বছরের তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম – উইম্বলডন শুরু হওয়ার আগে থেকেই বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা কার্লোস আলকারাজ ও সাবেক শীর্ষ তারকা নোভাক জকোভিচের সম্ভাব্য দ্বৈরথ নিয়ে টেনিস বিশ্বের একটি প্রত্যাশা ছিল। ফাইনালে উঠে সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছেন জকো-আলকারাজ। উইম্বলডনের হাই-ভোল্টেজ ফাইনালে রোববার (১৬ জুলাই) মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন দুই প্রজন্মের দুই শীর্ষ টেনিস খেলোয়াড়।
এর আগে, শুক্রবার সেমিফাইনালে নিজেদের ম্যাচে দাপুটে জয়ের মাধ্যমে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছেন এবারের আসরেরও শীর্ষ এই দুই তারকা। ইউএস ওপেন বিজয়ী আলাকারাজ শেষ চারে দানিল মেদভেদেভকে দাঁড়াতেই দেননি। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ঘাসের-কোর্টের টুর্নামেন্টে তিন নম্বর মেদভেদেভকে ৬-৩, ৬-৩, ৬-৩ গেমের সরাসরি সেটে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেছেন স্প্যানিশ এই তরুণ। আরেক সেমিফাইনালে বর্তমান অস্ট্রেলিয়ান ও ফ্রেঞ্চ ওপেন চ্যাম্পিয়ন জকোভিচ ইতালিয়ান নাম্বার এইট ইয়ানিক সিনারকে ৬-৩, ৬-৪, ৭-৬ (৭/৪) গেমে পরাজিত করে নবমবারের মতো ফাইনাল নিশ্চিত করেছেন। গ্র্যান্ড স্ল্যামে এটি জকোভিচের রেকর্ড ৩৫তম ফাইনাল।
রোববারের ফাইনালে ৩৬ বছর বয়সী সার্বিয়ান তারকা জকোভিচ কিংবদন্তি রজার ফেদেরারের অষ্টম উইম্বলডন শিরোপা এবং মার্গারেট কোর্টের সর্বকালের সর্বোচ্চ ২৪তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড স্পর্শ করার লক্ষ্যে কোর্টে নামবেন।
জকোভিচ গত জুনে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে আলকারাজকে পরাজিত করেছিলেন। আলকারাজ অবশ্য ইনজুরির কারণে ঐ ম্যাচে খুব একটা বেশিদূর যেতে পারেননি। ২০ বছর বয়সী আলকারাজ বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জকোভিচকে পরাজিত করার ক্ষমতা আমার রয়েছে। তিনি একজন কিংবদন্তি খেলোয়াড় – এটা সবাই জানে। তবে, আমি লড়াই করবো। আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে। এখানে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই; পরিশ্রান্ত হওয়ার সময় নেই।’
পক্ষান্তরে, জকোভিচ বিশ্বাস করেন, গ্র্যান্ড স্ল্যামের অভিজ্ঞতা তাঁকে রোববারের ফাইনালে এগিয়ে রাখবে এবং এই বিষয়টি ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। একইসাথে, আলকারাজকে নিয়ে সতর্কবার্তাও উচ্চারণ করেছেন নোভাক, ‘সে দারুণ ছন্দে রয়েছে। তাঁর মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছেশক্তি রয়েছে। বয়সে তরুণ, তাঁর মধ্যে শিরোপা জয়ের ক্ষুধা রয়েছে। একইসাথে আমি ক্ষুধার্ত। দেখা যাক – কি হয়।’
দুই বছর আগে আলকারাজ যখন উইম্বলডনে মেদভেদেভের কাছে দ্বিতীয় রাউন্ডে সরাসরি সেটে পরাজিত হয়ে বিদায় নিয়েছিলেন, তখন স্প্যানিশ এই তরুণ মাত্র সাতটি গেমে জয়ী হয়েছিলেন। ঐ সময় আলকারাজ ছিলেন র্যাঙ্কিংয়ের ৭৫ নম্বরে; মেদভেদেভের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এবার সেমিতে আলকারাজ তাঁর শক্তিশালী সার্ভিস দিয়েই প্রথম সেটে ৫-৩ ব্যবধানের লিড নেন। দ্বিতীয় সেটের দ্বিতীয় গেমে মেদভেদেভ শুধুমাত্র একবার ব্রেক পয়েন্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু, তৃতীয় সেটে আবারো নিজেকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনেন ইউএস ওপেন বিজয়ী আলকারাজ। তৃতীয় সেটে আলকারাজ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পরে চারটি ব্রেক পয়েন্ট হারান। এক ঘন্টা ৫০ মিনিটের লড়াইয়ে ২৭তম ফোরহ্যান্ড উইনিং শট দিয়ে প্রথমবারের মতো উইম্বলডনের ফাইনালে উঠেন আলকারাজ।
অন্যদিকে, সিনারের বিরুদ্ধে জকোভিচের জয় কিছুটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দ্বিতীয় সেটে ধীর গতির কারণে জকোভিচকে সতর্ক করা হয়। ক্যারিয়ারের দ্বাদশ উইম্বলডন সেমিফাইনালে খেলতে নামা জকোভিচ প্রথম সেটে তিনটি ব্রেক পয়েন্ট রক্ষা করেন। দ্বিতীয় সেটের প্রথম গেমেই অবশ্য তিনি ব্রেক পয়েন্ট তুলে নেন।
সেমিফাইনালের আগে জকোভিচ নিজেকে ফেভারিট ঘোষণা করেছিলেন। আর সেই আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে সিনারের বিপক্ষে আরেকটি ব্রেক পয়েন্ট তুলে নিয়ে দ্বিতীয় সেটে ২-১’এ এগিয়ে যান। চতুর্থ গেমে সাতবারের চ্যাম্পিয়ন জকোভিচ ৩-১ ব্যবধানে লিড পান। তিনি তৃতীয় সেটের তৃতীয় গেমে তিনটি ব্রেক পয়েন্ট নষ্ট করেন। এরপর, দশম গেমে দু’টি সেট পয়েন্ট রক্ষা করেন। দুই ঘন্টা ৪৭ মিনিটের লড়াইয়ে শেষ রক্ষা হয়নি সিনারের।