দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নামে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। মনোয়নপত্র দাখিল শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন জমা দিতে এদিন পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে যান আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।
মনোনয়নে পত্রে প্রস্তাবক হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক হিসেবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ স্বাক্ষর করেন। এ-সময়ে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফারুক খান ও আবদুর রহমান, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা নির্বাচন কমিশনে পৌঁছানোর মিনিট দশেক পরেই সেখানে আসেন মো. সাহাবুদ্দিন। পরে, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।
পরে, ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন প্রদান করেছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল গত ৭ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু-কন্যা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে। তিনি এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।
ওবায়দুল কাদের সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির পরিচয় তুলে ধরে বলেন, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবী এবং বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতোপূর্বে জেলা, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এক ফেইসবুক পোস্টে জানান, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পেশায় একজন আইনজীবী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এর আগে, জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামাত জোটের নেতাকর্মীদের সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরে কারাবরণ করেন। তিনি আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র সন্তানের পিতা এবং তাঁর স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্মসচিব ছিলেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষে চূডান্তভাবে রাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব জাহাংগীর আলম এই তথ্য জানান।
সচিব জানান, রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের জন্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নামে দু'টি মনোনয়ন জমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন দু'টি সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) যাচাই-বাছাই করা হবে। সোমবার দু’টি মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। প্রত্যাহার শেষে রাষ্ট্রপতির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, আইন অনুযায়ী একই ব্যক্তির নামে সর্বোচ্চ তিনটি মনোনয়ন পত্র জমা দেয়া যেতে পারে।
গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন দাখিল, ১৩ ফেব্রুয়ারি বাছাই ও ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহারের দিন ধার্য করা হয়। নির্বাচন ১৯ ফেব্রুয়ারি। তবে, যেহেতু জাতীয় সংসদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রার্থী একজন, তাই ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হবে না।