মহাকালের চেনাপথ ধরে প্রতিবছরই আসে বাইশে শ্রাবণ। এবারও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণদিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করবে।
আজ ২২ শ্রাবণ; কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণদিবস। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বাংলা সাহিত্যের এই শ্রেষ্ঠ রূপকার পরলোকগমন করেন। অবশ্য, ৮০ বছর বয়সে তাঁর এই মৃত্যু দেহান্তর মাত্র। কারণ, কাজের মধ্য দিয়ে তিনি আজও বিরাজমান সর্বত্রই। তিনি বাঙালির জীবনে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে রয়েছেন সবসময়। তাঁর বাণী ও সুর অমিয় সুধা হয়ে ধরা দেয় জীবনের নানা বাঁকে। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তাঁরই লেখা। যেকোনো ক্রান্তিকালে রবি ঠাকুরের গান, কবিতা, উপন্যাস, গল্প আমাদের ধৈর্য ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়।
রবীন্দ্রনাথ দেশজ শিক্ষাব্যবস্থা বিকাশের লক্ষ্যে গড়ে তুলেছিলেন শান্তি নিকেতন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি গ্রামীণ সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কৃষির উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কৃষি ব্যাংকের ধারনা তাঁর কাছ থেকেই এসেছিল। তিনি দরিদ্র কৃষককে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে নোবেল পুরস্কারের অর্থে কৃষি ব্যাংকের কাজ শুরু করেন। বঙ্গভঙ্গ রদ করার দাবিতে হিন্দু-মুসলমানদের নিয়ে রাখিবন্ধন কর্মসূচিতে রাজপথেও নেমেছিলেন তিনি।
তিনি ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের অনুবাদের (সং অফারিংস) মাধ্যমে প্রথম এশিয় (এবং অ-ইউরোপিয়) হিসাবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
ব্রিটিশ সরকার ১৯১৫ সালে রবি ঠাকুরকে ‘নাইট’ উপাধি দিলেও ১৯১৯ সালে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি সেটি প্রত্যাখ্যান করেন।
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোয় কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও ছিলেন মন্দের ভালো। রবীন্দ্র-জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্র জীবনকথা’য় কবির মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন, ... শান্তি নিকেতনে কবি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেহ আর চলছিল না; চিকিৎসার ও সেবারও ত্রুটি নেই। অবশেষে, ডাক্তাররা পরামর্শ করে ঠিক করলেন – অপারেশন ছাড়া উপায় নেই। ৯ শ্রাবণ (২৫ জুলাই) শান্তি নিকেতন থেকে কবিকে নিয়ে যাওয়া হলো কলকাতায়। শান্তি নিকেতনের সাথে অনেক বছরের স্মৃতিজড়িত কবি কি বুঝতে পেরেছিলেন – এ-ই তাঁর শেষ যাত্রা? যাওয়ার সময় চোখে রুমাল দিচ্ছেন দেখা গেছে...।
রবীন্দ্রজীবনী থেকে জানা যায়, মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। জোড়াসাঁকো রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে তিনি বলতেন, রানী চন্দ লিখে নিতেন। কবি বলে গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল চৌদ্দোই শ্রাবণ। রানী চন্দ সেদিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন রবীন্দ্রনাথ – ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি’/ বিচিত্র ছলনা-জালে/ হে ছলনাময়ী...।’
চিকিৎসকরা অস্ত্রোপাচার করলেন, তা নিস্ফল হয়। অবস্থা দ্রুত মন্দের দিকে যেতে লাগলো, তিনি জ্ঞান হারালেন। শেষ নিঃশ্বাস পড়লো রাখীপূর্ণিমার দিন, বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২শে শ্রাবণ, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট।
কর্মসূচি|
রবীন্দ্রপ্রয়াণ দিবসে ছায়ানটের আয়োজনে ‘আঘাত করে নিলে জিনে’ শীর্ষক আয়োজন থাকছে। আজ ঢাকার ছায়ানট মিলনায়তনে সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে এই আয়োজন। অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত। অনুষ্ঠানটি ছায়ানটের ফেইসবুক পেইজে সরাসরি দেখা যাবে।