শিল্প ও গৃহায়ণ এবং গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান দেশের শিল্প উন্নয়নে কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি রাজধানীর একটি হোটেলে রোববার (৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা জরুরি। কোরিয়া দূতাবাসের সহযোগিতায় ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) ‘কোরিয়া-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা’ শীর্ষক এই সেমিনারটি আয়োজন করে। কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক সহযোগিতার মডেল তৈরীর লক্ষ্যে সেমিনারটি আয়োজন করা হয়েছিল। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। সেমিনারে কোরিয়ান দূতাবাস, কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (কোট্রা), কোরিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেবিসিসিআই), কেএক্সিম ব্যাংক এবং বাংলাদেশি ও কোরিয়ান ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশ নেন। খবর – স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘আমাদের শিল্প কারখানায়, বিশেষ করে উৎপাদন ও প্রযুক্তি খাতে কোরিয়ান বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত। আমরা একত্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করতে পারি।’
এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আখতার এফআইসিসি’র সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই সেমিনার আয়োজনের জন্য কোরিয়ান দূতাবাস এবং কেবিসিসিআই-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, উদ্ভাবন ও উন্নয়নের জন্য সহযোগিতামূলক উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
কেবিসিসিআই সভাপতি শাহাব উদ্দিন খান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে দৃঢ় অঙ্গীকারের জন্য এফআইসিসিআইকে ধন্যবাদ জানান, যা বাংলাদেশকে আরও বেশি এফডিআই আকর্ষণ করতে সহায়তা করছে। তিনি বলেন, কেবিসিসিআই এই অঞ্চলে ব্যবসার স্বার্থ রক্ষা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এফআইসিসিআই এর সাথে অংশীদারিত্ব চালিয়ে যেতে আগ্রহী।
সেমিনারের মূল বক্তা কোট্রার মহাপরিচালক সামসু কিম ‘ইনক্রিজিং এফডিআই ইন বাংলাদেশ থ্রু কোরিয়া’স সাকসেস ফ্যাক্টর্স’ শীর্ষক একটি উপস্থাপন করেন। তিনি কোরিয়ান অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কার্যকর এফডিআই নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং বাংলাদেশের জন্য এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি কোরিয়া-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (ইপিএ) প্রয়োজনীয়তা, আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে (আরসিইপি) বাংলাদেশের প্রবেশের প্রভাব উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশের এফটিএ নীতির উন্নতির জন্য কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।
কোরিয়ার প্রাইম ক্যাপ (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুক মিন কো কোরিয়ান গার্মেন্ট এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে বাংলাদেশের উৎপাদন খাত উন্নত করার বিষয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পের গতিশীলতা, শ্রম শক্তির চাহিদা, নীতিগত প্রভাব এবং দক্ষতা ও স্বচ্ছতার গুরুত্বসহ বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরেন।
স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতিনিধি ‘মোবাইল শিল্পকে রক্ষা করার জন্য ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রেশন (এনইআইআর)’ শীর্ষক একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি এনইআইআর-এর প্রয়োজনীয়তার রূপরেখা, ব্যবসার মন্দা মোকাবেলা করা এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়েও আলোচনা করেন।
কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধি উ জং-হিউন অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে বাংলাদেশে এর অবদান এবং উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে এর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
কোরিয়া ওভারসিজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (কেআইএনডি) ডিরেক্টর কিম সি-হিউং বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগিতা জোরদারে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।