মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস ১৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে জয়দেবপুরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করেছিলেন। প্রতিবছর এই দিনে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। এবারও দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। খবর – স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
ঊনিশে মার্চ উদযাপন পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৯ মার্চের বীরত্বকে অমর করে রাখতে ১৯৭২-৭৩ সালে গাজীপুরের চৌরাস্তায় একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামের এই ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য।
সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে গাজীপুর সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এক নিবন্ধে বলেছেন, ১৭ মার্চ ১৯৭১ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে লাখ-লাখ জনতার ঢল নেমেছিল। এ-সময় কুর্মিটোলা (ঢাকা) সেনানিবাসে “অস্ত্রের মজুদ কমে গেছে” অজুহাতে জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করে সেখান থেকে রক্ষিত অস্ত্র নিয়ে আসার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্রের সংবাদ বঙ্গবন্ধুকে জানাই। এ-অবস্থায় আমাদের করণীয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তুই একটা আহম্মক, কি শিখিছিস যে – আমাকে বলে দিতে হবে’। একটু পায়চারি করে রাগতস্বরে বললেন – ‘... বাঙালি সৈন্যদের নিরস্ত্র করতে দেওয়া যাবে না...।’ নেতার হুকুম পেয়ে গেলাম।
তিনি জানান, ১৯শে মার্চ আকস্মিকভাবে পাকিস্তানি বিগ্রেডিয়ার জাহান জেবের নেতৃত্বে পাকিস্তানি রেজিমেন্ট জয়বেদপুরস্থ (গাজীপুর) দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার উদ্দেশ্যে পৌঁছে যায়। তখন বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক-জনতা চারিদিক থেকে লাঠিসোটা, দা, কাতরা, ছেন, দোনালা বন্দুকসহ জয়দেবপুর উপস্থিত হয়।
মোজাম্মেল হক বলেন, জয়দেবপুর রেলগেইটে মালগাড়ীর বগি, রেলের অজেকো রেললাইন, স্লিপারসহ বড় বড় গাছের গুড়, কাঠ, বাঁশ, ইট ইত্যাদি যে-যেভাবে পেরেছে – তা দিয়ে এক বিশাল ব্যারিকেড দেওয়া হয়। জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত কয়েকটি ব্যাড়িকেড দেওয়া হয়েছিল – যাতে পাকিস্তানিবাহিনী অস্ত্র নিয়ে ফেরৎ যেতে না-পারে।
ছাত্র-জনতা যখন ব্যারিকেড দিচ্ছিল – তখন টাঙ্গাইল থেকে রেশন নিয়ে একটি কনভয় জয়দেবপুর চৌরাস্তার দিকে আসছিল। সেই রেশনের গাড়িটি জনতা আটকে দেয়। সেই কনভয়ে থাকা সৈন্যদের কাছ থেকে সংগ্রামী ছাত্র-জনতা চাইনিজ রাইফেল ও এলএমজি কেড়ে নেয় এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ-সময় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর গুলিতে চান্দনা চৌরাস্তায় ও জয়দেবপুরে কয়েকজন শহীদ হন, আহত হন শতশত বীর জনতা। সেই স্থানে (চৌরাস্তার মোড়ে) ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নামে ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে। জয়দেবপুর রাজবাড়ির জেলা প্রশাসনের সামনেও আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে।