loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ সবাই খালাস

  • বিনিয়োগ সংস্থা এক ছাতার নিচে আনতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

  • বেগম খালেদা জিয়া এখন ‘অনেকটা বেটার’: মির্জা ফখরুল

  • ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ১৬ নির্দেশনা জারি

  • বিশ্ব ইজতেমা ৩১ জানুয়ারি শুরু

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ সবাই খালাস


জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ সবাই খালাস

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় শাস্তি বৃদ্ধি করে হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সবাইকে খালাস দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ সর্বসম্মতভাবে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এই রায় দেন। খবর – স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, জাকির হোসেন ভূইয়া ও মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ। এই মামলায় আরেক আপিলকারি কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনিক আর হক। দুদক-এর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মো. আসিফ হাসান।

আপিল শুনানিতে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সর্বোচ্চ আদালতকে বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠনের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া সই-স্বাক্ষর করেছেন – এমন কোনো নথি প্রসিকিউশন দেখাতে পারেনি। আর টাকা কোথা থেকে এসেছে – তা-ও দেখাতে পারেনি। আর যে-অর্থ আত্মসাৎ করার কথা বলা হয়েছে, তা ব্যাংক হিসাবে রক্ষিত আছে এবং সেই টাকা সেখানে আরও অনেক বেড়েছে। এই মামলার বিচারে সংবিধান ও আইন অনুসরণ করা হয়নি। মামলাটি আইনগত, মৌখিক, এমনকি শোনা সাক্ষ্য প্রমাণহীন। সর্বোপরি অনুমান নির্ভর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যদের দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এর আগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) গত ১১ নভেম্বর মঞ্জুর করে ১০ বছরের কারাদণ্ড স্থগিতের আদেশ দেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ।

শুনানিতে দুদক-এর আইনজীবী মো.আসিফ হাসান আদালতকে বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি; জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে। তবে সুদ ও আসলসহ টাকাটা অ্যাকাউন্টেই জমা আছে। কোনো টাকা ব্যয় হয়নি।’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিচারিক আদালতে এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার দেওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় বক্তব্য তুলে ধরে সর্বোচ্চ আদালতকে বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই ‘রাজবন্দীর জবানবন্দি’র প্রতিফলন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যে উঠে এসেছে। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি এতিম তহবিল-সংক্রান্ত কোনো অনুদান গ্রহণ বা বিতরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন-না।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বকশীবাজারে অবস্থিত কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। আদালত একই সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন। 

একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার শাস্তি বৃদ্ধি চেয়ে দুদক-এর করা আবেদনে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর সাজা বৃদ্ধিতে দুদক-এর আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ১০ বছর করেন।

এদিকে, গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে রাষ্ট্রপতি ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা’য় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। তবে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমার পরেও মামলা দু’টি আইনগতভাবে লড়ার কথা জানিয়ে বিএনপি’র আইনজীবীরা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি তাঁর সাজা মওকুফ করেছেন; তবে সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি, তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই, এটা আইনগতভাবে মোকাবেলা করবেন। 

বেগম খালেদা জিয়া সেই অনুযায়ী আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন।

Loading...