স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বাংলাদেশের কিংবদন্তি গীতিকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছে তাঁর পারিবারিক সূত্র। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। তাঁর গানে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ ও অনুভূতির কথা।
১৯৬২-৬৩ সালে মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় গাজী মাজহারুল আনোয়ার লিখেছিলেন প্রথম গান ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’। গানটির সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু এবং কণ্ঠশিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমীন।
১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান লিখে ৫০ টাকা আয়ের মাধ্যমে পেশাদার গীতিকার হিসেবে জীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার পর গাজী মাজহারুল আনোয়ার চিত্রনাট্য, গান, সংলাপ ও কাহিনি রচনা শুরু করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই তাঁর অবদান ছড়িয়ে আছে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অঙ্গনে।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ চলচ্চিত্রে ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লেখা শুরু করেন।
তিনি একজন সফল কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘দেশ চিত্রকথা’ থেকে ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘শর্ত’, ‘সমর’, ‘শ্রদ্ধা’, ‘ক্ষুধা’, ‘স্নেহ’, ‘তপস্যা’, ‘উল্কা’, ‘আম্মা’, ‘পরাধীন’, ‘আর্তনাদ’, ‘পাষাণের প্রেম’, ‘এই যে দুনিয়া’ নামের চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন।
বিবিসি’র জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের মধ্যে তিনটি গানের রচয়িতা গুণী এই গীতিকবি। গানগুলো হলো – ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’ ও ‘একবার যেতে দে না’।
গীতিকার হিসেবে গাজী মাজহারুল আনোয়ার পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া, তাঁর অর্জনের মধ্যে রয়েছে – ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, এস এম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁর মেয়ে দিঠি আনোয়ার একজন কণ্ঠশিল্পী। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে আছেন। মেয়ে দেশে ফিরলে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন ছেলে সারফরাজ আনোয়ার।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পৃথক শোক বার্তায় তাঁরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
