বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় বুধবার (১২ মার্চ) সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৩১ মিনিটে) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
মরহুমের পুত্র সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর সিঙ্গাপুর থেকে টেলিফোনে গণমাধ্যমকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর জানান, বুধবারই বাবার মরদেহ দেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
বহুজাতিক কোম্পানির চাকরি ছেড়ে চামড়ার ব্যবসায় যুক্ত হওয়া সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ছিলেন চামড়া খাতের সফল ব্যবসায়ী। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে উৎপাদিত চামড়ার জুতার রপ্তানি শুরু। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপেক্স’ রপ্তানির পাশাপাশি দেশের জুতার বাজারেও শীর্ষস্থানে রয়েছে।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বাংলাদেশের উদ্যোক্তা জগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ছিলেন। দেশের চামড়াশিল্পকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ চেম্বার অফ ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)-এর সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী প্রমুখ।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারান। কলকাতাতেই স্কুল ও কলেজের পাট শেষ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর স্নাতকোত্তর করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম (এস এম) হলে থাকতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ১৯৭২ সালে মঞ্জুর ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কোম্পানি গঠন করে কমিশনের ভিত্তিতে চামড়া বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এর চার বছর পরে ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ওরিয়েন্ট ট্যানারি কিনে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপেক্স ট্যানারি। এর ১৪ বছর পরে যাত্রা শুরু করা অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার এখন বাংলাদেশের শীর্ষ জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ১৯৬৬ সালে নিলুফার মঞ্জুরকে বিয়ে করেন। নিলুফার মঞ্জুর স্বাধীনতার দুই বছর পরে নিজেদের বাসায় ইংরেজি মাধ্যমের সানবিমস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিদ্যালয়টি একসময় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। নিলুফার মঞ্জুর ২০২০ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত স্কুলটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
শুধু স্ত্রীর সঙ্গে স্কুল প্রতিষ্ঠা নয়, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ১৯৯৬ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ‘মানুষের জন্য’ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি দেশে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী সংগঠক হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। তিনি আমৃত্যু বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।