বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) চীনের নিংবো শহরে বেপজা এবং নিংবো ডেক্সি চেম্বার অফ কমার্সের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘বেজাধীন ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে বলেন, ‘আসুন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ অন্বেষণ করুন, যেখানে সম্ভাবনা মিলিত হয় কর্মক্ষমতায় এবং অংশীদারিত্ব সমৃদ্ধির দিকে ধাবিত করে।’
বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এবং গতিশীল অর্থনীতির গুরুত্ব তুলে ধরে বেপজা নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগ স্থলে অবস্থিত, যা আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার প্রদান করে। আমাদের ১৮ কোটির বেশি জনসংখ্যা, যা প্রধানত তরুণ, শিক্ষিত এবং অত্যন্ত দক্ষ, এমন একটি শক্তিশালী শ্রমশক্তি নিশ্চিত করে – যা ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের মূল আকর্ষণ হলো, এদেশের সস্তা ও সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য শ্রমশক্তি এবং শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি – যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতিসমূহ ক্রমাগত উদারীকরণ করা হয়েছে।
মেজর জেনারেল রহমান বেপজার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কেও আলোকপাত করেন; যার মধ্যে রয়েছে মীরসরাই, চট্টগ্রামে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন, যেখানে ইতোমধ্যে ৪১টি প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে বেপজার সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এছাড়া, যশোর, পটুয়াখালী এবং গাইবান্ধা জেলায় তিনটি নতুন ইপিজেড স্থাপনের কাজও চলছে, যা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত হবে।
নিংবো ডেক্সি চেম্বার অফ কমার্স-এর নির্বাহী পরিচালক চাও চুইং চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, যেখানে প্রথাগত শিল্প, যেমন – পাট এবং চামড়া থেকে শুরু করে নতুন ক্ষেত্র যেমন ডিজিটাল অর্থনীতি এবং পরিবেশ রক্ষায় দুই দেশের সহযোগিতা বিস্তৃত হচ্ছে।
চুইং বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, চীন এবং বাংলাদেশের সহযোগিতা আরও বাড়বে, যা উভয় দেশের জন্য ফলপ্রসূ হবে’।
নিংবো আসিয়ে চেম্বার অফ কমার্স-এর সেক্রেটারি জেনারেল চাও মু জি সেমিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এই সেমিনার চীনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও সম্ভাবনা নিয়ে আরও জানার সুযোগ সৃষ্টি করবে। তিনি চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের ইপিজেড এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধাগুলো অন্বেষণ করার সুযোগের কথা তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, এ-পর্যন্ত ৩৮টি দেশের বিনিয়োগকারী বেপজাধীন ইপিজেড এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করেছেন, যেখানে ৪৪৯টি চালু শিল্প প্রতিষ্ঠানে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঁচ লাখের অধিক বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে শুধু চীনা বিনিয়োগকারীরা ১০৭টি শিল্প ইউনিট স্থাপন করেছেন, যেখানে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে এবং ১ লাখ ৩৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সেমিনারে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী ছাড়াও স্থানীয় মিডিয়া, বিনিয়োগ বিশ্লেষক এবং ব্যবসায়ী আইনজীবীসহ প্রায় ১২০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। নির্বাহী চেয়ারম্যান ছাড়াও বেপজার নিবাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তানভীর হোসেন, পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তারেক হোসেন এবং পরিচালক আলী ইসতিয়াক চৌধুরী সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।