loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

আবার কবে একজন মুশফিক হবে?


আবার কবে একজন মুশফিক হবে?

এম এম মঞ্জুর মোর্শেদ

সাদা বলটা মিড অনে ঠেলে দিয়েই হুঙ্কার, এটা তাঁর ব্যক্তিগত উদযাপন। দেশ কিন্তু তাঁর আগেই উদযাপন শুরু করে দিয়েছে। এমন অবিস্মরণীয় জয়ে কি খামোশ থাকা যায়!!!

মাষ্টার ব্লাস্টার হাতেগোনাই হয়। মাস্টার ক্লাসও খুব বেশি হয় না। এই দেশে মাষ্টার ক্লাসের আকালের হাহাকারে একমাত্র তিনিইতো বারবার নিজের জাত চেনাচ্ছেন।

সেই ২০০৬ থেকেই ‘আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেড’-এর হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-এর সাথে কাজ করার সুবাদে মোটামুটি সবাইকেই ভালোভাবে চিনি। বিদেশি কোচদেরতো ইন্টারনেটের জন্য আমার সহায়তা লাগতোই, সেই সুবাদে আমার সব কোচদের সাথে প্রায় ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। হাতুরাসিংহেও এর মধ্যে একজন।

২০০৭-এর শেষ দিকে আশরাফুল তখন খ্যাতির মধ্যে গগনে। বিসিবির হাই পারফরম্যান্স কোচ ছিলেন শন উইলিয়ামস। একবার তাঁর বাসায় কাজে গেলে কোন এক আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, তোমাদের এক নতুন স্টার রেডি হচ্ছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, আশরাফুল, হাবিবুল-শাসিত ক্রিকেটে নতুন তারকা আবার কে হবে?

‘‘হিজ নেইম ইজ মুশফিকুর রহিম’’ হি ইজ ইন বিকেএসপি নাও। সেই প্রথম তাঁর নাম শোনা। জানিনা কেন আমার মনের মধ্যে শন উলিয়ামসের কথাটা গেঁথে গিয়েছিলো। এর পর যখন ইংল্যান্ডে প্র্যাকটিস ম্যাচে ১১৬ রান করে ইংলিশ মিডিয়া মাতালেন, তখন বুঝলাম শনের জহুরির চোখ ভুল করেনি।

ইন্টারন্যাশনাল অভিষেকটা ততটা ভালো হলো না ঘরের মাঠে। হবেই বা কীভাবে, মুরালিধরনকে বোঝার সাধ্য দুনিয়ার ৯৯.৯৯% উইলবাজেরই নেই!

আমি ক্রিকেট খেলাটা কিছুটা বুঝি বলেই বহু বছর বিসিবির প্রেসবক্সে কাজ করতে পেরেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, খাঁটি ব্যাটসম্যান বলতে যা বোঝায়, এই দেশের মাটিতে তা একমাত্র মুশফিকের মধ্যেই পাওয়া যাবে। টেকনিক্যালি, ট্যাক্টিক্যালি, স্ট্রাটেজিক্যালি ব্যাটিং-শিল্প বলতে মুশফিকই। সাকিব অসাধারণ স্কোরিং ব্যাটসম্যান, অসাধারণ ইম্প্রোভাইসার, তামিম আগ্রাসী, কিন্তু মুশফিক হাল ধরা, নোঙ্গরে ভেড়ানো জাত ফাইটার। তাঁর কাছাকাছি মানের আরেকজন হলেন মাহমুদুল্লাহ, টেকনিক্যালি দি সেকেন্ড বেস্ট খাঁটি ব্যাট্সম্যান।

ফিরে আসি এপিক ম্যাচের কথায়। ২১৪ রান করার পরে এশিয়ার কোন দলইতো চেজ করতে পারে নাই, তার মধ্যে আবার টি ২০’র জনক ভারত আর এককালের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান শামিল। ভগ্নদশার টিম বাংলাদেশই-বা কি করবে! যারা আগের ম্যাচে ১৪0 করতেই ধুকছিলো!

কিন্তু যেদিন আঙ্গুলগুলাে একসাথে হয়ে যায়, সেদিন কি আর আঙ্গুল থাকে? সেদিন সেটা মুঠাে হয়ে যায়। আমিতো সব হারানোর বেদনা নিয়ে খেলা দেখতে বসেছিলাম, কিন্তু যাঁরা ব্যাট হাতে নেমেছিলো তাঁরা সবাই দেয়ালে পিঠ ঠেকার অনুভূতি নিয়ে নেমেছিলো। দুনিয়া দেখেছে কোনঠাসা বাঘ কতটা আগ্রাসী আর ভয়ঙ্কর হতে পারে!

লিটন দাসের স্ট্রাইক রেইট আর ৫টা ছক্কা, সঙ্গে তামিমের কুল কোম্পানি উড়াল সূচনা দিয়েছিল, তখনো কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি কি হতে যাচ্ছে। এমন বহু উড়ন্ত সূচনাইতো চোখের জলে ভেসে গেছে। সৌম্য সরকার এসে ছন্দটা শুধু ধরেই রাখলেন না, আগ বাড়িয়েও নিয়ে গেলেন। মারের খেলায় মারতেই হবে। মারতে গেলেন শ্রীলঙ্কার এই সময়ের সেরা বোলার থিসারাকে। বল একটু বেশি শরীরের দিকে উঠে আসতে ব্যাটের উপরের দিকে লেগে তাঁকে প্যাভিলিয়নে নিয়ে গেলো আর মাঠে নিয়ে এলো এক ঘুমন্ত পকেট-সাইজ মনস্টারকে। আগের টপ ব্যাটসম্যানরা ভালো একটা জায়গায় দলকে রেখে যাওয়াতে চারগুন বেশি চাপ নিয়ে ক্রিজে আসলেন মুশফিক।

মাঠে ঢুকে কি চিন্তা করছিলেন - এটা গবেষণার বিষয় হতে পারে, তবে প্রথম যে-শটটা খেললেন সেটা ক্রিকেটের অন্যতম কঠিন শট, পয়েন্টের উপর দিয়ে ছয়! তাও আবার বলটাকে চেজ করে!! তখনো কেউ ভাবতেও পারেননি কতগুলাে বল উড়বে আর শ্রীলঙ্কা কিভাবে পুড়বে। মাহমুদুল্লাহর সঙ্গ তিনি সব সময়ই উপভোগ করেন। আর সেদিন যেন তা একটু বেশিই দরকার ছিল। মাহমুদুল্লাহ মোটামুটি ভালো সঙ্গই দিয়েছেন।

সাব্বিরের উপর এ-জাতি ভরসা করে, কিন্তু এ-দিন তিনি পারলেন না। বলা ভালো এক দুরূহ রান নিতে গিয়ে পারা হলো না। কিন্তু মিস্টার ডিপেন্ডেবল, মিস্টার ফিনিশার ম্যাচকে তখন হাতের মুঠোয় প্রায় পুরেই ফেলেছেন। কিন্তু ৬ বলে ৯ তো এক আশঙ্কার জায়গা-ই বটে। দুই বছর আগে ভারতকে এইভাবে পেয়েও হারার যন্ত্রণায় পুড়তে হয়েছিলো। ততক্ষনে পায়ে ব্যাথা হচ্ছিল, প্রথম বলে দুই রান নিলেন, বুঝলেন সুযোগ কাজে লাগাতে হবে...। লাগালেন, আর এশিয়ান ক্রিকেটের টি ২০ চেজের ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন!

সব হারানোর বেদনা যেন এক ম্যাচেই উসুল করে নিলেন। নিজের ৩৮ দিনের সন্তানকে জয় উৎসর্গ করলেন। ওই উদযাপনে কাকে হুঙ্কার দিচ্ছিলেন জানি না তবে আমরা ওই হুঙ্কারের সাথে একাত্ব। তিনি বহু ইনিংস খেলেছেন, আরো খেলবেন, কিন্তু জবাব দেওয়ার মতো, এমন মাস্টার ক্লাস ইনিংস কয়টা হবে? আমরা তো চাই প্রতিটা ইনিংসই এমন হোক...

* মতামত লেখকের নিজস্ব

Loading...