loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • কুমিল্লা ইপিজেড-এ চামড়া কারখানা করবে চীনা প্রতিষ্ঠান

  • নারী এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের গ্রুপে শ্রীলংকা

  • অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো টাইগ্রেসরা

  • ১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

  • প্রীতি ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও আর্জেন্টিনার জয়

মুজিববর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু


মুজিববর্ষের বছরব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণ (১৭ মার্চ) রাত আটটায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মুক্তির মহানায়ক’ শিরোনামে লেজার শো ও আতশবাজি প্রদর্শন এবং শতশিশুর কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ‘মুজিববর্ষ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। রাত ১০টায় দুই ঘন্টাব্যাপী এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।

জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ধারণকৃত ভাষণ সম্প্রচার করা হয়। এরপর শতশিশুর কন্ঠে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে কামাল চৌধুরী রচিত মুকিত খানের সুরে ‘তুমি বাংলার ধ্রুব তারা’ সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানাও দেশ বরেণ্য শিল্পীদের সঙ্গে এই গানে কন্ঠ মেলান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নতুন প্রজন্মকে জাতি গঠনমূলক কাজে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তাঁর নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সাহসী, ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব।’

স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো দেশ ও মানুষকে ভালোবাসতে আগামী প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঠিক যেভাবে জাতির পিতা দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানা বলেন, ‘আমাদের প্রাণের প্রিয় সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ জন্মশতবার্ষিকী। তোমার হয়ে আমাদের যা কিছু আছে, তা দিয়ে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাব। কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমার বাবা বেঁচে নেই, আছেন কোটি অন্তরে। আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে আমাদের পিতা।’

এরপর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমান শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা সেখানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এবং তাঁর কবিতা পাঠ করেন বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক একশজন শিল্পী যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করে। এরপর শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় উদযাপন কমিটির পরিবেশনায় ও লিয়াকত আলী লাকীর পরিচালনায় ‘চিত্রপটে দৃশ্যকাব্যে’ শীর্ষক নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল ‘ফাদার ভিশন অফ দি ফ্লটিং ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার আকরাম খানের নির্দেশনায় তরুণ শিল্পীদের পরিবেশনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের উপর নৃত্যালেখ্য।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে থাকছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস ঘিরে কর্মসূচির পাশাপাশি পুরো বছরে বিভিন্ন আয়োজন।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মুহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুনের ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার চলতি বছরকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ শুরু হয়ে মুজিববর্ষের কর্মসূচি চলবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত।

করোনা পরিস্থিতির কারণে ‘মুজিববর্ষ’ অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বড় পরিসরে জনসমাগম করা হয়নি। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় অনুষ্ঠানসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবাষির্কী উপলক্ষে বছরব্যাপী মুজিববর্ষ উদযাপনের জন্য ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন।

এর আগে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে উচ্চপর্যায়ের দুটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০২ সদস্যের জাতীয় উদযাপন কমিটি এবং জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ৬১ সদস্যের জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ গঠিত ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন কমিটিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করা হয়।

জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতর বছরব্যাপী পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। এসব মন্ত্রণালয় ও দফতর জনগণকেও দেবে বিশেষ ধরনের সেবা। সরকার ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিজস্ব কর্মসূচির মাধ্যমে মুজিববর্ষ পালন করবে। কেন্দ্রীয় তদারকির বাইরেও জেলা উপজেলা প্রশাসন, সরকারি বেসরকারি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নিজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোও ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করবে। প্যারিসে অনুষ্ঠিত সংস্থার ৪০তম সাধারণ পরিষদের সভায় এ-বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মুজিববর্ষ উপলক্ষে রাত আটটায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মক্ষণ উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৩২ ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিল, সোরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকাসহ সারাদেশে একযোগে আতশবাজি প্রদর্শনী করা হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফানুস উড়িয়ে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। এ-সময় দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে রাত আটটায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির সামনে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

মুজিববর্ষ পালনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সন্ধ্যায় ছয়টায় রাজধানীর কলাবাগান মোড় থেকে কুলোর উপর প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোর মিছিল বের করে এবং তা বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে, করোনাভাইরাসের কারণে অনুষ্ঠানটি ভিন্নভাবে করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। আগের জনসমাবেশ বাতিল করে টেলিভাইজডভাবে এই অনুষ্ঠানটি হয়েছে।

Loading...