সাকরাইন উৎসব বা পৌষসংক্রান্তি পুরনো ঢাকার ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত। সংস্কৃত শব্দ 'সংক্রান্তি' ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। বাংলা ক্যালেন্ডারের নবম মাস পৌষ মাসের শেষ দিনে আয়োজিত হয় যা গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের হিসেবে জানুয়ারি মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে পড়ে। গত ১৪ জানুয়ারি পুরান ঢাকাজুড়ে উদযাপিত হলো এ-সাকরাইন উৎসব। এ-বছর কিছু এলাকায় সাকরাইন পালিত হবে আজও (১৫ জানুয়ারি)।
সাকরাইনকে ঐক্য ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। পৌষ গেলে জমাট বাঁধে শীত। ঘরে ঘরে তখন বানানো হয় সুস্বাদু পিঠা। কথিত আছে, পৌষে মাসের শেষে জামাই যখন তাদের শ্বশুরবাড়ি আসে তখন তাঁদের ধরিয়ে দেওয়া হতো ঘুড়ি ও নাটাই। সেই ঘুড়ি নাটাই ওড়াতেন জামাইরা, আর সেটা ঘটা করে দেখতেন গ্রামবাসী। আজ আর তেমনটা নেই। কিন্তু উৎসবের আমেজটা ঠিকই রয়ে গেছে। এজন্যই ঘুড়ি ওড়ানো পৌষবিদায়ী উৎসবের অংশ হয়ে আছে।
মূলত পুরান ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাতে গতকাল জমজমাট ভাবে উদযাপিত হয়েছে সাকরাইন। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে ছোট-বড় সকলেই মেতে উঠেছিলো এ-উৎসবে। শাখারীবাজারের দোকানগুলো তাদের আসল ব্যবসা ছেড়ে নেমেছিলো ঘুড়ির ব্যবসায়। গলির দুদিকে শুধু ঘুড়ি আর নাটাই এর দোকান দেখা গিয়েছে। সকাল থেকেই আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ি উড়েছে এলাকাগুলোতে। মানুষজন মূলত বিভিন্ন বাসার ছাদে উড়িয়েছে ঘুড়ি। চলেছে ভোঁ কাট্টা'র (ঘুড়ি কাটাকাটি) প্রতিযােগিতা। তবে উৎসবের আগের দিনগুলো থেকেই ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দেয়ার প্রচলন অনেকটা উঠেই গিয়েছে। ভারত থেকে আসছে মাঞ্জা দেয়া ধারালো সুতো।
রাত নামলে আতশবাজির আলোয় উজ্জীবিত হয়েছিলো এলাকাগুলো। আগুন মুখে নিয়ে খেলা দেখিয়েছে অনেকেই। সন্ধ্যার পর আকাশে উড়েছে রঙবেরঙের ফানুশ। ঘরে ঘরে ছিল শীতের পিঠাপুলির আয়োজন। ওদিকে আজ সাকরাইন জমজমাট হবে সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগ ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে।
উল্লেখ্য শুধু ঢাকাতেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পৌষসংক্রান্তির এই উৎসব পালনের রীতি চালু আছে। নেপালে একে বলে মাঘি, থাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পি মা লাও, মিয়ানমারে থিং ইয়ান, কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান এবং ভারতে মকরসংক্রান্তি।