জার্মানির ক্লাব লেভাকুজেন দেশটির ফুটবলে নতুন এক ইতিহাস গড়লো প্রথমবারের মতো শীর্ষ ঘরোয়া লিগ – বুন্দেসলিগার শিরোপা জয় করে। জাবি আলোন্সোর শিষ্যরা নিজ মাঠ বে অ্যারেনায় রোববার (১৪ এপ্রিল) ওয়ের্ডার ব্রেমেনের বিপক্ষে ৫-০ গোলের বিশাল জয়ে এই নতুন এক কাব্য রচনা করলো। লেভাকুজেনের এই জয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন ফ্লোরিয়ান ভার্টজ। বায়ার্ন মিউনিখ হেরে গেলে আগের দিনই শিরোপা উৎসবে মাতোয়ারা হতো দলটি। অপেক্ষা একদিন বাড়লেও লেভাকুজেনের সমর্থকরা নিজ মাঠে বড় জয়ে প্রথমবার লিগ জেতার আনন্দে ভাসছেন। ক্লাবটি জার্মানির শীর্ষ লিগে উন্নীত হওয়ার পরে এর আগে পাঁচবার রানারআপ হলেও তাঁরা একবারও পারেনি শিরোপা ঘুরে তুলতে। লেভাকুজেন এবার আলোন্সোর কোচিংয়ে সেই অসাধ্য সাধন করলো; তা-ও আবার মৌসুমের পাঁচ ম্যাচ বাকী থাকতেই এবং জার্মান ফুটবলের সবচেয়ে সফল ক্লাব বায়ার্ন পেছনে ফেলে। ২৯ ম্যাচ শেষে লেভাকুজেনের সংগ্রহ ৭৯ পয়েন্ট। সমান-সংখ্যক ম্যাচ থেকে বায়ার্নের অর্জন ৬৩ পয়েন্ট। মৌসুমের বাকী পাঁচ ম্যাচেই যদি বায়ার্ন জেতে, আর লেভাকুজেন হারে, তাহলেও বায়ার্ন তাঁদের পেছনে ফেলতে পারবে-না।
বুন্দেসলিগায় ১৮টি দল মৌসুম শুরু করবে, আর শেষে ট্রফি উৎসব করবে বায়ার্ন মিউনিখ – টানা ১১ বছর এমনটাই দেখে এসেছে ফুটবলবিশ্ব। অবশেষে এক দশকের বেশি সময় পর বায়ার্ন রাজত্বের অবসান ঘটলো; জার্মান ফুটবলের শিরোপা মাথায় তুলল নতুন ক্লাব – বায়ার লেভাকুজেন। দলটি লিগে পাঁচ ম্যাচ বাকি থাকতেই ২০২৩-২৪ বুন্দেসলিগায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। লেভাকুজেনে ১২০ বছরের ক্লাব ইতিহাসে এটিই শীর্ষ লিগে প্রথম ট্রফি।
ক্লাবটি এর আগে পাঁচবার রানার্সআপ হয়েছে।
ওয়ের্ডার ব্রেমেনকে ৫-০ গোলে হারানোয় লেভাকুজেনের পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ২৯ ম্যাচে ৭৯। লিগ পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা বায়ার্ন মিউনিখের পয়েন্ট সমান ম্যাচে ৬৩। দুই দলের ব্যবধান ১৬ পয়েন্ট হয়ে যাওয়ায় পরের পাঁচ ম্যাচে হারলেও শীর্ষেই থাকবেই লেভাকুজেন।
জিতলেই শিরোপা – এমন সমীকরণ থাকায় লেভারকুসেন সমর্থকেরা রোববার (১৪ এপ্রিল) বিজয়োৎসবের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে এসেছিলেন। পতাকা, ব্যানার আর স্কার্ভ তো ছিলই, অনেকেই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বুন্দেসলিগা ট্রফির রেপ্লিকা। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার পরই শুরু হওয়ার কথা শিরোপা-উৎসব। কিন্তু একটা ট্রফির জন্য ক্ষুধার্ত লেভাকুজেন সমর্থকদের এতক্ষণ অপেক্ষা সহ্য হয়নি। ২৫ মিনিটে প্রথম আর ৬০ মিনিটে দ্বিতীয় গোল হতেই জয় নিয়ে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। ৬৮ মিনিটে ফ্লোরিয়ান ভার্টজের গোলের পর তো তখনই মাঠে নেমে পড়েন অবস্থা। শেষ পর্যন্ত মাঠে নেমে পড়েছেনও। ৮৩ মিনিটে ভার্টজ নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ গোল করার সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড় করে মাঠে নেমে পড়েন দর্শকেরা।
কয়েক মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর আবার শুরু করা হয়। তবে ৮৯তম মিনিটে ভার্টজ দলের পঞ্চম গোল করার পর আর খেলা শুরুই করা যায়নি। চারপাশের গ্যালারি থেকে দর্শকের ঢল নামে মাঠের ভেতরে। খেলোয়াড়দের বেশির ভাগ মাঠ ছাড়তে পারলেও দর্শকের ভালোবাসায় আটকা পড়েন ভার্টজ।
হ্যাটট্রিক করা জার্মান ফরোয়ার্ডকে আলিঙ্গনে, চুমুতে মাঠ ছাড়ারই সুযোগ দিচ্ছিলেন-না কেউ। সবাই তো আর কোনো খেলোয়াড় বা কোচিং স্টাফকে পাচ্ছিলেন-না, সামনে যে-যাকে পাচ্ছেন – জড়িয়ে ধরছেন, চিৎকার করছেন, গোল পোস্টের জাল কাটছেন... আর এরই মধ্যে কেউ কেউ একা দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন। এই জল খুশির, প্রথমবার বুন্দেসলিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ...।
