ফরাসি ফুটবল তারকা কিলিয়ান এমবাপে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)’র সাথে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্তের কথা ক্লাবকে জানিয়েছেন। এবারের গ্রীষ্মে লিওনেল মেসির পাশাপাশি এমবাপের ক্লাব ছাড়া নিয়ে যে-গুঞ্জন ছিল – সেটাই সত্য হলো। ২৪ বছর বয়সী এই ফরাসি স্ট্রাইকারের সাথে পিএসজি’র বর্তমান চুক্তির মেয়াদ আগামী মৌসুমের পরে শেষ হয়ে যেত। যদিও চুক্তি অনুযায়ী, আরও এক বছরের জন্য সেটি বৃদ্ধির শর্ত ছিল; কিন্তু এমবাপে তা মেনে নেননি। এমবাপে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর না করায় আগামী বছর ফ্রি-ট্রান্সফারে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকি ছিল। সে-কারণে, পিএসজি এবারের গ্রীষ্মেই এমবাপেকে অন্য ক্লাবের কাছে বিক্রি করার সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের।
এমবাপে চুক্তি নবায়ন না-করার বিষয়টি পত্রের মাধ্যমে লিখিতভাবে ক্লাবকে জানিয়েছেন। মেসিকে ইন্টার মায়ামির কাছে ছাড়া পরে এবার এমবাপের ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্তে কার্যত পিএসজি’র ক্ষতিই হলো; যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এমবাপের হাতে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় রয়েছে।
মূলত গত মৌসুম থেকেই এমবাপের পিএসজি ছাড়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। গতবার একেবারে শেষ মুহূর্তে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে আলোচনায় ছেদ টেনে পিএসজি’র সাথে চুক্তি নবায়ন করে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিলেন এমবাপে।
সোমবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় পিএসজিকে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পরে অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে এমবাপের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
মেসি-এমবাপেকে হারানোর পরে ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারকে নিয়েও পিএসজি দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত নেইমারের সাথে চুক্তি থাকলেও পার্ক ডি প্রিন্সেসে তাঁর ভবিষ্যত নিয়ে শংকা থাকছে। আসন্ন গ্রীষ্মে নেইমারের দলত্যাগ নিয়েও গুঞ্জন রয়েছেই।
বার্সেলোনা থেকে ২০১৭ সালে বিশ্বরেকর্ড ফিতে পিএসজিতে যোগদানের পর থেকে ইনজুরি পিছু ছাড়েনি নেইমারের। পিএসজি’র হয়ে এ- পর্যন্ত ১৭৩ ম্যাচে ১১৮ গোল করেছেন নেইমার। তবে, তিনি ইনজুরি অথবা নিষেধাজ্ঞার কারণে ১০০’রও বেশি ম্যাচ মিস করেছেন।
এমবাপের ক্লাব ছাড়ার ঘোষণায় ফরাসি লিগ জয় সত্ত্বেও মাঠ ও মাঠের বাইরে কঠিন একটি মৌসুম কাটানো কাতারি মালিকানাধীন ক্লাবটি বেশ অস্বস্তিতে পড়লো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আরেকটি ব্যর্থতার পরে কোচ ক্রিস্টোফার গাল্টিয়া’র উত্তরসূরী খোঁজার কাজও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নেওয়াটা ছিল ভীষণ হতাশার। ফ্রেঞ্চ কাপেও একই পর্যায়ে থেকে বিদায় নিতে হয়েছে দলটিকে।
এমবাপে ২০১৭ সালের অগাস্টে মোনাকো থেকে এক বছরের ধারে পিএসজিতে খেলতে এসেছিলেন; পরের বছরই ক্লাবে স্থায়ী হন। তিনি ২০১৮ সালে টিনএজার হিসেবে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দেন। তারপর থেকে এমবাপে বিশ্বফুটবলে শীর্ষসারির একজন ফরোয়ার্ড হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ফ্রান্স পরাজিত হলেও তিনি হ্যাটট্রিক করেছিলেন। এ-বছর তিনি পিএসজিকে একাদশ ফরাসি লিগ শিরোপা উপহার দিয়েছেন।
তাহলে, এমবাপেকে এই মৌসুমে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে কিনবে কোন ক্লাব? উত্তর হলো – রিয়াল মাদ্রিদ। এর আগে রিয়ালের বিপুল অংকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে কেনা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার পরও নাকি এখনাে আগ্রহী রিয়াল! কেননা, আরেক ফরাসি তারকা করিম বেন্জেমা প্রায় ১৪ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে কয়েকদিন আগেই স্পেন ছেড়েছেন। তাঁর শূন্যস্থান পূরণের জন্য একজন ফরোয়ার্ড প্রয়োজন রিয়ালের; আর সেই ফরোয়ার্ড যদি হন এমবাপে – তাহলে তো কথাই নেই।
এমবাপে টানা চতুর্থবারের মতো লিগ ওয়ান-এর বর্ষসেরা খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছেন; এখন রয়েছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে ইউরো বাছাইপর্বে অংশ নিতে। কোচ দিদিয়ের দেশমের অধীনে ইতোমধ্যে অনুশীলন শুরু করেছে ফ্রান্স দল।