বাংলাদেশে গত ২৪ ঘন্টায় ১২,৭০৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২,৯১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়েছে। এটি একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এর মধ্যদিয়ে করোনা-শনাক্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়ালো (এ-পর্যন্ত শনাক্ত ৫২,৪৪৫ জন)। দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা-আক্রান্ত হয়ে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ-নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা হলো ৭০৯। এছাড়া, গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫২৩ জন। ফলে, এ-পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১১,১২০ জন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ-তথ্য জানান।
তিনি জানান, নমুনা পরীক্ষায় আজ শনাক্তের হার ২২.৯১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১.৩৫ শতাংশ।
ডা. নাসিমা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪,৯৫০টি। গতকালের চেয়ে আজ ১,৮৪৬টি নমুনা বেশি সংগৃহীত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৫২টি পরীক্ষাগারে আগের দিনের চেয়ে ১,২৬৫টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ-পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩টি।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ৩৭ জনের মধ্যে পুরুষ ৩৩ জন, নারী চারজন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ জন, সিলেট বিভাগে চারজন, বরিশালে বিভাগে তিনজন, রাজশাহী বিভাগে দুইজন, রংপুর বিভাগে দুইজন, ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছেন একজন।
বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সের মধ্যে দুইজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে নয় জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এক জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে চার জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছেন একজন রয়েছেন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছেন ৩৮৮ জন, আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৬৯ জন। এ-পর্যন্ত মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩,৪০৭ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৬,২৪০ জন।
সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩,২৮৪টি। প্রস্তুত করা হচ্ছে আরও ৭০০ শয্যা। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ৭,২৫০টি। ঢাকা শহরের বাইরে ৬,০৩৪টি শয্যা রয়েছে। আইসিইউ রয়েছে ৩৯৯টি, ডায়ালাসিস ইউনিট ১১২টি।
ডা. নাসিমা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইনসহ মোট ২,৫০৬ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৯০ হাজার ৩৮৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩,০৯৭ জন এবং এ-পর্যন্ত ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫৮,৫৪৫ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা দেয়া যাবে ৩১,৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘণ্টায় সংগৃহীত হয়েছে ১০,০২০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ১৮২টি। গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ২০,৪৩০টি। এ-পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ২১ লাখ ৬০ হাজার ৭২৩টি। বর্তমানে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৯টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩০টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ লাখ ৭৩ হাজার ৫১১টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসাবিষয়ে এ-পর্যন্ত ১৬,২৫৩ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৪,২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিআর-এর হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৪৭ জনসহ এ-পর্যন্ত বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৩ হাজার ৫৪০ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা-আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১১,৯৩৩ জন। এ-পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৭২ হাজার ৫১২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩১২ জনের এবং এ-পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৭,৭৪৩।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা-আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৯১৭ জন। এ-পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬০ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৩ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪,০০০ জনের এবং এ-পর্যন্ত ৩ লাখ ৭১ হাজার ১৬৬ জনের।
“আপনার সুস্থতা আপনার হাতে” উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে বুলেটিনে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
