loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

  • বিশ্বকবি’র ১৬৪তম জন্মবার্ষিকীতে তিনদিনের কর্মসূচি শুরু

  • ঈদ উপলক্ষ্যে ১১ ও ১২ জুন ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি

  • আর্সেনালকে হারিয়ে স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি পিএসজি

  • প্রধান উপদেষ্টা ও দেশবাসীর প্রতি বিএনপি-প্রধানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে: প্রধানমন্ত্রী


সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। তাহলে তাঁরা কেন সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘সবাই এটা জানে (উচ্চ আদালতের রায় এবং সংবিধান সংশোধন)। এটা জানার পরও তাঁরা কেন সাংবিধানিক সংকট তৈরির চেষ্টা করছে? এর উদ্দেশ্যটা কি? এর অর্থ গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করা।’ প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সুইটজাল্যান্ড ও কাতার সফরের ফলাফল নিয়ে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

শেখ হাসিনা বলেন, কোনো অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের একটি রায় আছে যে – একজন নির্বাচিত সরকার-প্রধানের স্থলাভিষিক্ত হবেন অন্য নির্বাচিত সরকার-প্রধান এবং সেই অনুযায়ী সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছর ধরে চলমান গণতান্ত্রিক ধারা ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ধ্বংস করে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করাই এঁদের উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, এখন এটা দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করছে যে – তাঁরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ চায়, না-কি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বাংলাদেশ যে-পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল – আবার তা চায়।

বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দল রাজপথে নেমেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন যে, তাঁদের সমস্যা কি ও তাঁদের অর্থের উৎস কোথায়? তিনি আরও বলেন, সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আগামী সাধারণ নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে।

এ-সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ড. আনিসুল হক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে, কারণ ‘আমরা অনেক সংগ্রাম ও রক্তের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি।’ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকায় দেশ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা কি চান না এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক?

শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের পরের পরিস্থিতির কথা ভাবার আহ্বান জানান – যখন কোনো নির্বাচন ছিল না, জনগণের ভোটাধিকার ছিল না ও সব অধিকার একটি নির্দিষ্ট স্থানেই আবদ্ধ ছিল।  তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা (ভোট) জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে-কেউ যা কিছু বলতে পারে। তবে, আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং সে-কারণেই দলটি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি, নির্বাচন গণতান্ত্রিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে এবং যে কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তিনি চারবার ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করেছেন। এমন নয় যে – তিনি ক্ষমতা এসে তা (উন্নয়ন) ভোগ করেছেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, যাঁরা দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, যাঁরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের পুরস্কৃত করেছে এবং গণতন্ত্রকে হাইজ্যাক করে গণতন্ত্রের প্রবক্ত হয়েছে – সাধারণত, তাঁরা দেশের কল্যাণ চায় না বরং তাঁরা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। তাঁরা দেশি ও বিদেশি শক্তি উভয়ের সহায়তায় দেশে একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের সচেতন নাগরিকরা এটাকে গুরুত্ব দেবে না।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাড়ে ১৪ বছর আগে বাংলাদেশ কোথায় ছিল, জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা কি ছিল আর এখন বাংলাদেশের অবস্থা কি হয়েছে – তা তাঁরাই বিচার করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে কি-না, জনগণের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে কি-না, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে কি-না – সচেতন নাগরিকদের আগে তা বিবেচনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমার (জনগণের উপর)আস্থা আছে। কারণ, আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তাঁরা আমাকে ভোট না দিলে আমি এখানে (ক্ষমতায়) থাকবো না, কিন্তু কখনোই ভোট কারচুপি করবো না।’ তিনি বলেন, যাঁরা ভোট ডাকাত এবং যাঁরা খুন ও কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, তাঁরাই এখন আওয়ামী লীগকে ভোট কারচুপির অপবাদ দিচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করেছে এবং সেই আইন অনুযায়ী কমিশন গঠন করেছে। ছবি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ইভিএমসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছে ইসি তাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, যাঁরা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন পছন্দ করে না, তারাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এক প্রশ্নের জবাবে সরকার-প্রধান বলেন, তিনি (সবাইকে) বারবার বলেছেন যে নির্বাচন কমিশন যখন ঘোষণা করবে, নির্বাচন সেই নির্ধারিত সময়েই হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেবে এবং নির্বাচন হবে, জনগণ তাঁদের ভোট দেবে। তাঁরা যদি আমাকে ভোট দেয়, তবে আমি এখানে থাকবো, অন্যথায় নয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত করার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এখন ২০২৬ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জনগণই বেছে নেবে – কাদের এটি (উন্নয়নশীল দেশ) বাস্তবায়নের সামর্থ্য আছে এবং কারা তা করতে পারবে। ‘এটি সম্পূর্ণভাবে জনগণের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে এবং এখানে আমার কিছু করার নেই।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একক ব্লকের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশ ব্রিকস-এ যোগ দেবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ব্রিকস গঠনের প্রস্তুতির পর থেকে আমরা এর সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু, আমরা এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পারিনি। তবে, আমরা এতে যোগ দেবো। এখন আমরা এর সদস্য হতে চেয়েছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের যেকোনো একক বলয়ের আমরা আর নির্ভরশীল থাকবো না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শুধু ডলারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না। বরং অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গেও বিনিময় করতে চায়। মূল্যস্ফীতি ও পণ্যের অবৈধ মজুদ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট রয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে – যাঁরা পণ্যের অবৈধ মজুদ করে। এর কারণে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ঈদ-উল-আজহাকে সামনে রেখে এক কোটি মানুষকে বিনামূল্যে খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সংখ্যালঘুদের প্রতি দমন-পীড়ন নিয়ে প্রচারণার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ-বিষয়ে একটি অপপ্রচার শুরু হয়েছে – যা আগামী নির্বাচনের আগে আরও বাড়বে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে-উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীকে এইসব অপপ্রচারে কর্ণপাত না করার আহ্বান জানান।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে তিনি কখনোই দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করবেন না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে কাউকে তিনি ছিনিমিনি খেলতে দেবেন না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি।’ তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পরও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বিবাদে জড়ায়নি।

বাংলাদেশ এই ইস্যুতে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব এবং কারো সাথে বৈরীতা নয়’ নীতিতে বিশ্বাসী। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা তাঁদের (মিয়ানমার) সঙ্গে সংঘর্ষ-সংঘাত বা যুদ্ধে জড়াইনি।’

প্রধানমন্ত্রী কাতার ইকোনমিক ফোরাম-২০২৩-এ যোগ দিতে ২২ থেকে ২৫ মে কাতার সফর করেন এবং আইএলও-এর একটি শীর্ষ সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ার্ক সামিট: সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’-এ যোগ দিতে ১৩ থেকে ১৬ জুন সুইটজাল্যান্ড সফর করেন।

Loading...