রাস্তাঘাটে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলবেননা, ঘুষ নেওয়া ও দেওয়া দন্ডনীয় অপরাধ, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন, রাস্তাঘাট পারাপারে ওভারব্রিজ ব্যবহার করুন..! লাইনগুলো নিশ্চয়ই বেশ চেনা চেনা লাগছে। শ্যামল মিত্রর গাওয়া সেই চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা গানের মত উপরের এসব কর্মগুলোও আমাদের জীবনে কিছুটা অচেনাই বটে।
তবে পৃথিবীতে ব্যতিক্রম মানুষও আছে নিশ্চয়ই। এমনই একজন যার নাম বান্টি মীর। পেশায় মিডিয়া কনসালটেন্ট, সুদূর আমেরিকা থেকে ফুড সার্টিফাইড প্রফেশনাল তিনি। তবে এসব নিয়ে তাকে পরিচিত করার জন্য এই লেখাটি নয়। লেখাটির কারন একটাই, হি ইজ অ্যান আইডিয়েল সিটিজেন… তিনি একজন আদর্শ নাগরিক!
প্রমান চান? তার ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে কয়েক মিনিট ঘুরে এসে তার বানানো ভিডিওগুলো দেখলেই মিলবে এর প্রমান।
আজকে থেকে কয়েকমাস আগে সকালের জগিং শেষে একখানা সফট ড্রিংকস এর ক্যান হাতে নিয়ে রাস্তায় ঘুরছিলেন বান্টি, কোথায় ক্যানটাকে ফেলা যায়! প্রায় কয়েক কিলোমিটার দৌড়েও তিনি কোন ট্রাশ ক্যান খুঁজে পাননি। সাথে সাথে পকেটে থাকা ফোনটা বের করে বিষয়টি নিয়ে একটা ভিডিও বানিয়ে ফেলেন এবং সেটি হয়ে যায় ভাইরাল! এর ঠিক দু-মাসের মাথায়ই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ নেয় সারা ঢাকায় পর্যাপ্ত পরিমানে ট্রাশ ক্যান বসানোর।
পরবর্তীকালে তার সচেতনতামূলক ভিডিও দেখে অনুপ্রানিত হয়ে স্বয়ং মেয়র আনিসুল হক তার নিজ ফেসবুক অফিসিয়াল পেইজ থেকে শেয়ার করেছেন তার একটি ভিডিও, তাকে দিয়েছেন প্রানখোলা অভিবাদন। প্রচলন করেছেন#IUseTrashCan নামে একটি হ্যাশট্যাগ।
শুধু ট্রাশ ক্যান ইস্যু নয়। কেউ রাস্তায় জ্যামে না বসে থেকে ফুটপাথে বাইক উঠিয়ে দিয়েছেন, নো পার্কিং সাইনবোর্ড এর পাশে গাড়ি পার্ক করে রেখেছেন কিংবা নিয়ম বহির্ভুত কিছু করেছেন তো ফেঁসেছেন। বান্টি মীর আপনার দিকে এগিয়ে আসবে তার তাক করা মুঠোফোনের ক্যামেরা নিয়ে। এসবের উদ্দ্যেশ কিছুইনা, কেবল জনমানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন। এবছরের ভালোবাসা দিবস তিনি পালন করেছেন দলবল নিয়ে গুলশান এলাকা পরিচ্ছন্নতার কাজ করে। একটা মানুষের অসম্ভব পাগলাটে মানসিকতা ও তীব্র দেশপ্রেম না থাকলে কি এমনটা করা সম্ভব!
বান্টি মীরের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় তিনি জানান, তার ভিডিওগুলোকে ভিডিও না বলে তিনি “নিডিও (নিড+ভিডিও)” বলতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তার এসব কর্মকান্ডকে তিনি আজীবন ব্যক্তি আন্দোলন পর্যায়েই রাখতে চান। তবে তিনি যেহেতু আমেরিকা থেকে সার্টিফাইড ফুড প্রফেশনাল, বাংলাদেশের ফুড সেফটি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কাজ করতে চান বান্টি।
সাম্প্রতিককালে তিনি যে বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন তা হলো ফার্মগেট পার্কের কোন এক কোনায় একটি ফার্মগেট সেন্ট্রাল মসজিদ নির্মানের। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য তিনি সম্প্রতি একটি ভিডিও-ও বানিয়েছেন। তার মতে এখানে একটি মসজিদ নির্মিত হলো উক্ত পার্কে রাতের আঁধারের সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ড তো বন্ধ হবেই, অপরদিকে অত্র এলাকায় আসা হাজার হাজার পথচারীদের মসজিদ খুঁজে পাওয়ার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি মিলবে।
আগামী ২ বছর পর বাংলাদেশকে কোন পর্যায়ে দেখতে চান, প্রশ্নের জবাবে বান্টি জানান, আজকে বিউটিফুল বাংলাদেশ আমরা শুধু শুনি, পলিটিকাল এবং মানুষের আচরনে পজেটিভ পরিবর্তন হলে, আন্তর্জাতিক ও কুটনৈতিক সম্পর্কে একটা উইন-উইন হারমনিতে পারফর্মেন্স করলে সন্দেহ নেই বাংলাদেশ ২০২১ এর পরের ২০ বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে একটা মডেল হয়ে থাকবে। যেমনটা আজ থেকে বিশ বছর আগে ভারত ব্রিক্স এর মডেল হয়েছিলো।
বান্টি মীরের কিছু ভিডিও দেখুনঃ
সফ্ট ড্রিংকস ক্যান ফেলার জন্য ট্রাশ ক্যান খুঁজতে থাকা সেই ভিডিওটি
ফুটপাথে বাইক উঠতে দেয়া হলোনা
সবাইকে ট্রাশ ক্যানে ময়লা ফেলার আহবান
ফার্মগেটে মসজিদ নির্মানের অনুরোধ
মোহাম্মদপুরের ফুলের দোকানীকে ট্রাশ ক্যান ব্যবহারের অনুরোধ
লেখকঃ মোঃ আলতামিশ নাবিল