্তে দলে সুযোগ হয় মোহাম্মদ নাইম, হাসান মাহমুদ ও আল-আমিন হোসেনের। এরমধ্যে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামেন পেসার হাসান।
সফরে প্রথম জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন ছিলো জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের। প্রথম দুই ওভারে দু’টি চার মেরেছিলেন ওপেনার তিনাসি কামুনহুকামবে। তবে তৃতীয় ওভারে থামতে হয় তাঁকে। পেসার আল-আমিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১০ রান করা কামুনহুকামবে।
এরপর বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ব্রেন্ডন টেইলর ও ক্রেইগ আর্ভিন। চতুর্থ ওভারেই বল হাতে আক্রমণে আসেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা হাসান। প্রথম পাঁচ ডেলিভারিতে মাত্র এক রান দেন তিনি। ষষ্ঠ বলে স্কুপ করেছিলেন টেইলর। শর্ট ফাইন লেগে থাকা আল-আমিন পেছনে দৌঁড়ে গিয়ে হাত থেকে ক্যাচ ফেলেন। ফলে তিন রানে জীবন পান টেইলর।
জীবন পেয়ে আর্ভিনকে নিয়ে বড় জুটির চেষ্টা করেন পুরো সিরিজে সুপার ফ্লপ টেইলর। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ছয় ইনিংসে তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ছিলো ১৭। তাই এদিন দেখেশুনেই এগোচ্ছিলেন তিনি। তাই পাওয়ার প্লে শেষে মাত্র ৩১ রান পায় জিম্বাবুয়ে। তবে পাওয়ার প্লের পরে রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন টেইলর-আর্ভিন। তাই ১০ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের রান গিয়ে দাড়ায় ৬২তে। দশম ওভারের শেষ বলে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন টেইলর-আর্ভিন।
তবে দ্বাদশ ওভারের প্রথম বলে টেইলর-আর্ভিনের জুটি ভাঙ্গেন আফিফ হোসেন। প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই উইকেট শিকার করেন তিনি। তিনটি চারে ৩৩ বলে ২৯ রান করা আর্ভিনকে শিকার করেন আফিফ। দ্বিতীয় উইকেটে ৫২ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তাঁরা।
আর্ভিনের পরে উইকেটে গিয়ে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়েছেন অধিনায়ক সিন উইলিয়ামস। স্পিনার মেহেদি হাসানের প্রথম শিকার হয়ে ব্যক্তিগত তিন রানে আউট হন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।
১৪.২ ওভারে উইলিয়ামস ফিরলে ব্যাট হাতে নামেন সিকান্দার রাজা। ওভারের চতুর্থ বলে জীবন পান তিনি। মিড-অনে রাজার সহজ ক্যাচ ছাড়েন সৌম্য। জীবন পেয়েও নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি রাজা। দুইটি চারে ব্যক্তিগত ১২ রান করে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে আউট হন রাজা। দলীয় ৯৬ রানে আউট হন রাজা।
এরপর এক প্রান্ত আগলে রানের চাকা ঘুরিয়েছেন টেইলর। দলকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন টেইলর। ৪২তম বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি তুলেন তিনি।
রাজার পর পরের দিকের তিন ব্যাটসম্যান দ্রুত ফিরলেও, দলকে ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১১৯ রানের স্বল্প সংগ্রহ এনে দেন টেইলর। ৪৮ বলে ছয়টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ৫৯ রান করেন টেইলর।
বাংলাদেশের মুস্তাফিজ-আল আমিন দুইটি করে এবং সাইফউদ্দিন-মেহেদি-আফিফ একটি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১২০ রানের সহজ টার্গেটে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাইম। প্রথম তিন ওভার দেখেশুনেই খেলেছেন তাঁরা। তাই কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৯ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। পাওয়া প্লে’র শেষ তিন ওভারে ২৫ রান করে তাঁরা। ফলে ছয় ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৪৪।
এরপর রানের গতি ধরে রেখেছেন লিটন ও নাইম। ফলে ১০ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৭৩ রান হয়েছে দলের। তবে একাদশতম ওভারে থেমে যান লিটন-নাইমের একত্রে পথচলা। ওয়ানডে মেজাজে খেলা নাইম ৩৪ বলে ৩৪ রান করে আউট হন। পাঁচটি চার হাকানো ইনিংসের পথে জিম্বাবুয়ের পেসার ক্রিস এমপফুর শিকার হন নাইম। ৬৪ বলে ৭৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন লিটন-নাইম।
নাইমের বিদায়ের পরে মারমুখী হয়ে উঠেন ইনফর্ম লিটন। ৩৫তম বলে টি-২০ ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশত রান করেন তিনি। লিটনের হাফ-সেঞ্চুরির পরে ব্যাটিং শৈলী দেখান আগের ম্যাচের হিরো সৌম্য সরকার। দুইটি ছক্কাও মেরেছেন তিনি। তাই দ্বিতীয় উইকেটে লিটন-সৌম্যর ৩১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৩ রানের জুটিতে ২৫ বল বাকী রেখেই জয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ।
ম্যাচ ও সিরিজ-সেরা নির্বাচিত হওয়া লিটন ৪৫ বলে আটটি চারে ৬০ রানে অপরাজিত ছিলেন। তাঁর পাশাপাশি সৌম্য ১৬ বলে দুইটি ছক্কায় ২০ রানে অপরাজিত থেকে জিম্বাবুয়েকে এবারের সফরে জয়হীন থাকতে বাধ্য করলেন।