স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আরও কিছু গুরুতর শারীরিক সমস্যা ধরা পড়ায় তাঁকে রাখা হয়েছিল হাসপাতালের সিসিইউতে। সোমবার (১8 নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২ টায় সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলার জনসাধারণ শুধু অস্ত্র হাতেই নয়, তাঁরা লড়েছেন গান, কবিতা ও ফুটবল পায়ে নিয়েও। ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন ফুটবলের জাদু দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরির কাজ করেছিল। জাকারিয়া পিন্টু সেই দলের অকুতোভয় অধিনায়ক ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে জাকারিয়া পিন্টু ও তাঁর নেতৃত্বাধীন ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের’ নাম অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে দেশের তৎকালীন শীর্ষ ফুটবলাররা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠন করেছিলেন ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’। এই ফুটবল দল দেশের মানুষের মুক্তির পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরি করেছিল। দলটি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১৬টি ম্যাচে অংশ নিয়েছিল, এর ১২টিতেই জিতেছিল। ওই ম্যাচের টিকিট বিক্রির অর্থ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল তুলে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে।
জাকারিয়া পিন্টু পরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ফুটবল দলকেও নেতৃত্ব দেন। তাঁর অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দল ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে অংশ নেয়।
জাকারিয়া পিন্টু একজন অসাধারণ ডিফেন্ডার এবং অধিনায়ক হিসাবেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রপতি একাদশ ও মুজিবনগর একাদশের মধ্যে প্রথম ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। তিনি মুজিবনগর একাদশের অধিনায়ক ছিলেন।
১৯৪৩ সালের ১ জানুয়ারি নওগাঁয় জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তির ফুটবল খেলা শুরু পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে। তিনি ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ক্লাবে খেলেছেন। তিনি খেলোয়াড়ি জীবন শেষে মোহামেডানের কোচ ও পরিচালক পদেও কাজ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার শোক প্রকাশ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে আমি মর্মাহত ও শোকাহত।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কিংবদন্তি অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সরকারের জন্য অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন সংগ্রহের জন্য ভারতজুড়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। তিনি যখন মাঠে খেলতেন-না, তখনও আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিতেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মুখ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।’
‘স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক হন। কিংবদন্তি এই খেলোয়াড় সেন্ট্রাল ব্যাক পজিশনে খেলতেন; একইসঙ্গে তিনি লাল-সবুজ জার্সিতে একজন অসাধারণ ডিফেন্ডার ছিলেন। দুই দশকের ক্যারিয়ার শেষ করার পর দেশের ক্রীড়া অঙ্গনকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন পুরোদস্তুর স্পোর্টসম্যান।’
‘আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার এবং ক্রীড়াঙ্গনের সংশ্লিষ্টজন, যাঁদের কাছে জাকারিয়া পিন্টু একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি ছিলেন – তাঁদের সকলের প্রতি আমার সমবেদনা।’