ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ম্যাচের ৯৮ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপের পেনাল্টিতে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সাথে ১-১ গোলে ড্র করে নক আউট পর্ব নিশ্চিতের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। পক্ষান্তরে, এই ড্রয়ে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কায় পড়েছে।
নিউক্যাসল গত মাসে সেইন্ট জেমস পার্কে পিএসজি’র বিপক্ষে ৪-১ গোলে জয়ী হয়েছিল। দলটি মঙ্গলবার আলেক্সান্দার ইসাকের ২৫ মিনিটের গোলে গ্রুপ এফ-এর ম্যাচে এগিয়ে গিয়ে আরও একবার পিসজিকে পরাস্ত করার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচে ফিরে আসতে মরিয়া পিএসজি শেষ পর্যন্ত ইনজুরি টাইমে ভাগ্যের জোরে রক্ষা পায়। টিনো লিভ্রামেন্টোর হ্যান্ডবলে ভিএআর পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেয়। এমবাপে স্পট কিকে কোনো ভুল করেননি। পিএসজি এখনো পর্যন্ত ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করা বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের চেয়ে তিন পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
আরেক ম্যাচে ডর্টমুন্ড গ্রুপের তলানির দল এসি মিলানকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে। এই গ্রুপের শেষ ম্যাচে ডর্টমুন্ডকে হারাতে পারলেই নক আউট পর্বে উঠবে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। অন্যদিকে, ঘরের মাঠে মিলানকে শুধু হারালেই হবে না, পিএসজি’র পরাজয়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে নিউক্যাসলকে।
নিউক্যাসল ম্যানেজার এডি হাউ বলেছেন, ‘আমি মনে করি, পেনাল্টির সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি। এটাই আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশার। কারণ, এমন অবস্থায় ম্যাচে ফিরে আসার মতো সময় আমাদের হাতে ছিল না। কিন্তু এখানে বলার কিছুই নেই।’
এই ম্যাচে পরাজিত হলে নিউক্যাসলের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যেত। যে-কারণে ক্লাবটি অন্তত টিকে থাকার বিষয়ে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে। পক্ষান্তরে গ্রুপের পাঁচ ম্যাচে তৃতীয় পরাজয় এড়িয়ে পিএসজি কাতারের মালিকানা শুরুর পরে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোর আগেই বিদায়ের শঙ্কা থেকে আপাতত মুক্তি পেলো।
পিএসজি বস লুইস এনরিকে বলেছেন, ‘আমাদের জেতা উচিত ছিল, এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি মনে করি, এটা আমাদের জন্য একটি পরিপূর্ণ পারফরমেন্স। আমরা নিউক্যাসলের চেয়ে ভালো খেলেছি। কিন্তু এটাই ফুটবল। ভিএআর সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আমি শুধুমাত্র দলের পারফরমেন্সের উন্নতির বিষয়ে কথা বলতে পারি।’
পিএসজি গত এক দশকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিয়মিতভাবেই হতাশ করেছে। তবে এদিন এমবাপের মৌসুমের সপ্তদশ গোলে কিছুটা স্বস্তি তাঁরা পেতেই পারে। এমবাপে এদিন মারকুইনহোসের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মাঝে-মাঝেই তিনি ছন্দ হারিয়ে ফেলছিলেন, যা দলের উপর প্রভাব ফেলেছে। যদিও নিউক্যাসল ডিফেন্ডার কিয়েরান ট্রিপিয়ার ও জামাল লাসেলেসের কঠিন প্রতিরোধের মুখে এমবাপে নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেননি।
পার্ক ডি প্রিন্সেসে সফরকারী দল প্রায়শই স্বাগতিকদের উপর আগ্রাসী হয়ে উঠছিল। অবশ্য পিএসজিও কম যায়নি। নবম মিনিটে রান্ডাল কোলো মুয়ানির সহায়তায় আশরাফ হাকিমি এমবাপেকে বল দেন। কিন্তু এমবাপের ব্যাক হিলের আক্রমণ রুখে দেন নিউক্যাসল গোলরক্ষক নিক পোপ।
দ্বাদশ মিনিটে মিগুয়েল আলমিরনের ক্রসে ইসাকের শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়। ২৪ মিনিটে আর ভুল করেননি ইসাক।
এক গোলে এগিয়ে থাকা উজ্জীবিত নিউক্যাসল এরপর বারবার প্রমাণ করেছে – গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পাশাপাশি কেন তাঁদের রক্ষণভাগকেও ইংল্যান্ডে সেরার তকমা দেওয়া হয়েছিল। নিউক্যাসলের ডিফেন্স একে একে এমবাপে, ওসমানে ডেম্বেলে ও কোলো মুয়ানিকে প্রতিহত করে পিএসজি’র হতাশা বাড়িয়েছে।
প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে ডেম্বেলেকে হতাশ করেন পোপ। ৬৬ মিনিটে এমবাপের অ্যাসিস্টে বদলি খেলোয়াড় ব্র্যাডলি বারকোলার শট রুখে দেন পোপ। এরপর এন্থনি গর্ডনের বিপক্ষে হাকিমিকে ফাউলের অপরাধে পিএসজি পেনাল্টির জোরালো আবেদন জানিয়েছিল; কিন্তু ভিএআর সেটি আমলে নেয়নি। কিছুক্ষণ পরেই টিনএজার লুইস মিলের হ্যান্ডবলও এড়িয়ে যান রেফারি।
পোপ ৮৭ মিনিটে এমবাপের শট সেইভ করেন। কিন্তু ইনজুরি টাইমে আর শেষ রক্ষা হয়নি। লিভ্রামেন্টোর হ্যান্ডবলে ভিএআর এবার পেনাল্টি উপহার দেয় পিএসজিকে। এমবাপে স্পট কিক থেকে গোল করে দলের গুরুত্বপূর্ণ এক পয়েন্ট নিশ্চিত করেন।