লিটন কুমার দাসকে বাদ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশ পুরুষ দল ঘোষণা করা হয়েছে। গত সাতটি ওয়ানডেতে সিংগেল ডিজিটের রানে আউট হওয়ায় এই বিষয়টি খুব একটা চমক হয়েও আসেনি। আনুষ্ঠানিক দল ঘোষণার আগেই লিটন খবরটা পেয়ে থাকবেন। লিটনকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ফর্মের কথা বলেছিলেন। আর সেদিনই (রোববার, ১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ফর্মের কি এক প্রমাণ দিলেন এই ওপেনার!
হোক-না এটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, হোক-না বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), তারপরও লিটনের ব্যাটিং তাঁর ফর্ম নিয়ে সব প্রশ্ন সস্পূর্ণ উড়িয়ে দিলো। বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি করেছেন, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে যেটি তাঁর প্রথম; তা-ও এসেছে মাত্র ৪৪ বলে। এতে ছিল আটটি চার ও সাতটি ছয়। ১০৪ রানে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন, সানজামুল ক্যাচটা নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত লিটন তাই অপরাজিতই থেকেছেন। শেষ ওভারে শুধু শেষ বলটাই স্ট্রাইক পেয়েছিলেন, সেটিও উড়িয়ে মেরেছেন মাঠের বাইরে।
হাতে ব্যাট ও হেলমেট নিয়ে যখন বেরিয়ে আসছেন, লিটনের নামের পাশে ৫৫ বলে ১২৫। ১০টি চার ও নয়টি ছয়খচিত এই ইনিংস বিপিএল ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলোর তালিকার ওপরের দিকেই থাকবে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লিটনের এই রূপ নতুন নয়। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে করা তাঁর পাঁচ সেঞ্চুরির দু’টিই এই মাঠে। ২০২০ সালের মার্চে জিম্বাবুয়ে সিরিজে অপরাজিত ১২৬ রানের পরে খেলেছেন ১৭৬ রানের আরেকটি ইনিংস, এখনো যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড।
ঢাকা ক্যাপিটালস লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিমের দুই সেঞ্চুরিতে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে এক উইকেটে রেকর্ড ২৫৪ রান করে। দলটি বিপিএল-এর একাদশ আসরের শুরু থেকে টানা ছয়টি পরাজয়ে খাদের কিনায় উপনীত হয়েছিল, অবশেষে নিজেদের সপ্তম ম্যাচে রেকর্ড-গড়া জয়ের দেখা পেলো। এদিন রাজশাহীর বিপক্ষে তাণ্ডব চালিয়ে সেঞ্চুরি করেছেন তানজিদ হাসান তামিমও।
ম্যাচ জিততে হলে দুর্বার রাজশাহীকে রেকর্ড করতে হতো। এমনই রেকর্ড গড়া লক্ষ্য দিয়েছিল পরপর ছয় ম্যাচে পরাজিত ঢাকা ক্যাপিটালস। তবে রাজশাহী ২৫৫ রানের লক্ষ্যটা পার হতে পারেনি; উল্টো বিব্রতকর রেকর্ডের সাক্ষী হয়েছে। কেননা, ঢাকা বিপিএল-এর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৪৯ রানে জিতেছে।
এদিন রাজশাহী রেকর্ড ২৫৫ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং ধসে পড়ে। তাঁরা ৩৪ রান পার না-হতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে; যার চারটি ভাগাভাগি করে নেন আবু জায়েদ রাহী ও মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। পরে অন্য বোলাররাও উইকেট শিকারে শামিল হন। দুই পেসারের মতো দুইটি করে উইকেট পেয়েছেন – মোসাদ্দেক হোসেন ও ফারমানউল্লাহ।
রাজশাহী যেভাবে একের পর এক উইকেট হারিয়েছে, তাতে ১০০ রান করতে পারবে কি-না – সেই শঙ্কা জেগেছিল। শেষ পর্যন্ত ১০৫ রান করতে পেরেছে রায়ান বার্লের কল্যাণে। সাতে নামা বার্ল এক প্রান্ত আগলে রেখে ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন নয়টি চারে। ১১ ব্যাটারের সাত জনই এক অঙ্কের ঘরে বিদায় নেন।
দুর্বার রাজশাহী রানের পাহাড় অতিক্রম করতে নেমে ৯.৫ ওভারে ৬১ রানে সাত উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায়। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে জিম্বাবুয়ান ক্রিকেটার রায়ান ব্রুল উইকেটের এক পাশ আগলে রাখেন। তিনি ৩২ বলে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেছেন।