loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ ২৯ মে

  • সিটিকে বিদায় করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিতে রিয়াল

  • আর্সেনালকে বিদায় করে সেমিতে বায়ার্ন

  • ‘রাজকুমার’ যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যানাডার ৭৫ থিয়েটারে

  • ভারতের বিপক্ষে টাইগ্রেসদের দল ঘোষণা

সারাদেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত


সারাদেশে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে শনিবার (২২ এপ্রিল) পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে শুরু করেন তাঁদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ধর্মপ্রাণ লাখো-কোটি মানুষ ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে সামিয়ানার নিচে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সংসদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ উৎসব আমেজে সেখানে নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। বিকল্প ইমাম হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামেয়া আরাবিয়া মিরপুর, ঢাকার মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান। নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জাতীয় ঈদগাহের এই জামাতের আয়োজন করে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঈদগাহে পৌঁছলে সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তাঁকে স্বাগত জানান।

এই প্রধান জামাতে নারী ও বিদেশি কূটনীতিকদের নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। মুসুল্লিদের জন্য ওযু, খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেটেরও ব্যবস্থা ছিল।

জাতীয় ঈদগাহে সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠানে নেওয়া হয় তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। ঈদগাহে সকল প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের গোটা প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। মুসল্লিদের  ঈদগাহে  প্রবেশের  আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশীর পরে আর্চওয়ে দিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হয়। প্রধান এই জামায়াতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র‌্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন।

রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে। এখানে এবারও পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে আটটায় জামাতের আয়োজন করা হয়। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামায়াতে অংশ নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামি’আয় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে সাড়ে ৮টায় ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল আটটায় পৃথক দু’টি ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, রাজধানীর মীরবাগ জামে মসজিদে সকাল আটটায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। পল্লবীর বায়তুল আমান জামে মসজিদে দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুর-১২ নম্বরে হারুন মোল্লা ঈদগাহ্ মাঠে ঈদের প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়।

বন্দরনগরী চট্রগ্রামে ঈদের প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় দামপাড়া জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে।

প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে সকাল ১০টায়। জামাতের পরে বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এটি ছিল ঈদ-উল-ফিতরের ১৯৬তম ঈদ জামায়াত।

এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রখর রোদ আর তাপপ্রবাহেও ময়দানে মুসল্লিদের ঢল নেমেছিল। এবারও একসঙ্গে ছয় লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে আয়োজকরা জানান। নয়টায় শুরু হওয়া এই জামায়াতে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ’র অব্যাহত শান্তি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ূ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঈদ উপলক্ষে বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে গেছেন।

পবিত্র দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

ঈদ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেইফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।

ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।

যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদযাপন করে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদ উদযাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

Loading...