ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফরাসি ক্লাব লিল বুধবার (২ অক্টোবর) বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে ১-০ গোলে পরাজিত করেছে। আরেক ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে ১৯৮২ সালের ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে অ্যাস্টন ভিলা। লিভারপুল নতুন বস আন্দ্রে স্লটের অধীনে ঘরের মাঠে বোলোনিয়াকে ২-০ গোলে পরাজিত করে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। দি রেডস এর মাধ্যমে এবারের মৌসুমে ইতালিয়ান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় জয় পেলো। এর আগে এসি মিলানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে উড়ন্ত সূচনা করেছে স্লটের দল।
কিলিয়ান এমবাপ্পে ইনজুরি কাটিয়ে এদিন মাদ্রিদ দলে ফিরেছিলেন। তিনি বদলী হিসিবে লিল-এর মাঠে খেলতে নামেন। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে জোনাথন ডেভিডের স্পট কিকে জানুয়ারির পর সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৩৬ ম্যাচ পর কার্লো আনচেলত্তির দল পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পায়।
ম্যাচ শেষে আনচেলত্তি বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য মোটেই সুখকর রাত ছিল-না। এই পরাজয়ে কোনো যুক্তি আমরা দিতে চাচ্ছি-না। ম্যাচের শেষভাগে সমতায় ফেরার সুযোগ এসেছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা কাজে আসেনি।’
ক্যানাডিয়ান জাতীয় দলের স্ট্রাইকার ডেভিড সপ্তাহের মাঝামাঝিতে লিগ ওয়ানে হ্যাটট্রিক করেছেন। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই হয়তো জয়সূচক গোলটি দিয়েছেন। এডোন জেগ্রোভার শট হাত দিয়ে ব্লক করে লিলিকে পেনাল্টি উপহার দেন এডুয়ার্ডো কামাভিনগা।
গোলরক্ষক লুকাস শেভালিয়ার রিয়ালের বেশ কিছু শট রুখে দিয়ে কার্যত লিলকে রক্ষা করেছেন। আর এতেই রেকর্ড ১৫বারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের পরাজয় নিশ্চিত হয়।
অন্যদিকে, ইন-ফর্ম কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড জন ডুরানের দুর্দান্ত গোলে ভিলা বায়ার্নকে পরাজিত করেছে। ৭৯ মিনিটে ডুরানের যাদুকরী লব ম্যানুয়েল নয়্যা পজিশন থেকে বের হয়ে আসায় আটকাতে পারেননি। এনিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে নিলো ভিলা। ৪১ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান সর্বোচ্চ আসরে খেলতে এসেছে ভিলা। শেষ মুহূর্তে হ্যারি কেইন সমতা প্রায় ফিরিয়েই এনেছিলেন। কিন্তু ভিলা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ দারুণ দক্ষতায় তাঁকে রুখে দেন।
মার্টিনেজ ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘এটি সত্যিই অকল্পনীয়। ভিলা পার্কে যোগ দেওয়ার পরে এমন পরিবেশ আমি আগে কখনো দেখিনি। এতটাই চিৎকার শুনেছি যে – আমার কান একটা পর্যায়ে ব্যথা করছিল। এখনো অনেক ম্যাচ বাকি। আমাদের মূল লক্ষ্য – শীর্ষ আটে জায়গা করে নেয়। প্রতিটি ম্যাচে ধীরে ধীরে আমরা সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চাই।’
অ্যানফিল্ডে এ্যালেক্সিস ম্যাক এ্যালিস্টার মোহাম্মদ সালাহর ক্রস থেকে পোস্টের খুব কাছে থেকে লিভারপুলকে ১১ মিনিটে এগিয়ে দেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথমবারের মত খেলতে আসা বোলোনিয়ার পক্ষে ড্যান এনডোয়ে সমতা ফেরাতে ব্যর্থ হন। তার শটটি পোস্টে লেগে ফেরত আসে। ৭৫ মিনিটে সালাহর কার্লিং শটে লিভারপুলের জয় নিশ্চিত হয়।
প্রথম ম্যানেজার হিসেবে স্লটের অধীনে লিভারপুল প্রথম নয় ম্যাচের আটটিতেই জয়ী হয়েছে। এমনকি এই যাত্রায় স্লট ইউর্গেন ক্লপ, কেনি ডালগ্লিশ, বিল শাঙ্কলি ও বব পেইসলির মত সফল কোচদের পিছনে ফেলেছেন। স্লট বলেন, ‘এই ক্লাবের হয়ে বিশেষ কিছু করা সবসময়ই কঠিন। আমরা যেভাবে শুরু করেছি – তাতে সবকিছুই স্পষ্ট।’
ইউভেন্টাস জার্মানিতে আর বি লাইপজিগের বিপক্ষে ৩-২ গোলে জয় তুলে নিয়েছে। ডি বক্সের বাইরে এসে হাত দিয়ে বল আটকানোর চেষ্টায় গোলক্ষক মাইকেল ডি গ্রেগোরিও ৫৯ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হলে ইউভেন্টাসকে বাকি সময়টা ১০ জন নিয়ে লাইপজিগকে প্রতিরোধ করতে হয়েছে। বেঞ্জামিন সেসকোর দুই গোলে লাইপজিগ দুইবার লিড নিয়েছিল। কিন্তু দুইবারই ডুসান ভ্লাহোভিচের গোলে সমতায় ফেরে ইউভেন্টাস। ৮২ মিনিটে ফ্রান্সিসকো কনসেইকোর দুর্দান্ত গোলে ইউভেন্টাসের জয় নিশ্চিত হয়।
৩৬ দলের এবারের নতুন ফর্মেটের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যে-সাতটি দল দুই ম্যাচে সর্বোচ্চ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে, ইউভেন্টাস তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ লিসবনে স্বাগতিক বেনফিকার কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে। কেরেম আতুর্কগ্লুর গোলে পর্তুগিজ ক্লাবটি এগিয়ে যাবার পরে আনহেল ডি মারিয়া পেনাল্টি স্পট থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। ৭৫ ও ৮৪ মিনিটে আরো দুই গোল করেছেন আলেক্সান্দার বাহ ও ওরকুন কোকচু।
মোনাকো দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও ডিনামো জাগ্রেবের সাথে ২-২ গোলে ড্র করে মাঠ ছেড়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নতুন খেলতে আসা জিরোনা ফেইনুর্ডের কাছে ঘরের মাঠে ৩-২ গোলের পরাজয়ের মাধ্যমে টানা দুই ম্যাচে পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে।
