loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

‘সকলের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই মুজিববর্ষের লক্ষ্য’


‘সকলের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই মুজিববর্ষের লক্ষ্য’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকলের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই হবে মুজিববর্ষের লক্ষ্য, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন যাপন করতে পারে। দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারার চেয়ে বড় কোনো উৎসব আর কিছুই হতে পারে না।

শেখ হাসিনা শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহপ্রদান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে আরও বলেন, ‘এভাবেই মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সমগ্র বাংলাদেশের গৃহহীনদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া হবে, যাতে দেশের একটি লোক ও গৃহহীন না থাকে। যাতে তাঁরা উন্নত জীবন যাপন করতে পারে, আমরা সে-ব্যবস্থা করে দেবো। যাঁদের থাকার ঘর নেই, ঠিকানা নেই, আমরা তাঁদের যেভাবেই হোক – একটা ঠিকানা করে দেবো।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয় এবং একই সাথে ৩ হাজার ৭শ’ ১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়।

গণভবনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সারাদেশের ৪৯২টি উপজেলা প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষের অনেক কর্মসূচি আমাদের ছিল। করোনার কারণে আমরা সেগুলো করতে পারিনি। তবে, করোনা একদিকে আশীর্বাদও হয়েছে। কারণ, আমরা এই একটি কাজের দিকেই (গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়া) নজর দিতে পেরেছি। আজকে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরেও সীমিত আকারে আমরা করে দিচ্ছি এবং একটা ঠিকানা আমি সমস্ত মানুষের জন্য করে দেবো। কারণ, আমি বিশ্বাস করি – যখন এই মানুষগুলো ঘরে থাকবে, তখন আমার বাবা এবং মা – যাঁরা সারাটা জীবন এদেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গিয়েছেন, তাঁদের আত্মা শান্তি পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাঁদের আত্মাটা অন্তত শান্তি পাবে। কারণ, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই ছিল আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, ‘আজকে আমি সবচেয়ে খুশি যে – এত অল্প সময়ে এতগুলো পরিবারকে আমরা একটা ঠিকানা দিতে পেরেছি। এই শীতের মধ্যে তাঁরা থাকতে পারবে। কেননা, আমাদের যাঁরা শরণার্থী (রোহিঙ্গা), তাঁদের জন্যও আমরা ভাসানচরে ঘর করে দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় থাকাকালীন ’৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদেরকেও কক্সবাজার এবং পিরোজপুরে আমরা ফ্ল্যাট করে দিয়েছি। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদেরকেও ঘর করে দিয়েছি এবং সেখানে শীঘ্রই আরও ১০০টি ভবন তৈরী করা হবে’

এদিন এক লাখ ৬৬ হাজার ১৮৯ টি ঘর করে অনুষ্ঠানে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঠালতলা গ্রাম, নীলফামারি জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুর গ্রাম, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং চাপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ উপকারভোগীদের মাঝে বাড়ির চাবি এবং দলিল হস্তান্তর করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী এই স্বল্প সময়ে সফলভাবে গৃহনির্মাণ এবং কাগজপত্র তৈরীর মতো জটিল কাজ ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে সম্পন্ন করতে পারায় জেলা প্রশাসন এবং তাঁর দপ্তর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত দ্রত সময়ে পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো সময় কোনো সরকার একসঙ্গে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর করে দিয়েছে কি-না, আমার জানা নেই। যেহেতু যাঁরা প্রশাসনে রয়েছেন, তাঁরা সরাসরি ঘরগুলোর তৈরি করেছেন; তাই সম্ভব হয়েছে এবং মানসম্মত হয়েছে, সেজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এ-প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারি কর্মচারীরা যেভাবে সবসময় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন, এটা অতুলনীয়। আর সেই সাথে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র থেকে শুরু করে সকলে সহযোগিতা করেছেন। এই একটি কাজে আমরা দেখেছি সকলের সম্মিলিত প্রয়াস। তাই আজ আমরা এত বড় একটা দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, এই গৃহায়ন প্রকল্পে কোনো শ্রেণি বাদ যাচ্ছে না, বেদে শ্রেণিকেও আমরা ঘর করে দিয়েছি। হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছি এবং তাঁদেরকেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দলিত বা হরিজন শ্রেণির জন্য উচ্চমানের ফ্লাট তৈরী করে দিচ্ছি, চা-শ্রমিকদের জন্য করে দিয়েছি। এভাবে প্রত্যেকটা শ্রেণির মানুষের পুনর্বাসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এদিন ভিক্ষুক, ছিন্নমূল এবং বিধাবাসহ ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়। সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ১,১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬,১৮৯টি বাড়ি নির্মাণ করেছে। একই সাথে ৩ হাজার ৭শ’ ১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধীন আশ্রয়ন প্রকল্প মুজিববর্ষ উদযাপনকালে ২১টি জেলায় ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীনে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করে ৩,৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করছে। ইতোমধ্যে সারাদেশের ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী গৃহ নির্মাণ ও পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলবে।

উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারকে দুই শতক জমির রেজিস্ট্রার্ড মালিকানা দলিল হস্তান্তরসহ নতুন খতিয়ান এবং সনদ হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটি জমি এবং বাড়ির মালিকানা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি দুই রুমের সেমিপাকা টিনশেড বাড়িতে রান্নাঘর, টয়লেট, বারান্দাসহ বিদ্যুৎ ও পানির নাগরিক সুবিধা রয়েছে। গ্রোথ সেন্টারের পাশে হওয়ায় প্রকল্প এলাকায় পাকা রাস্তা, স্কুল, মসজিদ-মাদ্রাসা এবং বাজার রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তাঁর সাড়ে তিন বছরের দেশ পরিচালনায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে যে-সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, তার ১৫(ক) অনুচ্ছেদে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থান পাওয়ার অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে যান। জাতির পিতা গৃহহীন-অসহায় মানুষের পুনর্বাসনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার (বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলা) চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে যান এবং ভূমি ও গৃহহীন অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন এবং তাঁর নির্দেশনাতেই ভূমি ও গৃহহীন, ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ’৯৭ পরবর্তী সময়ে চালু করা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়।

তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময় বাংলাদেশের জন্য একটি অন্ধকার যুগ ছিল। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্যের কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল।

সে-সময়ে বিরোধীদলে থাকলেও বিনাকারণে কারাবন্দী হওয়ার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্দি হয়ে গেলাম আমি। তারপরেও আমি আশা ছাড়িনি, আল্লাহ একদিন সময় দেবেন এবং এদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারবো।’

তিনি ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয় যুক্ত করায় পুনরায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছিলাম বলেই জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করতে পারলাম এবং পুনরায় আমাদের প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শুরু করলাম।’

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের স্থবিরতায় ঘরগুলো হস্তান্তরকালে সশরীরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে না পারার আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইচ্ছে ছিল নিজ হাতে আপনাদের কাছে বাড়ির দলিলগুলো তুলে দেবো। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে সেটা করতে পারলাম না। তবে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলাম বলেই আপনাদের সামনে এভাবে হাজির হতে পেরেছি।’

আমাদের দেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র এবং উন্নত জীবন পায় – সেটা নিশ্চিত করাই জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে তিনি ৭৫-পরবর্তী সরকারগুলোর, বিশেষ করে সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের তথাকথিত গণতন্ত্রায়নের নামে দেশের বিরাজনীতিকরণের ও কঠোর সমালোচনা করেন।

এ-সময় বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের দোয়া এবং সহযোগিতার প্রত্যাশাও পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স উপলক্ষে সারাদেশের উপজেলা প্রান্তগুলোতে উৎসবের আমেজ পরিলক্ষিত হয়। চারটি স্থানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মতবিনিময় করলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ তাঁদের এবং স্থানীয় জনগণের ভিভিওবার্তা মূল অনুষ্ঠানে প্রেরণ করেন। নতুন গৃহপ্রবেশ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারাদেশের উপকারভোগীদের নিয়ে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সেইসঙ্গে দেশব্যাপী মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

Loading...